ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গিরীশ গৈরিক

সাইমন জাকারিয়ার নাটক ‘সীতার অগ্নিপরীক্ষা ও মহাকবির সমস্যা’

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ২৯ নভেম্বর ২০১৮

সাইমন জাকারিয়ার নাটক ‘সীতার অগ্নিপরীক্ষা ও মহাকবির সমস্যা’

ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কেন্দ্রের উদ্যোগে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনারকক্ষে নাট্যকার সাইমন জাকারিয়ার নাটক বিষয়ক একটি সেমিনার আয়োজন করা হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন নাট্যকার রামেন্দু মজুমদার, আলোচক হিসেবে ছিলেন নাট্যগবেষক ড. আশিস গোস্বামী, নাট্যকার মাসুম রেজা এবং সভাপতিত্ব করেন নাট্যকার নাসিরউদ্দীন ইউসুফ। সেমিনারের শুরুতেই দীর্ঘ ৩০ পৃষ্ঠার প্রবন্ধ (পুরাণে সাইমনীয় পাঠ ও একটি টিপ্পনী) পাঠ করে শুনান বাংলাভাষার বিখ্যাত নাট্যসমালোচক ও সাংস্কৃতিক ভাষ্যকার অংশুমান ভৌমক। এই প্রবন্ধের মূল বিষয় সাইমনীয় দুটি নাটক : সীতার অগ্নিপরীক্ষা ও মহাকবির সমস্যা হলেও প্রাবন্ধিক আলোচ্য বিষয়ে নিয়ে এসেছেন পুরাণ কেন্দ্রিক অতীত ও বর্তমানের অধিকাংশ শিল্প-সাহিত্যের তুলনামূলক বিচার বিশ্লেষণ। এই কারণে সেমিনারের সকল অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তুলানামূলক সাহিত্যের বিচার দিয়ে সাইমন জাকারিয়ার নাটকের মূল বিষয় অনুধাবন ও নাট্যবোধের পরম্পরা নির্ধারণে নিবিষ্ট হতে দেখা যায়। তখন আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে আদিকবি বাল্মীকির রামায়াণ থেকে বাংলায় অনুসৃজন কৃত্তিবাসী রামায়ণ, হেমচন্দ্র ভট্টাচার্যের বাল্মীকি রামায়ণ কিংবা রাময়ণ থেকে চয়ণ করা চন্দ্রাবতী রামায়ণ, মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্য, সুকুমারী ভট্টাচার্যের রামায়ণের সহজ আবেদন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সীতা, যোগেশচন্দ্র চৌধুরীর সীতা, অরুণ মুখোপাধ্যায়ের মারীচ সংবাদ, কুন্তল মুখোপাধ্যায়ের শূদ্রায়ণ, মনোজ মিত্রের ভেলায় ভাসে সীতা, মাসুম রেজার নিত্যপুরাণ-এর সঙ্গে সাইমন জাকারিয়ার সীতার অগ্নিপরীক্ষা ও মহাকবির সমস্যা বিষয়ক নাটকের তুলনামূলক বিশ্লেষণ। মহাকবির সমস্যা এই নাটকটি আটটি দৃশ্যে বিন্যস্ত। নাটকটি অলীক সংলাপে মহাকবি বাল্মীকির সঙ্গে না-রদের বাহাস। বাহাসের বিষয় সীতার চরিত্রচিত্রণ। নাটকের মধ্যে মহাকবি বাল্মীকিকে এক-এক করে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করেন না-রদ। এখানে সাইমন জাকারিয়া নিজেই না-রদ। সাইমনীয় না-রদ বলেন, ‘আজ আপনার মহাকাব্য এবং আপনার মহাকবিত্ব বিচার করেত চাই, এই বিশ্ববাসীকে জানাতে চাইÑ কিছু নতুন কথা। তাই আপনার সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। আমার কথা যদি আপনার ভাল নাও লাগে, তাও। বলুন, আপনি রাজি।’ মহাকবি রাজি হলে তাকে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করা হয় রাময়ণের পুরুষতন্ত্র নিয়ে। প্রশ্নগুলো ছিলÑ সীতাহরণ নিয়ে, সীতার অগ্নিপরীক্ষা নিয়ে, সীতার বনবাস নিয়, সীতার পাতাল প্রবেশ নিয়ে। একটি প্রশ্ন দেখা যাক : ‘যে পুরুষ নিজের স্ত্রীর নিরাপত্তা দিতে পারে নাÑ তাকে আদর্শ, উন্নত, শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান দেয়া যায় কি?।’ বাল্মিীকি লিখেছিলেন পদ্যে, সাইমন নাটকীয় সংলাপে। তাই নাটকটি যেমন রহস্যঘেরা তেমনি সুখপাঠ্য। সীতার অগ্নিপরীক্ষা আধুনিক যুক্তিবাদী ও চিন্তাশীল দর্শকদের জন্য সীতার অগ্নিপরীক্ষা নাটকটি রচনা করা হয়েছে। নাট্যকার এই নাটকে ব্যবহার করেছেন বর্ণাত্মক নাট্যরীতির কৃৎকৌশল। এখানে সীতার অগ্নিপরীক্ষা মানে সীতার জবানবন্দী। আর এই জবানবন্দী বাল্মীকি কিংবা কৃত্তিবাসের ভাষ্যে নয়, পুরাটা সাইমনীয় কাল্পনিক ভাষ্যে রচিত। এখানে রাবণ দানবিক নয়, এখানে সে মানবিক। সাইমনীয় সীতা আবেগি নয়, সে এখানে যুক্তিবাদী। মূলত, নাটকটি সেকাল ও একালের নারীদের চরিত্রচিত্রণ। সেমিনার সামাপ্ত হওয়ার পর সীতার অগ্নিপরীক্ষা নাটকি মঞ্চস্থ হয়। তাই সময়সীমা নির্ধারণের কারণে অনেকের অনেক কথা বলার থাকা সত্ত্বেও আইটিআইয়ের বাংলাদেশ কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক দেবপ্রসাদ দেবনাথের কথার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়।
×