ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জটিলতা পিছু ছাড়ছে না ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমে

এবার পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়ন দাবিতে ছাত্র আন্দোলন

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৬ নভেম্বর ২০১৮

এবার পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়ন দাবিতে ছাত্র আন্দোলন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জটিলতা পিছু ছাড়ছে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমের। ফল প্রকাশের দাবির পর এবার অধিভুক্ত সাত কলেজের চতুর্থ বর্ষে চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল পুনঃমূল্যায়নের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। খাতা মূল্যায়নের গাফিলতির কারণে প্রায় প্রতিটি বিভাগে গড়ে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তারা। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন থেকে ফল পুনঃমূল্যায়নের দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানান, গণহারে ফেল করায় তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছে না। উত্তরপত্র সঠিক মূল্যায়নের দাবিতে অভিযোগ করলেও এ বিষয়ে পরীক্ষা কমিটি কোন সাড়া দেয়নি। তাই ফল বিপর্যয়ের একটি সমাধান করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বাজায় রাখতে এবং ফল বিপর্যয়ের শিকার পরীক্ষার্থীদের মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ দিতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া হক বলেন, আমাদের কলেজ থেকে ২৫ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেই। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, ২৫ জনের একজনও পাস করেনি। একই হলের এক রুমে আমরা বসেছিলাম, তাদের সবাই অকৃতকার্য হয়েছে। আমরা আবারও খাতার পুনঃমূল্যায়ন চাই। বাঙলা কলেজের ছাত্র আলী কদর অভিযোগ করে বলেন, সরকারি বাঙলা কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে ৩৬০ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়। সেখান থেকে মাত্র ৭ জন পাস করেছে বাকিরা অকৃতকার্য। আমরা এতটা বেশি খারাপ ছাত্র নই যে, পরীক্ষায় অংশ নিলেই ফেল করব। আমার মনে হয়, আমাদের খাতা ভাল মূল্যায়ন হয়নি। তাই পুনরায় মূল্যায়নের অনুরোধ জানাই। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মুশফিক বলেন, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র আমরা। ২০১৬ সালে আমাদের অনার্স শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ’১৮ সালে এসে জানতে পারি- আমরা সবাই চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছি। আমাদের এখানে বাংলা বিভাগ থেকে ১১৩ জনের মধ্যে মাত্র ১২, দর্শন বিভাগে ১১৬ জনের মধ্যে ২৮, ইতিহাস বিভাগে ১৪২ জনের মধ্যে ৭১ এবং ইংরেজী বিভাগে ১২৬ জনের মধ্যে মাত্র ১৪ জন পাস করেছে। ভালভাবে আমাদের পরীক্ষার খাতার মূল্যায়ন হয়নি। আমরা মানববন্ধন থেকে পুনরায় ফল মূল্যায়নের দাবি জানাচ্ছি। মানববন্ধন থেকে শিক্ষার্থীরা ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের অনার্স চতুর্থ বর্ষ পরীক্ষার ফল বিপর্যয় ১০ দিনের মধ্যে সমাধানসহ অধিভুক্ত ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- উত্তরপত্রের যথাযথ পুনঃমূল্যায়ন করতে হবে, উত্তরপত্রের সঠিক মূল্যায়ন নিশ্চিতকরণ এবং উত্তরপত্র পুনর্বিবেচনা পূর্বক মাস্টার্স ভর্তির সুযোগ দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, গত ১১ অক্টোবর অধিভুক্ত ৭ কলেজের ২০১২-’১৩ শিক্ষাবর্ষের অনার্স ৪র্থ বর্ষ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে অধিকাংশ বিভাগের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করে এ পরীক্ষায়। সরকারি বাঙলা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে ৩৬০ শিক্ষার্থী অনার্স চতুর্থ বর্ষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও অকৃতকার্য করেছে ৩৫৩ শিক্ষার্থীই। এ কলেজের ইংরেজী বিভাগে ১১৩ শিক্ষার্থী অংশ নিলেও পাস করেছে মাত্র ১২। ১০১ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। বেগম বদরুন্নেসা সরকারী কলেজের রসায়ন বিভাগ থেকে ২৫ শিক্ষার্থী অনার্স চতুর্থ বর্ষ পরীক্ষায় অংশ নিলেও কৃতকার্য হননি কেউই। ফেল করেছে ২৫ জনই। এ কলেজের ইংরেজী বিভাগ থেকে ৫৫ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৩৬ এবং গণিত বিভাগ থেকে ৭৩ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২৬ জন শিক্ষার্থীই ফেল করেছে। সরকারী তিতুমীর কলেজের ইংরেজী বিভাগ থেকে ২২৫ শিক্ষার্থী অনার্স চতুর্থ বর্ষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও পাস করেছেন মাত্র ৩৫ জন। ফেল করেছে ১৯০ শিক্ষার্থী। একই কলেজের দর্শন বিভাগ থেকে ১৫০ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও ১৩৪ জনই ফেল করে ২০১২-’১৩ শিক্ষাবর্ষের অনার্স চতুর্থ বর্ষ পরীক্ষায়। পাস করেছেন মাত্র ১৬। সরকারী তিতুমীর কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২৮ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও কৃতকার্য হয় মাত্র ৭ জন, অর্থনীতি বিভাগ থেকে ৬৫ জন অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয় ২১ এবং ইসলামী স্টাডিস বিভাগ থেকে ১২২ জন অংশ নিয়ে মাত্র ৪৩ জন পরীক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে। ঢাকা কলেজের দর্শন বিভাগ থেকে পরীক্ষায় ১১০ শিক্ষার্থী অংশ নিলেও ফেল করেছে ৮২ জন শিক্ষার্থী। অপরদিকে এ কলেজের রসায়ন বিভাগ থেকে ৪৩ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয়েছে মাত্র ৯ শিক্ষার্থী। কবি নজরুল কলেজের ইংরেজী বিভাগে থেকে ১৪০ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও ১১৪ শিক্ষার্থীই ফেল করেছে অনার্স ৪র্থ বর্ষ পরীক্ষায়। পাস করেছেন মাত্র ১৬। তিতুমীর কলেজের ইংরেজী বিভাগের ছাত্র মাহবুব উদ্দিন সোহান বলেন, ইংরেজী বিভাগ থেকে নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে ৩১০ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে। ‘নাইটিনথ সেঞ্চুরি নোভেল’ ও ‘মডেল ড্রামা’ বিষয়ে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। কিন্তু এ দুটি বিষয় সহজ, আমরা দৃঢ় প্রত্যয়ী যে, আমরা পাস করব। এদিকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেছেন, হ্যাঁ তারা পুনঃমূল্যায়নের আবেদন করতেই পারেন। তারা যদি আবেদন করেন বিশ^বিদ্যালয়ের বিধি-বিধান অনুসারে অবশ্যই পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিধি-বিধান মেনে আবেদন করলে নিয়ম অনুসারে সংশ্লিষ্ট শাখা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বিষয়টি দেখবেন।
×