ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চোট আর ৩৫০ রানের ফাঁদে বাংলাদেশ!

প্রকাশিত: ১০:১৩, ৩০ মে ২০১৯

 চোট আর ৩৫০ রানের ফাঁদে বাংলাদেশ!

মিথুন আশরাফ ॥ ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলসে আজ শুরু হবে দ্বাদশ ক্রিকেট বিশ্বকাপ। এ বিশ্বকাপের চটকদার স্লোগান হতে পারে ‘৩৫০’। শক্তিশালী দলগুলো সুযোগ পেলেই নাকি ‘৩৫০’ রান স্কোরবোর্ডে অনায়াসেই তুলে ফেলবে! বাংলাদেশ কী পারবে তা করতে? ভারতের বিপক্ষে ৩৬০ রান তাড়া করতে গিয়ে ২৬৪ রানে গুটিয়ে গিয়ে ৯৫ রানে হারা প্রস্তুতি ম্যাচ থেকে বোঝা যাচ্ছে পথ অনেক কঠিন। লেগ স্পিনতো বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের সামনে বিষ হয়ে ধরা দিল। এই ‘৩৫০’ রানের ফাঁদতো শুরু থেকেই আছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে চোট। বিশ্বকাপে দলের একাধিক ক্রিকেটারের চোট বাংলাদেশকে বিপদে ফেলবে। আর তাতে করে বিশ্বকাপে চোট আর ৩৫০ রানের ফাঁদে বিপত্তিতে পড়বে বাংলাদেশ। এমনই মনে করা হচ্ছে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ম্যাচ ২ জুন। প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মূল মিশন শুরু হতে আর ৩ দিন বাকি। কিন্তু এর আগে দল যেন চোট জর্জরিত হয়ে পড়েছে। মাশরাফি বিন মর্তুজার পায়ে ব্যথা। দুই পায়ের হ্যামস্ট্রিয়ে টান পড়েছে। মুস্তাফিজুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও চোটে পড়েছেন। ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে কাফ মাসলে টান লাগে মুস্তাফিজের। একই ম্যাচে পিঠের ব্যথায় মাঠ ছাড়েন সাইফউদ্দিন। তামিম ইকবালেরতো উরুর ওপরের দিকে টান লেগেছে। তাতে ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারেননি। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদতো কাঁধের চোটের কারণে এখনও বোলিংই করতে পারেননি। সাকিব পিঠের পেশির চোট থেকে মাত্রই মুক্ত হয়েছেন। রুবেল হোসেনও ছিলেন চোটে। সেরে উঠেছেন। বিশ্বকাপ দলে আছেন ১৫ ক্রিকেটার। এর মধ্যে দলের সেরা ক্রিকেটাররাই শতভাগ ফিট নন। ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলসে খেলা। পেসারদের দায়িত্ব অনেক বেশি। কিন্তু দলের চার মূল পেসার মাশরাফি, মুস্তাফিজ, সাইফউদ্দিন ও রুবেল শতভাগ ফিট নন। অন্য সময় হলে এক সপ্তাহ অন্তত বিশ্রাম পেতেন এ পেসাররা। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরু হতে হাতে সময় না থাকায় কোন উপায় নেই। হাল্কা চোট নিয়ে হলেও খেলতে হবে। যদি আবার কোন চোটে পড়েন কেউ তাহলে হয়তো বিশ্বকাপই শেষ হয়ে যাবে। এ চার পেসারের সঙ্গে তামিমের ব্যথা চিন্তার বিষয় নয়। কিন্তু ব্যথা আবার উঠলে? মাহমুদুল্লাহ বোলিং যদি শেষ পর্যন্ত নাই করতে পারেন তাহলে শুধু ব্যাটিংই করে যাবেন। তাতে দলের একাদশেও প্রভাব পড়বে। এমনই অবস্থা এখন দলের, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে খেলতে নামার আগে চোট নিয়েই ভাবতে হচ্ছে। এই চোটই বাংলাদেশকে ম্যাচে বিপদে ফেলতে পারে। যেভাবে হোক বিশ্বকাপে যে বড় স্কোর হবে তা সবারই বোঝা হয়ে যাচ্ছে। প্রতি ম্যাচে ৩০০ ছাড়ানো রান অনায়াসে হচ্ছে। তার মানে বিশ্বকাপ শুরুর আগে ধরেই নিতে হবে ৩০০ রানের বেশি করতে না পারলেই হারের সম্ভাবনা থাকছে। বাংলাদেশ দল কী এখন এত রান করার পর্যায়ে আছে? সেই প্রশ্নও উঠছে। বড় স্কোর করতে হলে তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে সৌম্য সরকার অথবা লিটন কুমার দাস, সাব্বির রহমান অথবা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, সঙ্গে মোহাম্মদ মিঠুনকে কিছু করতে হবে। তামিম চোটে আছেন। একটু হলেও ব্যাটিংয়ে সমস্যা হতে পারে। সাকিবও চোট সেরে উঠেছেন। মুশফিকের ওপর সবসময়ই বড় ইনিংস খেলার বিষয়ে নির্ভর দল। মাহমুদুল্লাহও আছেন চোটে। তারও সমস্যা হবে। সৌম্য অথবা লিটন যে ব্যাটসম্যানই তামিমের সঙ্গী হয়ে ওপেনিংয়ে নামবেন তাকেই হাল ধরতে হবে। কিন্তু সাব্বির, সৈকত ও মিঠুনকে নিয়ে এত বড় স্কোর গড়ার সম্ভাবনা কী দেখা যায়? ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে সৈকত যে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করেছেন তা কী আর সবসময়ই মিলবে? নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে সাব্বির সেঞ্চুরি করেছেন। সেটি এখনও আশা দেখায়। মিঠুনেরতো ব্যাটিং ঝলকানি যেন ফুরিয়ে গেছে। ৩৫০ রান করতে হলে কিংবা এমন টার্গেটে খেলে জিততে হলে সব ব্যাটসম্যানকেই ঐক্যবদ্ধ নৈপুণ্য দেখাতে হবে অথবা দুই ব্যাটসম্যানকে বড় স্কোর গড়তে হবে। সেই সঙ্গে বড় জুটিতো আছেই। তা না হলে কী সম্ভব? মহাবিপদই যেন বাংলাদেশের সামনে আসছে। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে ৩৫০ রান কখনই করতে পারেনি। সর্বোচ্চ করেছে ৩২৯ রান। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহীমের সেঞ্চুরির সুবাদে। ৩৬২ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ১৩ ম্যাচে ৩০০ বা তার বেশি রান করতে পেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করে ১০টি ম্যাচে এবং টার্গেট নিয়ে খেলে ৩টি ম্যাচে ৩০০’র ওপরে রান করেছে। ৩০০ বা তার বেশি রান করা ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশের ভাগ্য খুবই ভাল। দুটি ম্যাচ ছাড়া সবকটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। ১২২ ওয়ানডে ম্যাচ জয়ের মধ্যে ১১টি জয় এসেছে ৩০০ রানের বেশি করে। তার মানে বাংলাদেশ যদি ৩০০ রানের বেশি স্কোরে জমা করে ফেলতে পারে তাহলে প্রতিপক্ষ কাঁপবে! বাংলাদেশের জয়ও ধরা দিতে পারে। যদিও বিশ্বকাপে বাংলাদেশ একবারই ৩০০ রানের বেশি স্কোরবোর্ডে জমা করতে পেরেছিল। সেটি ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। ৩১৯ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ৩২২ রান করে ৬ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে ৫ রানের জন্য সেঞ্চুরি হাতছাড়া হয় তামিমের, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক, সাকিব করেন হাফ সেঞ্চুরি আর সাব্বিরের ব্যাট থেকেও আসে ৪২ রান। তার মানে বাংলাদেশকে যদি বড় স্কোর করতে হয় আর বড় স্কোর অতিক্রম করে জিততে হয়, তাহলে সিনিয়র ব্যাটসম্যানদেরই হাল ধরতে হবে। বিশেষ করে শুরুটা তামিমকেই করতে হবে। তা নাহলে বড় স্কোর হওয়ার সম্ভাবনা কমই! আর না হলেতো জেতাও কঠিন! ‘৩৫০’ রানের যে ফাঁদ, এই ফাঁদে পড়ে এবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের লীগপর্ব অতিক্রম করে অন্তত সেমিফাইনাল খেলার যে আশা তা হতাশাতেও পরিণত হয়ে যেতে পারে। আবার চোটতো আছেই। চোট আর ৩৫০ রানের ফাঁদেই বিপত্তিতে পড়বে বাংলাদেশ!
×