ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কেট শপিংমলে দৃষ্টিনন্দন বাহারি পাঞ্জাবি

প্রকাশিত: ১০:৪৬, ১৪ মে ২০১৯

  মার্কেট শপিংমলে দৃষ্টিনন্দন বাহারি পাঞ্জাবি

ওয়াজেদ হীরা ॥ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর আসন্ন। ঈদে পুরুষদের অন্যতম পোশাক হলো পাঞ্জাবি। ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন পাঞ্জাবির মার্কেট ও দোকান সেজেছে নতুনভাবে। দৃষ্টিনন্দন নতুন ডিজাইনের পাঞ্জাবি প্রদর্শন করছেন বিক্রেতারা। যদিও এখনও ক্রেতাদের পদচারণা তেমন একটা বাড়েনি। তবে ক্রেতাদের দৃষ্টি কাড়তে নানা প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মার্কেটে মার্কেটে বিপণিবিতানগুলোতে বাহারি ডিজাইনের রং-বেরঙের পাঞ্জাবি শোভা পাচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা আশা করছেন আগামী শুক্রবার থেকে ঈদ কেনাকাটার জমজমাট বিক্রি শুরু হবে। ইতোমধ্যেই সাত রোজা শেষ। আর খুচরা বাজারে দশ রোজার পর থেকেই বিক্রি বাড়লেও জমজমাট বেচাকেনা শুরু হয় মূলত পনেরো রমজানের পর থেকেই। ইতোমধ্যেই রাজধানীর বিভিন্ন পাঞ্জাবির মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের নানা প্রস্তুতি। প্রতিদিন ক্রেতারাও আসছেন তবে সেটা নামমাত্র। ক্রেতারা এসে প্রতিদিন নতুন কালেকশন নেড়েচেড়ে দেখছেন, দাম জেনে নিচ্ছেন। কেউ কেউ ঈদের ভিড় এড়াতে কিনেও নিচ্ছেন। গত কয়েকদিনে শেষ হয়েছে ঈদের পাইকারি পাঞ্জাবি কেনাকাটা। বিশেষ করে দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসব কিনে নিয়েছেন। পাইকারি বাজার থেকে দেশের নানা প্রান্তে খুচরা ব্যবসায়ীদের দোকানে চলে গেছে ঈদের এই পোশাক। রাজধানীর অনেক ব্যবসায়ী আরও কয়েকদিন পাইকারি মার্কেটে যাতায়াত করবেন। এই ঈদ বাজারকে সামাল দিতে কেরানীগঞ্জের পোশাক পল্লী থেকে প্রায় ১০ কোটি পাঞ্জাবি সরবরাহ করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। ইতোমধ্যে গত কয়েকদিন ছিল কেরানীগঞ্জের পাঞ্জাবি বিক্রির হিড়িক। দেশীয় তৈরি পাঞ্জাবিগুলোর বাহারি ডিজাইন বিদেশী পাঞ্জাবির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রেতাদের মন জয় করে নিচ্ছে। পাইকারি বাজারের সেই বাহারি ডিজাইনের পাঞ্জাবি এখন থরে থরে সাজানো হয়েছে খুচরা দোকান ও মার্কেটে। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বেচাকেনাটা আগামী শুক্রবার থেকে বেশ ভালভাবেই শুরু হবে। মূলত পনেরো রোজার পর দম ফেলার সুযোগ পাওয়া যাবে না। এদিকে, রোজার শুরু থেকেই রাজধানীর ফ্যাশন হাউজগুলো সাজিয়ে বসেছেন বিভিন্ন বৈচিত্রের পাঞ্জাবির সমাহার। এবারের হাউজগুলোতে দোকানে দোকানে সুতি কাপড়ের পাঞ্জাবির চাহিদা বেশিই দেখা যাচ্ছে। সুতির ওপর হালকা কাজ করা, সুতি প্রিন্ট ও স্ট্রাইপের পাঞ্জাবি বেশি চলছে। এছাড়া সুতি কাপড়ের সাদা রঙের পাঞ্জাবি ও পায়জামা চলছে বেশি। পাশাপাশি হাউজগুলো রেখেছে হালকা বেগুনি, গোলাপি ও নীল রঙের। শুধু শপিংমলগুলোই নয়, পাঞ্জাবির সমাহার নিয়ে বসেছে ফুটপাথের ব্যবসায়ীরাও। এছাড়া বিপণিবিতানগুলো সুতি পাঞ্জাবির বাহারি নিয়ে সেজেছে। যেহেতু এবার ঈদে গরম পড়ছে সেহেতু হালকা রঙের সুতি কাপড়ের পাঞ্জাবিকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছে বেশিরভাগ পাঞ্জাবির ফ্যাশন হাউস। ফুটপাথের ব্যবসায়ীরাও তাই বলেছে। গত কয়েকদিন রাজধানীর একাধিক মার্কেটে ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা ব্যবসায়ীরা পাঞ্জাবির প্রদর্শন করা নিয়ে ব্যস্ত। কেউ পাঞ্জাবি ডলের (পুতুল) মধ্যে প্রবেশ করিয়ে প্রদর্শণ করছেন কেউ আবার প্রয়োজনীয় জায়গার স্বল্পতায় ঝুলিয়ে প্রদর্শন করছেন। এছাড়াও অনেক পাঞ্জাবি দোকানের তাকের থরে থরে সাজানো রয়েছে। কোন কোন দোকানে বিক্রেতাদের অলস সময় কাটাতেও দেখা গেছে। আজিজ সুপার মার্কেটের পুরোটাই পাঞ্জাবি আর মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ পাওয়া যায়। তবে পাঞ্জাবির সরবরাহ বেশি। ইজি শোরুমের এক বিক্রেতা বলেন, আমাদের এবারও গরমের সঙ্গে মানানসই গরম কাপড়ের কয়েকটি ডিজাইনের পাঞ্জাবি এসেছে। ক্রেতারা এখন যারা আসছেন তারা শুধু কালেকশন দেখছেন। কিনছেন কম জানান তিনি। বিভিন্ন মার্কেটে ভারতীয় পাঞ্জাবিও দেখা গেছে। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ভ্যাপসা গরমে হালকা কাপড়ের আধিক্য বেশি। দেশীয় পাঞ্জাবির অনেক আগ্রহ থাকে। কেননা দামে কম এবং দেখতেও সুন্দর। জানা গেছে, কারচুপি, লক্ষেèৗ হাতের কাজ, সেঞ্চুরি ইউনিটিকা, ব্যাকসি, পাবনা সিল্ক, রাজশাহী সিল্কের পাঞ্জাবির চাহিদা অনেক বেশি। প্রকারভেদে একটি পাঞ্জাবির পাইকারি মূল্য ৪০০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা। এছাড়া ভারতীয় পাঞ্জাবি তিন থেকে দশ হাজার টাকার উপরও রয়েছে বলে দোকনদাররা জানান। রাজধানীর পীর ইয়ামেনি মার্কেট পাঞ্জাবির জন্য বিখ্যাত। এখানে অসংখ্য দোকানে রয়েছে নানা রকমের পাঞ্জাবি। দোকানদার সাজেদুল ইসলাম বলেন, আমাদের এই মার্কেটে পাইকারি-খুচরা দুইভাবেই বিক্রি হয়। বিশেষ করে যারা যাকাতের জন্য একটু কম দামে খুঁজেন সেগুলোও সরবরাহ করা যায়। তিন শ’ থেকে কয়েক হাজার টাকার পাঞ্জাবি রয়েছে বলেও জানান তিনি। মৌচাক মার্কেটের বিক্রেতা ইলিয়াস উদ্দিন বলেন, পাঞ্জাবির নানা ধরনের নাম রয়েছে। আবার অনেক ক্রেতাই আছেন নাম খুঁজেন না এসে যেটি পছন্দ হয় কিনে নেন। এবার ঈদে শর্ট, পাঞ্জাবি, নবাব, বুটা, পিডি, বল শেরওয়ানি, রেমবো, রিচি ও হাজারি বুটা নামের পাঞ্জাবি ওঠানো হয়েছে। এসবের চাহিদা বেশি থাকবে বলেও মনে করেন। মালিবাগ থেকে মৌচাকের দিকে এগিয়ে যেতেই হাতের বামে পড়বে আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স। এই শপিং কমপ্লেক্সের নিচতলায় পাঞ্জাবি-পায়জামা ও শাড়ির অন্তত ৮৫টি দোকান রয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এই মার্কেটে দেশীয় ফ্যাশন হাউজ কান্ট্রি বয়ের ব্যবস্থাপক বলেন, ঈদ সামনে রেখে আমাদের সব কালেকশন ইতোমধ্যেই এসে গেছে। কিন্তু ক্রেতারা এখনও আসতে শুরু করেননি। ঈদের পূর্ণ ব্যবসা শুরু হতে আরও কয়েক দিন লাগবে। জানা গেল, দোকানে পুরুষদের জন্য পাঞ্জাবির পাশাপাশি রয়েছে কাজ্যুয়াল ও ফরমাল শার্ট, টি-শার্ট ও জিন্স প্যান্ট। ঈদে পাঞ্জাবিতে ৫০ শতাংশ মূল্য ছাড় দিচ্ছে এই কান্ট্রি বয়। আর তাতে পাঞ্জাবি পাওয়া যাবে ১৯৫০ টাকা থেকে ৯ হাজার ৫৫০ টাকায়। আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের পারভেজ স্টোরে রয়েছে শুধু পায়জামার সমাহার। এ দোকানের বিক্রয়কর্মী সেলিম বলেন, গতবছরের তুলনায় এবার রোজার শুরু থেকেই বেচাকেনা ভাল মনে হচ্ছে। ক্রেতার সমাগম বেশি। হয়ত সামনে বিক্রিও বেশ ভাল হবে। বড়দের পায়জামার দাম ২০০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে রাখা হচ্ছে এ দোকানে। কর্ণফুলি গার্ডেন সিটিতে পাঞ্জাবি দেখছিলেন ইমতিয়াজ খোকন নামের এক শিক্ষার্থী। শান্তিনগরের এই বাসিন্দা বলেন, গ্রামের বাড়ি দূরে। বাড়ি চলে যাব কদিন পরই। এখন মার্কেটও ফাঁকা তাই কিনতে এলাম। দাম চাচ্ছে বেশ। তবে দামাদামী করে কিনতে পারলে কেউ ঠকবে না বলেও জানান তিনি। বসুন্ধরা সিটিতে আড়ং থেকে পাঞ্জাবি কেনেন ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, আমি শনিবার স্ত্রী-সন্তানদের বাড়ি পাঠিয়ে দেব। সবার কেনাকাটার সঙ্গে নিজেরটাও করে নিলাম। মার্কেটে আসার ঝামেলা শেষ হলো। বসুন্ধরা সিটিতে দেখা গেলো অন্যান্য মার্কেটের চেয়ে ক্রেতার পদচারণা একটু বেশি। তবে কেনাকাটা খুব একটা নেই। দোকানে দোকানে ঘুরে দেখছেন বেশিরভাগ ক্রেতা। বিক্রেতা জসিম বলেন, বসুন্ধরায় মানুষ নানা কারণেই আসে। আর পছন্দের জিনিস দেখতে ঘুরে বেড়ায়। তবে বিক্রি এখনও তেমনভাবে শুরু হয়নি। অন্যান্য সময়ের মতোই চলছে।
×