ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপি মনে করছে প্রথম তফসিলে নির্বাচন হবে না

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ৬ অক্টোবর ২০১৮

 বিএনপি মনে করছে প্রথম তফসিলে নির্বাচন হবে না

শরীফুল ইসলাম ॥ প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেতে চায় বিএনপি। তবে দলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন প্রথম দফা তফসিলে নির্বাচন হবে না। প্রথম দফা তফসিলের পর বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের রাজপথের আন্দোলন, দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহলের চাপে কিছু বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতা হবে এবং এরপর দ্বিতীয় দফা তফসিলের পর সকল দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সূত্র মতে, বিএনপি নেতাকর্মীরা নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে হলেও তাদের ধারণা প্রথম দফা তফসিলে নির্বাচনে অংশ নিলে দলটির ভরাডুবি হবে। আর এ কারণেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসলেও এ বিষয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের তেমন দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা সারাদেশের প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় আগাম নির্বাচনী প্রচারে মাঠে নেমে গেলেও বিএনপি নেতারা এখন নীরব। তারা দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে অবস্থান করায় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী তালিকা করতেও হিমশিম খাচ্ছে দলের সিনিয়র নেতারা। বিভিন্নভাবে জরিপ চালিয়ে প্রতি আসনে ৩ জন করে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম রেখে একটি খসড়া তালিকা তৈরি করলেও এটি চূড়ান্ত করতে পারছে না বিএনপি। তাই সম্প্রতি বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপি এখনও প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেনি। তবে নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত হলে প্রার্থী তালিকা তৈরি করতে বেশি সময় লাগবে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ আগে ফিরে আসুক তারপর প্রার্থী তালিকা করা যাবে। এখন দেশের যে অবস্থা তাতে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপি নেতাকর্মীরা ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে? তাই আমরা চাচ্ছি সরকার আগে নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনুক। এ জন্যই আমরা আলাপ-আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের কথা বলছি। বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করছে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশে করতে শেষ মুহূর্তে হলেও সরকার উদ্যোগ নেবে বলে আশাবাদী বিএনপি। আর এ আশায় মুখে হাঁকডাক দিলেও বাস্তবে রাজপথের কঠোর কর্মসূচীর দিকে যাচ্ছে না দলটি। এমনকি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহলের পরামর্শে কৌশলে দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াতকে আপাতত দূরে রেখে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ে রাজনৈতিক কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ইতোমধ্যে ৭ দফা দাবি পেশ করে তা আদায় না হলে কোন অবস্থাতেই নির্বাচনে যাবে না বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জোর গলায় বলা হচ্ছে। তবে সংবিধান অনুসারে বর্তমান সরকারের অধীনেই যে নির্বাচন হবে সেটি দলের নেতাকর্মীদের চিন্তায় রয়েছে। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার যদি ন্যূনতম পদক্ষেপ নিয়েও দলের নেতাকর্মীদের আস্থায় আনতে পারে তাহলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ৩০ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ থেকে বিএনপি যে ৭ দফা কর্মসূচী ঘোষণা করেছে তা বাস্তবায়নে ধীরে ধীরে আন্দোলন চাঙ্গা করতে চায় দলটি। দলটির ৭ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই জাতীয় সংসদ বাতিল, তফসিলের আগেই খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে দায়ের সব মামলা প্রত্যাহার এবং সকল বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মামলা প্রত্যাহার, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে ফল প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোন মামলা না দেয়া, পুরনো মামলায় কাউকে গ্রেফতার না করা, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশের অভিযোগে ছাত্রছাত্রী-সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ ও সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা, ঐকমত্যের ভিত্তিতে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য লোকদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা, নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে কোন ধরনের বিধি-নিষেধ ছাড়াই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ এবং নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ৭ দফা দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচী চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ভেতরে ভেতরে বিভিন্ন কৌশলে সরকারের সঙ্গে সমঝোতারও চেষ্টা করবে বিএনপি। এ জন্য দলের ক’জন নেতা ও দলের পক্ষে কাজ করছেন বিভিন্ন শ্রেণীপেশার এমন কিছু লোকও নানামুখী কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বিএনপির সিনিয়র নেতারা মনে করছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি যেমন বিভিন্নভাবে বেকায়দায় রয়েছে তেমনি সরকারও নানামুখী চাপে রয়েছে। বিশেষ করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন একতরফাভাবে করে পুরো ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে। তাই আওয়ামী লীগও এবার চাইবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো যেন একতরফা কোন নির্বাচন না হয়। এমনটি ধরে নিয়েই বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে যে, শেষ মুহূর্তে হলেও সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের একটি উদ্যোগ নেবে। সরকারকে চাপে রেখে যাতে কিছু দাবি-দাওয়া আদায় করে নির্বাচনের ন্যূনতম পরিবেশ নিশ্চিত করা যায় সে লক্ষ্যে সরকার বিরোধী বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট ‘জাতীয় ঐক্য’ করার পথে রয়েছে বিএনপি। এ জন্য যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করেও দলের জন্য সুবিধা আদায় করতে পারেনি বিএনপি। একদিকে ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতকে বাদ না দিলে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিএনপিকে নেয়া হবে না বলে ড. বি চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে। অপর দিকে ৫ বার ক্ষমতায় যাওয়া দল জনসমর্থনহীন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে ঐক্য প্রক্রিয়ায় শামিল হয়ে দলের জন্য কি লাভ নিয়ে আসতে পারবে- এ নিয়েও সমালোচনা রয়েছে। খোদ বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি অংশই প্রশ্ন তুলছে জামায়াতকে বাদ দিয়ে ভোটহীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐক্য করে কি লাভ হবে? এদিকে প্রথম দফা তফসিলের পর আওয়ামী লীগ যাতে ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন করে ফেলতে না পারে সে জন্য তফসিলের পরপরই কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে রাজপথ উত্তপ্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। শুক্রবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আন্দোলন কর্মসূচীর মাধ্যমে আগামী একমাসের মধ্যে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটবে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হবে যে, সরকার সংলাপে বসে আমাদের দাবি মানতে বাধ্য হবে।
×