ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রিফাত কান্তি সেন

খাগড়াছড়ির পথে রোমাঞ্চকর যাত্রা...

প্রকাশিত: ০৭:২৭, ৩০ নভেম্বর ২০১৮

খাগড়াছড়ির পথে রোমাঞ্চকর যাত্রা...

মনের পিপাসা মেটাতে কোথায় না ছুটে মানুষ। কেউ ছুটে দিগন্তের পথে, কেউ পথ হারিয়ে খোঁজে অজানারে। কখনও সাদা মেঘের ভেলার সঙ্গে নিজেকে মেশাতে উঁচু পাহাড়ে, কখনও সমুদ্রের বিশালতাকে উপলদ্ধি করতে সমুদ্রের বুকে, কখনও বা অন্ধকার গুহায় অজানাকে জানতে মানুষ প্রতিনিয়ত ছুটে চলছে। আমার ও অজানাকে জানার সাধ জেগেছে। তাই ছুটে গিয়েছি প্রকৃতির স্বর্গরাজ্যে খাগড়াছড়িতে। রাস্তার দুদিকে তাকালে দেখা মেলে পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড়ের চুড়ায় যেন আকাশটা। সবুজের সমারোহ যে কারও মনে শিহরণ জাগায়। আবার কিছুপথ গেলেই দেখা যায় পাহাড়ে সারি সারি কলা গাছ। এ কলার জন্য নাকি বিখ্যাত খাগড়াছড়ি। পাহাড়ের আঁকা-বাঁকা রাস্তায় গাড়ি চলে হেলে-দুলে। ইশ ভাবা যায় কতটা রোমন্সকর এক যাত্রায় সামিল হতে যাচ্ছি। পথে পথে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, রিছাং ঝর্ণা, রহস্যময় সুড়ঙ্গ, দেবতার পুকুর, শান্তিপুর অরণ্য কুটির এগুলোর গল্প শুনে বেশ খোশ মেজাজেই আছি। যেতে যেতে পথে পথে সেখানকার মানুষদের মুখেই গল্পগুলো শুনতেছিলাম। খাগড়াছড়ি কলার জন্য বিখ্যাত এটা আমাদের জানাছিল আগেই। তবে নিজ চোখে তো আর দেখা হয়নি। আমরা তিনজন ভ্রমণে যাওয়ার জন্য মনস্থির করেছিলাম। আমি, মাসুদ আলম মাসুদ ভাই, পলাশ ভাই। তিনজনই আমরা খুব হাসি খুশি এবং শান্তিপ্রিয় মানুষ। মানুষের সঙ্গে খুব দ্রুত মিশে যাওয়ার সক্ষমতা রয়েছে আমাদের। খাগড়াছড়ি যাওয়ার পূর্বে আমরা লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী হয়ে পৌঁছাই ফেনী জেলায়। সেখানে সারাদিন কাটানোর পর রাতে আর খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হতে মন চাইছিল না। এদিকে হেমন্তের প্রাকলগ্ন। শীতের আগমনী বার্তা যেন জানান দিচ্ছে। ফেনী থেকে রওনা দিলাম আমরা খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে। পাহাড়ী আঁকা-বাঁকা রাস্তা। রাস্তার দু’পাশে শত শত গাছ। প্রকুতির যেন অপার মহিমা দিয়ে ঢেলে সাজানো। আমরা যখন পাহাড়ী রাস্তা ধরে গাড়িতে চেপে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলাম তখন একটু ভয় ভয় ও লাগছিল। পাহাড়ের অকৃত্রিম সৌন্দর্য আমি মুগ্ধ হয়ে উপভোগও করছিলেন। এর ফাঁকে মাসুদ ভাই দেখলাম ঘুমিয়ে পড়েছে। আর পলাশ ভাই সেখানকার একজন ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী যুবকের সঙ্গে আলাপচারিতা লাগিয়ে দিয়েছে। আহা যেন বেশ পরিচিত লোক তার। নিচ থেকে উপড়ে উঠছি আমরা। আবার উপর থেকে নিচে নামছি। দুই ঘণ্টা গাড়ি চলার পর চোখে পড়লো পাহাড়ে সৌন্দর্যম-িত চা বাগানের। শ্রমিকরা বাগানে চা পাতা সংগ্রহ করছে। চমৎকার এক দৃশ্য, সত্যি মনোমুগ্ধকর। আমাদের গাড়ি যত চলছে ততই আমরা বৃক্ষের সারি দেখে মুগ্ধ হচ্ছি। ফেনী থেকে তিন ঘণ্টার রোমাঞ্চকর যাত্রা শেষে গাড়ি আমাদের নামিয়ে দিল খাগড়াছড়ি বাসস্ট্যান্ডে। আমরা সেখানে নেমে একটি অটোযোগে হোটেল খুঁজতে বেড়িয়ে পড়লাম। আমাদের ভাগ্য ভাল। খাগড়াছড়ি জেলার সাংবাদিক অপু দাদা সেখানে আমাদের জন্য একটি অভিজাত হোটেলে রুম বুকিং দিয়ে রেখেছিলেন। অপেক্ষার প্রহর শেষে তিনি এলেন। আমরা হোটেলে উঠলাম। হোটেলের জানালা দিয়ে নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য অবলোকন করলাম। একটু একটু শীত পড়তে শুরু করেছে। আমি আর পলাশ ভাই খাগড়াছড়ি শহরের কলার দোকান থেকে কলা ক্রয় করে ফিরলাম হোটেলে। সেখানকার কলা নাকি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রফতানি করা হয়। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে রওনা দিলাম খাগড়াছড়ির দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য দেখতে। প্রথমেই আমরা পৌঁছালাম অপরাজিতা বৌদ্ধ বিহারে। খাগড়াছড়ি শহর থেকে মাত্র তিন কি.মি. দূরে জিরো মাইল এলাকায়। সেখানকার বৌদ্ধ মূর্তিটি বেশ বড়। পুণ্যার্থীরা আসেন তাঁদের মনের বাসনা জানাতে। সেখানে আমরা বেশ কিছু সময় অতিবায়িত করলাম। এরপর একজন বললো বৌদ্ধ বিহারটির অপর পাশেই পাহাড়ের চুড়ায় রয়েছে একটি ঝুলন্ত ব্রিজ। আমি তো শুনেই কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে গেলাম। আর দেরি না করে ঝুলন্ত ব্রিজে উঠার জন্য রওনা দিলাম। পাহাড় বেয়ে উপরের দিকে উঠতে লাগলাম। পাহাড়ের পাদ দেশে ঝুলন্ত ব্রিজ। প্রবেশ পথে আমাদের গুনতে হলো ২০ টাকা। ঝুলন্ত ব্রিজটি একটি পার্কের মধ্যে অবস্থিত। পার্কটি বেশ সুন্দর করে গোছানো। যে কারও মন ভাল হয়ে যাবে পার্কটিতে প্রবেশ করলেই। দুটি পাহাড়কে ঝুলন্ত ব্রিজটি একত্র করেছে। এটির বিশেষত হচ্ছে ব্রিজটি নির্মিত হয়েছে কাঠের উপর। দুপাশে রয়েছে লাইলনের জাল। ৪ ফুট চওড়া ও প্রায় ২৬০ ফুট লম্বা ব্রিজটিতে রয়েছে লাইলনের নেটের রেলিং তাই ঝুলন্ত ব্রিজ থেকে নিচে পড়ে যাওয়ার ভয় নেই। তবে আপনি যদি ব্রিজটিতে উঠে নিচের দিকে তাকান তবে ভয় পাবেন। কারণ অনেক উপড়ে এটি। তবে চারপাশের পাহাড়ী গাছপালা দেখে মন জুড়িয়ে যাবে সেটা নিশ্চিত। সেখানে আমরা অনেকক্ষণ অতিবায়িত করার পর কথা বলি উপজাতি কয়েকজনের সঙ্গে। তাদের আচরণে সত্যি আমরা মুগ্ধ হই। তারা বলেন প্রতিদিনই তো কত লোক আসে এখানে। যাদের মন খারাপ থাকে তারা এখানে এলে মন ভাল হয়ে যাবে। ততক্ষণাৎ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি বারটা বেজে গেছে। সেখান থেকে দ্রুত বের হয়ে আমরা আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের দিকে সিএনজি নিয়ে ছুটে চলি। পাহাড়ের আঁকা-বাঁকা পথের ছবি তোলা নিয়ে ব্যস্ত মাসুদ ভাই আর পলাশ ভাই। আমি কিন্তু নিজের চোখের ক্যামেরাতেই দৃশ্যগুলো ধারণ করছি। অবশেষে আমরা পৌঁছালাম আলুটিলায়। সৌন্দর্যের ঐশ^র্যময় খাগড়াছড়ি শহরের প্রবেশ পথ হচ্ছে আলুটিলা। সেখানে প্রবেশ করতেই দেখা মেলে একজন পাহাড়ী অধিবাসীর। তিনি পাহাড়ের জঙ্গল থেকে বড় কলার ছড়া কেটে বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছেন। এর ফাঁকে আমি দেখলাম সেখানকার অধিবাসী নারীরা বাঁশের ভেতর ধোঁয়া দিয়ে কী যেন টানছে। সুযোগ বুঝে আমিও দুটো টান দিলাম। আগেই বলেছি আধিবাসী লোকেরা খুবই মিশুক। এরপর গেলাম আলুটিলা অরুনিমা ওয়াচ টাওয়ারে। এখান থেকে দাঁড়িয়ে পুরো খাগড়াছড়ি পুরো শহরটাকে দেখা যায়।
×