ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকিতে ১১ গ্রামের মানুষ

দশমিনায় বাঁধে ধস

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ২২ জুন ২০১৯

দশমিনায় বাঁধে ধস

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার রণগোপালদী ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ আগে থেকেই নদী ভাঙ্গনের কবলে ছিল। এতে বাঁধের ওপর ‘উপজেলা ও ইউনিয়ন সংযোগ’ সড়কও ধীরে ধীরে ভেঙ্গে নদীতে পড়ছিল। গত ৩ মে রাতে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে জোয়ারের প্রভাবে তেঁতুলিয়া শাখা নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে তা আছড়ে পড়ে বাঁধের ওপর। ফলে বাঁধটি আরও ভেঙ্গে এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে কোন মুহূর্তে পুরো বাঁধ ও সংযোগ সড়ক নদী গর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। এতে সড়ক যোগাযোগে বিপাকে পড়বে সড়কের দুই পাশের অন্তত ১১ গ্রামের মানুষ। সরেজমিনে এলাকা ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় সূত্র জানায়, দশমিনা উপজেলার রণগোপালদী ও আলীপুরা ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া শাখা নদীর পাড়ের কৃষকের ফসল রক্ষাসহ দুর্যোগ ও প্লাবন থেকে মানুষকে রক্ষায় নব্বই দশকে পাউবো এ বাঁধ নির্মাণ করেছিল। এরপর থেকে বাঁধটি রক্ষণাবেক্ষণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। এলজিইডি, দশমিনা উপজেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে এলজিইডি ‘দক্ষিণ-পশ্চিম প্রকল্প’-এর আওতায় দশমিনা উপজেলা সদর থেকে আলীপুরা ইউনিয়ন হয়ে রণগোপালদী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় পর্যন্ত ৯ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার বাঁধের ওপর বিটুমিন কার্পেটিং দ্বারা ‘উপজেলা ও ইউনিয়ন’ সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে। এতে ব্যয় হয়েছিল ৮ কোটি টাকা। গত বছর থেকে মধ্য রণগোপালদীর বুড়িকান্দা এলাকায় বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দেয়। পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে নদীর পানির চাপে ভাঙ্গনের তীব্রতা বাড়ে। বর্তমানে নদী ভাঙ্গনে বাঁধের ৭০ মিটারেরও বেশি ধসে গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, তেঁতুলিয়া শাখা নদীর পানির চাপে উপজেলার বুড়িকান্দা এলাকার অনেকটা জুড়ে বাঁধ ভেঙ্গে গেছে এবং বাঁধের ওপর কার্পেটিং সড়কটিও চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এরই মধ্যে সড়কের কয়েক ফুট নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সড়কের কোথাও কোথাও প্রশস্থতা একেবারেই কমে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এ সড়কের উত্তর দিকে ইউনিয়নের রণগোপালদী, উত্তর রণগোপালদী, খলিশাখালী, গোলবুনিয়া, গুলি ও যৌতা এ ছয়টি গ্রাম এবং দক্ষিণ দিকে রয়েছে রণগোপালদী, রণগোপালদী বাজার, আউলিয়াপুর, পাতারচর ও চর ঘূর্ণি এ পাঁচটি গ্রাম। এছাড়াও দক্ষিণ দিকে রয়েছে রণগোপালদী ইউপি কার্যালয়। বাঁধটির ঝুঁকিপূর্ণ অংশ সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেলে দুই পাশের অন্তত ১১টি গ্রাম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় এলাকার লোকজন খুব সাবধানতায় বাঁধের ওপর দিয়ে চলাচল করছে। ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বুড়িকান্দা এলাকার বাসিন্দা মোঃ কদম আলী জানান, গত বছর নদীর পানি বেড়ে গেলে জোয়ারের সময় প্রবল বেগে বাঁধের ওপর বাধাগ্রস্ত হয়। এরপরই বাঁধে ভাঙ্গন শুরু হয়। পরবর্তীতে অমাবস্যা-পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের জলোচ্ছ্বাসে বাঁধের ভাঙ্গন আরও বাড়ে। ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে জোয়ারের পানির চাপে এ মুহূর্তে বাঁধ ভেঙ্গে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আকস্মিকভাবে বাঁধ ভেঙ্গে গেলে জোয়ারের পানিতে ফসলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে তাদের। এলাকার ইউপি মেম্বার মনির হোসেন বলেন, যেভাবে নদী গ্রাস করে নিচ্ছে, তাতে সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এছাড়া তাদের দক্ষিণে রয়েছে উলানিয়া ও গলাচিপা কলেজ, রয়েছে হাইস্কুল ও প্রাথমিক বিদ্যালয়। বড় হাটবাজারও দক্ষিণ পাড়ে। এলাকার শিক্ষার্থীরা এ সড়ক পথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে। এলাকার মানুষ হাটবাজারেও এ পথ ব্যবহার করে। কিন্তু বাঁধ ধসে পড়লে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়বে এলাকার মানুষ। রণগোপালদী ইউপি চেয়ারম্যান এটিএম আসাদুল হক জানান, বাঁধটি আগে থেকে ভাঙ্গনের মুখে ছিল। ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে বাঁধ আরও ভেঙ্গে যায়। এতে বাঁধের ওপরের সড়কও বিলীন হচ্ছে। অথচ এ সড়কই উপজেলার আলীপুরা ইউনিয়ন হয়ে দশমিনা উপজেলা সদরে যাতায়াতে সহজ পথ। বঁঁধ ভেঙ্গে গেলে সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এছাড়াও দক্ষিণ পাড়ের বাসিন্দাদের উপজেলা সদরে যেতে অন্তত তিন কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হবে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়বে ইউনিয়নবাসী। নদী পাড়ের গ্রামগুলোতে ফসল আবাদও বাঁধাগ্রস্ত হবে। এ বিষয়ে এলজিইডির দশমিনা উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এলজিইডি থেকে সড়ক মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, বাঁধটি এলজিইডি রক্ষণাবেক্ষণ করছে। তারপরও যেহেতু বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে, এ কারণে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ প্রকল্পের আওতায় এটি নেয়া হচ্ছে। অনুমোদন পেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কাজ শুরু করা হবে। কুড়িগ্রাম স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে শতাধিক একর আবাদি জমি বিলীন হওয়ার পাশাপাশি হুমকিতে রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি, হাট-বাজার। ভাঙ্গন রোধ না করলে যে কোন মুহূর্তে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় স্থানীয়রা। ভাঙ্গন রোধে প্রকল্প নেয়ার দাবি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের। উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়ন পড়েছে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে। বর্ষা মৌসুমে পানি বৃদ্ধি এবং কমার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয় তীব্র ভাঙ্গন। গত এক সপ্তাহে নদের ভাঙ্গনে আবাদি জমি বিলিন হয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষক। অব্যাহত ভাঙ্গনের ফলে অস্তিত্ব বিলিন হওয়ার আশঙ্কায় হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, ওয়াবদা বাঁধসহ শত-শত বাড়িঘর। বিগত বছরে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে ভিটেমাটি হারিয়ে নিস্ব হয়েছে দুই শতাধিক পরিবার। জমি-জমা হারিয়ে অন্যের জমি প্রতি শতক বছরে ৫শ’ থেকে দুই হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে কোন রকমে মাথা গোজার ঠাঁই করলেও ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে সেটিও এখন হুমকিতে। এতে বিপাকে পড়েছে নদের তীরবর্তী মানুষ। হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান ব্রহ্মপুত্র নদ যেভাবে ভাঙ্গছে তাতে হাতিয়া ইউনিয়নের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার সম্মুখীন। সরকারের কাছে দাবি করেন দ্রুত ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নেয়ার।
×