ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কারাবন্দীরা খেলেন ভুনা খিচুড়ি, হালুয়া রুটি ও সবজি রুটি

প্রকাশিত: ০৯:৪৯, ২২ জুন ২০১৯

 কারাবন্দীরা খেলেন ভুনা খিচুড়ি, হালুয়া রুটি ও সবজি রুটি

মশিউর রহমান খান ॥ শত শত বছরের রেওয়াজ ভেঙ্গে সকালের নাস্তায় ভুনা খিচুড়ি ও রুটি হালুয়া পেয়ে মহাখুশি সারাদেশের ৬৮ কারাগারে আটক ৮০ হাজারের অধিক কারাবন্দী হাজতি কয়েদি নারী-পুরুষ। গুড় আর শুকনো রুটির পরিবর্তে সকালের নাস্তায় বন্দীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া অনুশাসনের মাধ্যমে এই পরিবর্তনে খুশি সারাদেশের আটক কারাবন্দীরা। সকালের নাস্তার জন্য পর্যাপ্ত খাবার পেয়ে ও স্বাদের ভিন্নতা আনায় অনেকেই খুশি। আটক বন্দীদের কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন সারাবছরই এ খাবার দেয়া হবে তো? মূলত জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় ঘোষণার বাইরে বা কোন বিশেষ দিবস না হওয়া সত্ত্বেও সকালের নাস্তায় ধারণাতীত রুটি সবজি ভুনা বা খিচুড়ি পেয়েই কারাবন্দীরা কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে এসব প্রশ্ন করছেন। তবে এখন থেকে সারাবছরই এই নাস্তা বহাল থাকবে কারাবন্দীদের আশ্বস্ত করছেন। অপরদিকে কারাবন্দীর সুবিধার্থে নিজ অর্থে প্রিজন্স ক্যাশ (পিসি) থেকে নাস্তা বা প্রয়োজনীয় খাবার ক্রয়ের জন্য কারা কর্তৃপক্ষের তৈরি কারাভ্যন্তরে ও কারাগারের বাইরে স্থাপতি ক্যান্টিনেও বিক্রি তুলনামূলকভাবে কমে গেছে বলে কারাসূত্রে জানা গেছে। কারাভ্যন্তরে আটক বন্দীরা সকালের নাস্তা হিসেবে চাহিদা অনুযায়ী খাবার পাওয়ায় ক্যান্টিন থেকে খাবার ক্রয়ে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবির চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, আজ এ কারাগারে আটক প্রায় ১০ হাজার ৫শ ৪৬ জন কারাবন্দীকে সকালের নাস্তা হিসেবে সবজি রুটি দেয়া হয়েছে। আগে অনেক বন্দী যেখানে শুকনা গুড় আর রুটি খেতে তেমন কোন কোন আগ্রহই দেখাতেন না। বর্তমানে সকালের নাস্তায় নতুন মেনু পেয়ে এমন বন্দীরাও লাইন ধরে সকালের নাস্তা। বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই সকালের খাবার খাচ্ছেন বন্দীরা। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার কামাল হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, শুক্রবারে চট্টগ্রাম কারাগারে ৮ হাজার ৬৩১ জন বন্দী আটক রয়েছেন। আমরা সকালের নাস্তায় যুগ যুগ ধরে চলে আসা শুকনা রুটি অল্প পরিমাণ গুড় না দিয়ে আগের চেয়ে বেশি পরিমাণ আটার রুটি ও ১শ ৫০ গ্রাম সবজি দিয়েছি। এ খাবার খেয়ে খুশিতে বেশিরভাগ বন্দীই সকালের নাস্তায় সবসময়ই সবজি রুটিই চায়। যদিও স্বাদের ভিন্নতা আনতে তা পরিবর্তনযোগ্য ও নির্দিষ্ট করে রুটি সবজি, রুটি হালুয়া ও ভুনা খিচুড়ি হাজতি ও কয়েদি অনুযায়ী নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার খেয়ে বন্দীরা সকালের নাস্তার জন্য কারাভ্যন্তরের কারা ক্যান্টিনে যেতে তেমন আগ্রহী হচ্ছেন না। ফলে কারা ক্যান্টিনে নাস্তার পণ্য বিক্রি আগের যে কোন দিনের চেয়ে কমেছে। মূলত বন্দীরা নাস্তাসহ তিনবেলা খাবার ও কারা ব্যবস্থাপনায় পুরোপুরি সন্তুষ্ট। সূত্র জানায়, বন্দীপ্রতি বাধ্যতামূলকভাবে মাত্র একটি রুটি ও চাহিদার তুলনায় অতি কম (১৪ গ্রাম) গুড় খেয়ে সকল বন্দীই সকালের নাস্তা হিসেবে খেতে হতো। এ খাবার না খেলে দুপুর পর্যন্ত না খেয়েই শুধু পানি খেয়েই কাটাতে হতো। শুকনো খাবার হিসেবে গলায় এ খাবার অনেকের ক্ষেত্রে আটকে যেত। ফলে মাছে ভাতের বাঙালী হিসেবে তিন বেলা ভাত খেয়ে অভ্যস্থ হওয়ায় রুটি খেতে পারতেন না। এমনকি প্রতিবাদ করলেও কারাবিধিতে সকালের নাস্তা হিসেবে হাসপাতালে ভর্তি রোগী ছাড়া সকল বন্দীকেই এই রুটি গুড়ের ওপরই নির্ভর করতে হতো। তাই অনেক বন্দী কারা ক্যান্টিন থেকে বাধ্য হয়ে খাবার কিনে সকালের খাবার খেতেন। এর বাইরে কোন বন্দীর আত্মীয় স্বজন দেখা করতে আসলে বাইরের ক্যান্টিন থেকে দেয়া শুকনো খাবার খেতেন। এখন থেকে বন্দীরা পর্যাপ্ত পরিমাণ পরিবর্তনযোগ্য সুস্বাদু নাস্তা খেতে পারবেন। কারা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সকালের নাস্তার নতুন। কারাবন্দীরা এখন সপ্তাহে দুদিন ভুনা খিচুড়ি, ৩ দিন সবজি-রুটি, বাকি ১ দিন হালুয়া-রুটি পাবেন। এর আগে কারাগার চালু হওয়ার পর অর্থাৎ ব্রিটিশ আমল থেকে কারাগারে বন্দীরা কারাবিধি অনুযায়ী সকালের নাস্তায় পেতেন ১৪ দশমিক ৫৮ গ্রাম গুড় এবং ১১৬ দশমিক ৬ গ্রাম আটা (সমপরিমাণ রুটি)। একই পরিমাণ গুড়ের সঙ্গে একজন হাজতি পেতেন ৮৭ দশমিক ৬৮ গ্রাম আটা (সমপরিমাণ রুটি)। বর্তমানে এর বিপরীতে খিচুড়ি যেদিন পাবেন সেদিন ১শ ২০ গ্রাম চাল, ৫০ গ্রাম ডাল ও প্রয়োজনীয় মসলার মিশ্রণে তৈরি খিচুড়ি পাবেন। এছাড়া রুটি যেদিন পাবেন সেদিন পূর্বের নির্ধারিত আটার পরিমাণ বাড়িয়ে কয়েদি বন্দীর জন্য ১শ ২০ গ্রাম আটার রুটি ও ১৫০ গ্রাম সবজি অপরদিকে হাজতি বন্দীর জন্য ৯০ গ্রাম আটার রুটি ও সবার জন্য নির্ধারিত ১শ ২০ গ্রাম সবজি দেয়া হবে। এছাড়া হালুয়া যেদিন পাবেন সেদিন নির্ধারিত পরিমাণ আটার রুটি ও ৫০ গ্রাম সুজির মিষ্টি হালুয়া দেয়া হবে নাস্তায়। মোটকথা একজন সাধারণ বন্দী সকালের নাস্তায় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিয়মানুযায়ী পরিমাণমতো খাবার পাবেন। কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোঃ শাহজাহান জনকণ্ঠকে বলেন, প্রথম দিন ভুনা খিচুড়ি ও দ্বিতীয় দিন সকালের নাস্তায় নারী কারাবন্দীদের আমরা রুটি আর হালুয়া প্রদান করেছি। সকল নারী বন্দীই অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে রুটি হালুয়া খেয়ে তৃপ্ত। সবসময় আমরা একজন বন্দীর জন্য ৫০ গ্রাম সুজির মিষ্টি হালুয়া আর রুটি দিয়েছি। যা একজন বন্দীর জন্য যথেষ্ট। রুটিন অনুযায়ী হালুয়া রুটি বা সবজি রুটিসহ মেনু পরিবর্তন করা হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, কারাবন্দীর জন্য ব্রিটিশ আমলের দেয়া সকালের নাস্তায় শুকনা রুটি আর গুড়ের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুশাসনের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আমরা স্বাদের ভিন্নতা এনেছি। যা কারাবন্দীরা পেয়ে অত্যন্ত খুশি। অতি আশ্চর্যের বিষয় হলো, আগের নাস্তা নিয়ে প্রচুর আপত্তি সত্ত্বেও এ পর্যন্ত কোন বন্দীই সকালের নাস্তায় পরিবর্তন আনতে কোন কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে লিখিত বা মৌখিকভাবে আবেদন পর্যন্ত করেনি। পরবর্তীতে কারা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে সকালের নাস্তায় ভিন্নতা আনতে ও আমরা নাস্তার পরিমাণ বাড়াতে ও সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে রুটি সবজি, ভুনা খিচুড়ি, রুটি হালুয়া করা যায় কি না তার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাই। মন্ত্রণালয় থেকে বাস্তবতা ও চাহিদার কথা চিন্তা করে অনেক যাচাই-বাছাই করে। পরবর্তীতে প্রধামনমন্ত্রীর অনুশাসনের মাধ্যমে শত শত বছরের প্রথা ভেঙ্গে সকল বন্দীর জন্যই সকালের নাস্তার ম্যানু পরিবর্তন করা হয়েছে। যা পেয়ে সকল বন্দীই মহাখুশি ও পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার খেয়ে তারা তৃপ্ত। মূলত বন্দীর কল্যাণে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষ কাজ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
×