ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদযাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ভোগান্তি

প্রকাশিত: ০৮:২৮, ২৯ মে ২০১৯

ঈদযাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ভোগান্তি

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ২৮ মে ॥ দেশের অন্যতম বৃহত্তম মহাসড়ক ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়ক পথে উত্তরবঙ্গের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম এই মহাসড়কটি। এই মহাসড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় এক শ’২৫ কিলোমিটার। শুধু ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইলের অংশ ৬৫ কিলোমিটার। ঈদ যাত্রায় ঘরমুখো মানুষের যানবাহনের ভিড়ে এই মহাসড়কে প্রকট যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন ঘরমুখো মানুষ। এবারও এই ঈদযাত্রায় মহাসড়কে যানজটের আশঙ্কা করছেন পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা। প্রতিবছর ঈদে এ মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের লাখ লাখ মানুষ যাতায়াত করেন। যা অন্য সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। মহাসড়কে ৭০ কিলোমিটার চারলেনের কাজ চলছে। শুধু টাঙ্গাইলের অংশে ৪৬ কিলোমিটার কাজ এখনও হচ্ছে। জানা যায়, নির্ধারিত সময়েও ঢাকা-টাঙ্গাইল চারলেন উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। তবে মহাসড়ক উন্নীতকরণ কাজের দ্বিতীয় দফা সময় বাড়িয়ে মূল প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে নতুন নতুন প্রকল্প। সূত্র জানায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধ সেতু মহাসড়ক দিয়ে ২৩ জেলার বিপুল সংখ্যক যানবাহন চলাচল করে। দেশের ব্যস্ততম এই মহাসড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল নির্বিঘœ করতে বিগত ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে দুই লেনের এই মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এরপর ভূমি অধিগ্রহণ ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে ২০১৬ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। যা ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পে মহাসড়কের দুই পাশে দু’টি সার্ভিস লেন, ২৯ নতুন ব্রিজ, চারটি ফ্লাইওভার ও ১৩টি আন্ডারপাস সংযুক্ত হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে প্রকল্পের কাজের বর্তমান মেয়াদ ধরা হয়েছে আগামী ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত। চালকরা জানান, বর্তমানে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চারলেনের কাজ চলছে। পাশাপাশি কয়েকটি স্থানে মহাসড়কের এক লেন বন্ধ করে আন্ডারপাস কাজ চলছে। এছাড়া গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে ঈদযাত্রায় মহাসড়কে যানজট সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাস্তা খারাপের কারণে আমাদের গাড়ি চালাতে খুব কষ্ট হয়ে যায়। রাস্তায় খানাখন্দের সংখ্যা প্রচুর। টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা, রসুলপুর, পাঁচবিক্রমহাটি, নগরজলপাই, ঘারিন্দা, করটিয়া, পাকুল্লা, হাঁটুভাঙ্গা, মির্জাপুর, গোড়াই, কুন্নী, তারুটিয়া এসব এলাকায় ঈদযাত্রায় যানজট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরিবহন যাত্রীরা বলেন, এ পথে গন্তব্যে পৌঁছাতে অন্তত ছয় থেকে সাত ঘণ্টা সময় লেগে যায়। সময়ের মূল্য অনেক বেশি। কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি রাস্তার কাজ যেন দ্রুত শেষ হয়। প্রতিবছরই ঈদ যাত্রায় যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে যদি ঈদ যাত্রার আগে মহাসড়কের মেরামতের কাজ শেষ না হয় তাহলে যানজট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যানজট ছাড়া মহাসড়কটি আড়াই ঘণ্টায় অতিক্রম করা যায়। যানজট হলে প্রায় ৭ ঘণ্টা সময় লাগে। কোন কোন সময় আরও বেশি সময় লাগে। তবে পুলিশ যদি কঠোরভাবে মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করে তাহলে যানজট হবে না বলে তারা আশা করেন। চারলেন প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা জানান, টাঙ্গাইলের অংশে বর্তমানে ৭টি আন্ডারপাসের কাজ চলছে। কুর্ণি, কদিমধল্যা, জামুর্কি, নাটিয়াপাড়া, বাঐখোলা, করটিয়া বাইপাস ও তারুটিয়ায় আন্ডারপাসের কাজ চলছে। আসন্ন ঈদে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফেরা নির্বিঘœ করতে টাঙ্গাইল অংশে তিনটি আন্ডারপাস যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এসব বিষয়ে জয়দেবপুর-এলেঙ্গা চারলেন প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার অমিত কুমার চক্রবর্তী বলেন, নতুন কাজগুলো বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পুরো কাজ শেষ করতে পারছি না। কিন্তু পুরনো কাজ আমরা শেষ করে ফেলেছি। মহাসড়কের মূল চারলেনের কাজের প্রায় ৯৩ শতাংশ শেষ হয়েছে। এছাড়া পুরাতন সার্ভিস লেন ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নতুন আরেকটি সার্ভিস লেনের মাটি ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া পুরো মহাসড়কে আন্ডারপাসের কাজ চলছে ৯টি। শুধু টাঙ্গাইলের অংশে ৭টি আন্ডারপাসের কাজ চলছে। এছাড়া টাঙ্গাইলের অংশে দুটি ফ্লাইওভার কাজ চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২০২০ সালের ২০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজের মেয়াদ শেষ হবে। এতে সর্বমোট ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। আশা করি এবার ঘরমুখো মানুষ যানজটের বিড়ম্বনায় পড়বে না।
×