ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘সেমিতে ওঠার সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের’

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ২৩ জুন ২০১৯

 ‘সেমিতে ওঠার সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের’

রুমেল খান ॥ মেয়েটি তখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। স্কুলে খেলে হ্যান্ডবল আর ভলিবল। একদিনের ঘটনা। স্কুলের সামনে মেয়েটিকে ডাক দিলেন সালাউদ্দিন স্যার। তার কাছে সুর্দশনা মেয়েটি জানতে পারলো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড অচিরেই মেয়েদের ক্রিকেট দল গঠন করবে। স্যার জানতে চাইলেন, মেয়েটির খেলার ইচ্ছে আছে কি না। আছে মানে, ষোলো আনার ওপরে আরও দুই আনা বেশি ইচ্ছে মেয়েটির। লুফে নিল প্রস্তাবটি। সেদিনের এই সিদ্ধান্তটিই জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল তার, যার নাম জাহানারা আলম, যিনি আজ বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেটের অন্যতম তারকা এক ক্রিকেটার। ১৯৯৩ সালের ১ এপ্রিল খুলনায় জন্ম নেয়া মিডিয়াম ফাস্ট বোলার এবং ডানহাতি এই উইলোবাজ বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়কের দায়িত্বও পালন করেছেন। জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে প্রথমবারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়া জাহানারা বলেন, ‘এবারের বিশ্বকাপে টুকটাক খেলা দেখেছি। সব খেলা পুরোপুরি না দেখলেও সবসময়ই খোঁজ-খবর রাখছি।’ নারী আইপিএল খেলতে যাওয়া প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার জাহানারা এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা মাত্র এক ম্যাচে জিতেছি। হেরেছি তিনটিতে। পয়েন্ট টেবিলে দশ দলের মধ্যে আছি ছয় নম্বরে। তারপরও বলব সেমিতে ওঠার সম্ভাবনা এখনও হারিয়ে যায়নি বাংলাদেশের। আমি মনে করি বিশ্বকাপে এটাই বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা দল।’ দলের পারফর্মেন্স নিয়ে ‘বেস্ট বল অব দ্য উইমেন্স আইপিএল’-এর মালকিন জাহানারার বিশ্লেষণ, ‘ব্যাটিংয়ে সৌম্য ওপেনিংয়ে নেমে ভালই সহায়তা করছেন তার পার্টনারকে। তামিম একটি ফিফটি পেলেও তার কাছে বড় ইনিংস দেখার প্রত্যাশা করছে সবাই। ব্যাটিং নিয়ে তেমন কোন সমস্যা না থাকলেও আমাদের বোলিং কিছুটা পিছিয়ে আছে। এগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে এবং উন্নতি ঘটাতে হবে।’ ২০১৬ সালে ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে ছোট পর্দায় পা রাখা এবং একাধিক বিজ্ঞাপন চিত্রে কাজ করা জাহানারা আরও যোগ করেন, ‘তবে বৃষ্টি বা অন্য শীর্ষ দলগুলোর রেজাল্ট নিয়ে যতই সমীকরণ থাকুক, আমি কিন্তু দৃঢ় আশাবাদী শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ দল শেষ চারে নাম লেখাবেই।’ বাংলাদেশ দলের সেরা পারফর্মার নিয়ে ২০১৮ সালে বিশ্ব একাদশে নাম লেখানো জাহানারার মূল্যায়ন ও আশাবাদ, ‘সাকিব টানা ৪-৫ ম্যাচ ধরে অসাধারণভাবে ব্যাটে-বলে টানা ধারাবাহিক পারফর্ম করছেন। বাকি ম্যাচগুলোতেও যদি এটা তিনি অব্যাহত রাখতে পারেন তাহলে তিনিই যে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটি পাবেন এতে কোন সন্দেহ নেই। তাছাড়া তিনি যে মানের ক্রিকেটার তাতে তিনি এই পুরস্কার পাবার যোগ্য দাবিদার।’ ২০০৮ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হবার কারণে এসএসসি পরীক্ষা মিস করা জাহানারা আরও যোগ করেন, ‘এখানে একটা কথা না বলে পারছি না। বিশ্বকাপের আগে সবাই ভারতের কন্ডিশনে আইপিএল খেলে এসেছে। সাকিবও খেলেছেন। এখন বিশ্বকাপের খেলা হচ্ছে ইংল্যান্ডে। দুটি দুই রকম কন্ডিশন। অনেকেই ইংলিশ কন্ডিশনে গিয়ে মানিয়ে নিতে পারেন না এবং ভাল পারফর্ম করতে পারেন না। বিশেষ করে উপমহাদেশের ক্রিকেটাররা। এই বিশ্বকাপেও এমনটাই দেখা গেছে। কিন্তু আমাদের সাকিব ব্যতিক্রম। তিনি নতুন পরিবেশে, নতুন মাঠে চমৎকার খেলছেন এবং অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়েই আছেন।’ এবারের সম্ভাব্য সেমিফাইনালিস্ট দলগুলোর নাম জানতে চাইলে ওয়ানডেতে দেশের চতুর্থ উইকেটধারী (৩০) ও দ্বিতীয় সর্বাধিক ম্যাচ খেলা (৩৫) জাহানারা বলেন, ‘সেমি নয়, আমি এবারের বিশ্বকাপের সম্ভাব্য ফাইনালিস্ট তিনটি দলের নাম বলতে পারি। এরা হলো অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত। আর চতুর্থ সেমিফাইনালিস্ট দল হিসেবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে দুটি দলের মধ্যে একটি যাবে।’ গত ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ছাড়া আর অন্য কোন দলকে সমর্থন করেননি বলে জানান ২টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়ে একটিতেও না হারা (১ জয়, অন্যটি বাতিল) জাহানারা। বৃষ্টির কারণে এবারের বিশ্বকাপের ৪টি খেলা পরিত্যক্ত হয়েছে। এটা রেকর্ড। এতে করে কি আসরের জৌলুস-আকর্ষণ ম্লান হয়নি? টি২০তে দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেটধারী (৩৯), তৃতীয় সর্বোচ্চ ক্যাচ লোফা (১২) ও তৃতীয় সর্বোচ্চ মাচ খেলা (৫৬) জাহানারার ভাষ্য, ‘বৃষ্টির ওপর যেহেতু কারোর হাত নেই, কাজেই এ নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না। তবে আমি বৃষ্টি নিয়ে ঠিকই উদ্বিগ্ন। তবে সেটা এবারের বিশ্বকাপের বৃষ্টি নিয়ে নয়। আগামী ২০২০ সালের টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপের বৃষ্টি নিয়ে, যেটার খেলাও হবে এই ইংল্যান্ডেই। আমরা বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দল যেন কোন ম্যাচে বৃষ্টির কারণে না ভুগি সে নিয়েই যত দুর্ভাবনা।’ ৪৬ দিনে এবারের বিশ্বকাপের ৪৮ ম্যাচ প্রসঙ্গে টি২০তে দেশের হয়ে এক ম্যাচে দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগারের অধিকারী (৫/২৮, বিপক্ষ আয়ারল্যান্ড, ডাবলিন, ২৮-৬-২০১৮) জাহানারার অভিমত, ‘এ নিয়ে কিছু বলার নেই। খেলার সময়সীমা কতদিন হবে, এটা আইসিসির ব্যাপার। তবে খেলোয়াড়দের সুস্থতা এবং বিশ্রাম এই বিষয়গুলো ঠিকঠাক থাকে কি না এটাই হচ্ছে আসল ব্যাপার।’ ওয়ানডে ক্রিকেটে বোলারদের চেয়ে ব্যাটসম্যানরাই বেশি সুবিধা পেয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গে অবশ্য দ্বিমত পোষণ করেন জাহানারা, ‘ক্রিকেটটা হচ্ছে বিনোদনের খেলা। ৬-৭ ঘণ্টা ধরে ওয়ানডে, ৫ দিন ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলা হয়। মাঠে দর্শকরা আসেন চার-ছক্কার মার দেখতে, রানবন্যা দেখতে। বোলারদের দাপট কি দেখে তারা আনন্দ পাবেন? তবে ব্যাটসম্যান যতই দাপট দেখাক, একজন বোলার কিন্তু তাকে আউট করতে যথেষ্ট সময় পায়। এক ওভারে ৬টা বল পায়। তখন তাকে প্যাভিলিয়নে পাঠাতে তার তো এক বলই যথেষ্ট। কাজেই বর্তমান নিয়মই ঠিক আছে বলে মনে করি।’
×