আজাদ সুলায়মান ॥ প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটের সেই বিতর্কিত পাইলট ক্যাপ্টেন ফারাহাত জামিলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে লন্ডন থেকে ফিরিয়ে আনতে যাওয়া ফ্লাইটের ককপিটে বসার পর তাকে নামিয়ে আনা হয়। বিমান বলছে, তাকে নিরাপত্তাজনিত কারণে অফলোড করা হয়েছে। তার পরিবর্তে ওই ফ্লাইট অপারেট করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আরেক পাইলট ক্যাপ্টেন গোলাম মোহাম্মদ খাজাকে। শনিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। তাকে প্রত্যাহার করে নতুন একজনকে তার স্থলাভিষিক্ত করতে গিয়ে এ দিনের লন্ডন ফ্লাইট দেড় ঘণ্টা বিলম্বিত হয়।
জানতে চাইলে জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ বলেন, অপারেশন শাখা আমাকে জানিয়েছে চাকা লাগানোর জন্য লন্ডন ফ্লাইট দেড় ঘণ্টা দেরি হয়েছে।
ফারাহাতকে কেন প্রত্যাহার করা হয়েছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টিকে সেনসেটিভ উল্লেখ করে পরামর্শ দেন এমডির সঙ্গে কথা বলার।
বিমান সূত্র জানিয়েছে, গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী লন্ডনগামী ফ্লাইট ছাড়ার পূর্বমুহূর্তে কেবিন ক্রু মাসুদা মুফতিকে হযরত শাহ জালাল বিমানবন্দরে ব্রিফিং রুমে ডোপ টেস্টে মদ্যপ অবস্থায় শনাক্ত করার অভিযোগে অফলোড করা হয়। সেদিন এ ঘটনার পরবর্তী করণীয় পদক্ষেপ না নিয়ে পরিচালক ক্যাপ্টেন ফারহাত জামিল ওই একই ফ্লাইটের পাইলট ইন চীফ হিসেবে লন্ডন চলে যান। তিনি ওই ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। একই ফ্লাইটে ডিউটি করতে লন্ডন যান ডিজিএম (কেবিন ক্রু) নুরুজ্জামান রঞ্জু। এ ঘটনায় মিডিয়ায় ফাঁস হওয়ার পর তোলপাড় দেখা দেয়। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য বিমান মুফতিকে গ্রাউন্ডেড আর রঞ্জুকে ডিজিএম-এর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। কিন্তু এ ঘটনায় রহস্যজনক নীরব থাকা ও দায়িত্বহীনতার পরও ফারাহাত জামিলের বিরুদ্ধে বিমান কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। উপরন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লন্ডন থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য শনিবার বিমানের একটি ফ্লাইটে আবারও দায়িত্ব দেয়া হয়। শনিবার সেভাবেই তাকে লন্ডন পাঠানোর প্রস্তুতি চলছিল। সকাল দশটায় যথারীতি তিনি ককপিটে পৌঁছেও যান। তখন একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বিমানকে জানানো হয়- তার সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স নেই। তাকে দিয়ে এই ফ্লাইট অপারেট করা যাবে না। গোয়েন্দা সংস্থার আপত্তির মুখে ফারাহাত জামিলকে ওই ফ্লাইট থেকে নামিয়ে এনে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয় স্ট্যান্ডবাই থাকা অপর পাইলট ক্যাপ্টেন খাজাকে। পরে দেড় ঘণ্টা বিলম্বে তিনি কো-পাইলট ক্যাপ্টেন হাসনাইনকে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যান।
উল্লেখ্য, এর আগেও ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর ওই বিতর্কিত পাইলট ফারাহাত জামিল প্রধানমন্ত্রীকে আনার জন্য লন্ডন থেকে পজিশনিং নেয়ার পর তাকে অফলোড করা হয়। পরে জরুরী ভিত্তিতে ঢাকা থেকে বিমানের অপর ক্যাপ্টেন শফিকুল ইসলামকে মালয়েশিয়ায় হয়ে লন্ডন পাঠিয়ে বিমানের ওই ভিভিআইপি ফ্লাইট দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। বার বার কেন এত বিতর্কের পরও তাকে ভিভিআইপি ফ্লাইটের দায়িত্ব দেয়া হয়- প্রশ্ন করা হলে বিমানের কোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।