ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অবরুদ্ধ গাজায় মুক্তির বারতা নিয়ে দুই নারী

প্রকাশিত: ১২:৩৭, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

অবরুদ্ধ গাজায় মুক্তির বারতা নিয়ে দুই নারী

কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের পর বাসমা আলী প্রবল উৎসাহ নিয়ে একটি চাকরির সন্ধান করতে থাকেন তার নিজ শহর গাজা উপত্যকায়। কিন্তু ১৯ লাখ অধিবাসী অধ্যুষিত সেই অঞ্চলে আরও অনেক শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির মতো তার স্বপ্ন ভাঙ্গতেও দেরি হয়নি। ২০০৭ সাল থেকেই স্থল, জল এবং সমুদ্র পথে গাজা অবরুদ্ধ হয়ে আছে ইসরাইল কর্তৃক। পণ্য পরিবহন এবং মানুষজনের চলাচলের ওপরও নিয়ন্ত্রণ জারি আছে। ফিলিস্তিনী পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে মোট কর্মক্ষম জনশক্তির ৪৯% ভুগছে বেকারত্বে। বিশেষ করে আইটি গ্রাজুয়েটদের বেলায় এই সঙ্কট আরও প্রকট। তাদের ৭০ শতাংশের নেই কোন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। আলীর ভাষায়, তাদের জীবন যেন আটকে গেছে একটি বৃত্তে, এগিয়ে চলার পথে তুলে দেয়া হয়েছে দেয়াল। বাসমা ও তার বন্ধু রাশা আবু সাফি তাদের স্টার্ট আপ জিগেটওয়ে নিয়ে এই দেয়াল ভেঙ্গে ফেলতে চাইছেন। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনী রিফিউজিদের জন্য পরিচালিত এজেন্সির সহায়তায় জিগেটওয়ের প্রতিষ্ঠা ২০১২তে। শুরু থেকেই হাজার বাধা বিপত্তি আর নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে তাদের পথ চলতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত গাজার ৬২০ জন তরুণকে তারা প্রযুক্তিনির্ভর ক্যারিয়ার গড়তে সহায়তা করেছেন। গত বছরের মে মাসে জিগেটওয়েকে ডিজিটাল অর্থনীতির আঞ্চলিক হাব এ পরিণত করতে বিশ্বব্যাংক তাদের ৩ মিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্য দিয়েছে। জিগেটওয়ে প্রোগ্রামে অন্তত অর্ধেক আসন সংরক্ষিত থাকছে কম্পিউটার বিজ্ঞানে নারী স্নাতক ডিগ্রীধারীদের জন্য। কিন্তু তাদের প্রতি ৫ জনের ১ জন কেবল নিজের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেন। আবু সাফি বলেন চাকরিদাতারা নিয়োগের বেলায় নারী পুরুষের ক্ষেত্রে বৈষম্যনীতি প্রয়োগ করে থাকেন। কারণ তাদের ধারণা বিয়ের পর মেয়েদের কাছে ক্যারিয়ারের চেয়ে সংসারটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। কিন্তু জিগেটওয়ের প্রতিষ্ঠাতা এই দুই নারী নিজেদের জীবনেও সে ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন। সংসার সন্তান সামলেও তারা কাজ করছেন নিজের জাতির জন্য। নারীরা যেন পিছিয়ে না থাকে সে কারণে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে নতুন মা’দের সন্তানসহ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন। তারা বলেনÑ গাজায় পর্যাপ্ত কাজের অভাব তরুণ সম্প্রদায়ের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলছে। তারা ঝুঁকে পড়ছে জঙ্গীবাদের দিকে। স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ রুদ্ধ হওয়ায় এই তরুণরা সুস্থ জীবনের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। আলীর ভাষায়- সেটাই সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক। কিন্তু জিগেটওয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে কাজ করছে। তাদের বিশ্বাস উপার্জনের একটা পথ করে দিতে পারলে এই তরুণেরা নিজেদের ওপর আস্থা ফিরে পাবে। আর এভাবেই তাদের মধ্যে এই বিশ্বাস স্থাপন করা সম্ভব যে তাদেরও আছে সুন্দর ভবিষ্যৎ। তাদের বিশ্বাস প্রযুক্তিই পারে ফিলিস্তিনী তরুণদের সামনে এক অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি সারা বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারে এই প্রযুক্তি। অবরুদ্ধ গাজায় প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়ে এই দুই নারী এখন সেখানকার নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তির দূত। সেখানকার তরুণদের স্বপ্ন দেখার সাহস যোগাচ্ছেন বাসমা আলী-রাশা আবু সাফি।
×