ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আলী ইউনুস হৃদয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ॥ অন্যরকম শিক্ষাসফর

প্রকাশিত: ০৭:৩৪, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ॥ অন্যরকম শিক্ষাসফর

রাতের ব্যস্ততাকে সঙ্গী করে একদল শিক্ষার্থীর যাত্রা শুরু। গন্তব্য রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন। সেখান থেকে রাত দশটায় চেপে বসলেন ধুমকেতু ট্রেনে। ট্রেনে উঠেই সেলফিবন্দী হলেন তারা। এরইমধ্যে আলমাস তার নিজ ফেসবুক টাইমলাইনে সেই ছবি পোস্ট করেছেন। নির্ঘুম রাত যেন কাটেই না! গান-গল্পের আড্ডায় সবাই ক্লাস-পরীক্ষার কথা ভুলে গেছে। ভোর ছয়টায় ট্রেন বিমানবন্দর স্টেশনে পৌঁছায়। এবার সিলেটগামী জয়ন্তিকা ট্রেনে সবাই চেপে বসলেন। ট্রেন ছুটে চলে আপন গন্তেব্যে। নিয়মিত বিরতিতে নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার পাড়ি দিয়ে ট্রেন সিলেট স্টেশনে পৌঁছায়। সেখান থেকে আগে থেকে বুকিং দেয়া হোটেলে পৌঁছে রাত্রি যাপন করে তারা। সকলেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ট্যুরিস্ট ক্লাবের সদস্য। গত ২৩ জুলাই থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত এই আনন্দ ভ্রমণে অংশ নেয় ক্লাবের ২৫ জন সদস্য। প্রতিবছর ক্লাবের পক্ষ থেকে এই আনন্দ ভ্রমণের আয়োজন করা হয়। তিন দিনব্যাপী আনন্দ ভ্রমণের প্রথম দিন ক্লাবের সদস্যরা সিলেটের আগুন পাহাড়, জাফলং, খাসিয়া পল্লী ও চা বাগান ঘুরে দেখেন। কাক ঢাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে আগুন পাহাড়ের পথে লেগুনায় রওনা দেয় তারা। লেগুনা সিলেট নগরীর কিন ব্রিজ পাড়ি দিয়ে এগুতে থাকে। সঙ্গে রয়েছে সিলেটের বর্ষাঘন আবহাওয়া। দূরের পথ ধরে যেতে চোখে পড়ে উঁচু উঁচু টিলার সারি সারি চা বাগান। মেঘালয়ের পাহাড়গুলোও যেন তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে। দুই ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতেই দেখা মিলে আগুন পাহাড়ের। নামের সঙ্গে এ পাহাড়ের অদ্ভুত মিল রয়েছে। আনন্দে ভয়কে জয় করে বিপ্লব দিয়াশলাইয়ের কাঠি দিয়ে আগুন জ্বালাল। আগুন জ্বালিয়ে নিজেকে জাদুকর প্রমাণের চেষ্টা করে। এদিকে পাহাড়ের কিনারায় উঠে সেলফি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করেন আরিফিন। এবার যাত্রা শুরু জাফলংয়ের পথে। সেখানে পৌঁছে দুপুরের খাবার খেয়ে নেমে পড়ে নদীর পাড়ে। ভাড়া করা নৌকা দুটো ছুটে চলে। কয়েক মিনিটের পথ পাড়ি দিতেই চোখে পড়ে মেঘালয় থেকে নেমে আসা জাফলং ঝর্ণা। ঝর্ণাকে সঙ্গী করে নিজেদের ফ্রেমবন্দী করলেন। আনন্দ ভ্রমণের সমন্বয়ক শামিম জাফলংয়ে এক ঘণ্টা অবস্থানের কথা জানিয়ে দেয়। কিন্তু সময় ধরে বেঁধে কি আর আনন্দ করা যায়। আনন্দ আড্ডায় ঝর্ণার পানিতে ক্লাবের সদস্যরা দুই ঘণ্টা অতিবাহিত করলেন। সেখান থেকে অটোরিক্সায় চেপে খাসিয়া পল্লীর পথে চলতে থাকে তারা। পুরো পল্লী সাজিয়ে নিয়েছে সিলেটের খাসিয়ারা। পল্লীর ছোট ছোট খুপড়িগুলো অপার সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছে। সন্ধ্যার আকাশে সূর্যের আলো ক্ষীণ হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্লাবের সদস্যরা ফেরার জন্য যাত্রা শুরু করে। দ্বিতীয় দিন সিলেটের স্বর্গ বিছানাকান্দি ও রাতারগুলের সৌন্দর্য দর্শনে বের হয় ক্লাবের সদস্যরা। সকাল সকাল প্রস্ততি সেরে লেগুনায় চড়ে বসে সবাই। ২০ কি.মি পথ পাড়ি দিয়ে রাতারগুলে পৌঁছে যায় তারা। ঘাটে বাঁধা সারি সারি নৌকাগুলো দর্শনার্থীদের অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকে। জলে নিমজ্জিত করচ গাছের ভেতর দিয়ে পাঁচটি নৌকায় এগুতে থাকে। নৌকাগুলো আঁকা বাঁকা জলপথ বেয়ে চলতে থাকে। নৌকার মাঝিদের সঙ্গে গান গাইতে থাকে আসাদ, দৃষ্টি, তাজ, রবিন, রতন, রিপন, সাব্বির, রোজ ও শ্যামা। বনের মধ্যে ওয়াচ টাওয়ারের কাছে পৌঁছাতেই রাতারগুলের চারপাশের সৌন্দর্য দর্শনে মুগ্ধ হয় তারা। সেখান থেকে ভাড়া করা লেগুনায় চড়ে তারা বিছানাকান্দি পথে এগুতে থাকে। পীরের বাজার ঘাটে পৌঁছাতেই লেগুনার চালক জানান এখানে থেকে তিন কিমি. পথ পাড়ি দিলেই মিলবে বিছানাকান্দি। আবারও ভাড়া করা নৌকায় যাত্রা শুরু। নদীর বিস্তীর্ণ জলরাশি ভেদ করে চলতে থাকে নৌকা দুটো। নদীপথ ধরে এগুতে দুধারে চোখে পড়ে ছোট ছোট ঘরবাড়ি। আর পথিমধ্যে দেখা মিলছে ছোট ছোট যাত্রীবাহী নৌকা ও পাথর বোঝাই ট্রলারের। নৌকা ছুটে চলে আপন গতিতে। যতদূর চোখ যায় দেখা মিলে নীল আকাশ ঘেঁষা সবুজ পাহাড়। মেঘ আর আকাশি রঙে মিলে একাকার হয়ে গেছে পাহাড়ের গাছগুলোর সবুজ প্রকৃতি। যতই এগুতে থাকে পাহাড়ের নৈকট্য যেন বাড়তেই থাকে। বিছানাকান্দির পিয়াইন নদীর স্রোতে নিজেদের শান্ত করতে নেমে পড়ে তারা। পাথরের গা ঘেঁষে বসে সকলে ছবি তোলার কাজটিও সেরে ফেলেন। দুই ঘণ্টার জলবিলাসের গল্প নিয়ে ভাড়া করা নৌকায় চেপে বসলেন। সেখান থেকে এবার ফেরার পালা। ঝিরঝিরি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হোটেলে সবাই ফিরে আসে। পরদিন দেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত মৌলভীবাজারের মাধবকু- ঘুরে দেখার পালা। সকালে লোকাল বাসে চড়ে মাধবকু-ে পৌঁছায় তারা। মাধবকু- জলপ্রপাত ও চা বাগান দেখতে দেখতে আনন্দ ভ্রমণের সময় ফুরিয়ে আসে। রঙিন স্মৃতির ক্যানভাসে মনের গ্যালারি যখন পরিপূর্ণ তখন সময়ের প্রয়োজনে প্রিয় মতিহারের সবুজ চত্বরের পথে রওনা দেয় তারা। আর চাঁদ-তারার আলোতে আঁকা বাঁকা পথ ধরে এগুতে সবার কণ্ঠে শোনা যায় এই পথ যদি না শেষ হয়...
×