ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

২২ নাতি-নাতনি নিয়ে তার কঠোর সংগ্রাম

আইএস মুক্ত মসুলে হার না মানা নারী সানা

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২৮ আগস্ট ২০১৮

আইএস মুক্ত মসুলে হার না মানা নারী সানা

মসুল নগরী এক বছর আগেই ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কবল থেকে মুক্ত হয়েছে। কিন্তু তাদের চালানো অত্যাচার-উৎপীড়নের শিকার হওয়া পরিবারগুলোকে এখনও প্রবলভাবে তার জের টানতে হচ্ছে। সানা ইব্রাহীম তেমনই এক নারী। বয়স তার ৬১ বছর। কিন্তু তাকে ২২ নাতি-নাতনির মুখের আহার যোগাড়ের জন্য প্রতিদিনই কঠোর সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হচ্ছে। শহরটি জিহাদীদের দখলে থাকাকালে এই নারী তার পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হারিয়েছেন। কিন্তু কখনও হার মানেননি। পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছেন। কালো লম্বা পোশাক পরা এই নারীকে ঘিরে রয়েছে ছোট ছোট শিশু। মেয়েদের চুল সুন্দর বাঁধা, আর ছেলেরা রঙিন টিশার্ট পরা। সবচে ছোটটির বয়স মাত্র দুই বছর। এদিকে তার স্বামী মোয়াফাক হামিদের (৭১) প্রতিও তাকে লক্ষ্য রাখতে হয়। এর বাইরে বাড়ির ৩২ সদস্যের সকলের জন্য আহার যোগাড় তার জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। মসুল তিন বছর ধরে জিহাদীদের দখলে ছিল। এ সময় তার দুই ছেলে ফারেস ও গাজওয়ান ও মেয়ের জামাই মাসুদকে অপহরণ করে আইএস। খবর এএফপির। এরা প্রত্যেকেই একটি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। আইএস বাহিনীকে শত্রু মনে করে। সানা বলেন, আইএস সম্ভবত তার প্রিয়জনদের হত্যা করেছে। তিনি তাদের লাশ পাবার অপেক্ষায় আছেন। আইএস-এর দখলদারিত্বের সময় তারা কয়েক শ’ সরকারী সৈন্য ও পুলিশ সদস্যকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। এরপর তাদের লাশ নগরীর উত্তরাঞ্চলে গণকবরে চাপা দিয়েছে। ২০১৬ সালে ইরাকী বাহিনী মসুল পুনরুদ্ধারে কয়েকমাস ধরে জিহাদীদের সঙ্গে লড়াই করে। এরপর ২০১৭ সালের জুলাই মাসে সরকারী বাহিনী নগরী থেকে জিহাদীদের উৎখাতে সমর্থ হয়। সানার অপর দুই সন্তান যুদ্ধে নিহত হয়েছে। তার ২০ বছর বয়সী ছেলে ইউসেফ ও তার মেয়ে নূর (১৮) যুদ্ধে নিহত হয়েছে। ওল্ড সিটি থেকে পালানোর সময় তারা প্রাণ হারায়। মসুলের ঐতিহাসিক পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকা যুদ্ধে প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। সানার বাড়ি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর তাকে ও তার পরিবারকে টিকে থাকার জন্য অন্যত্র চলে যেতে হয়েছে। তারা তখন নগরীর পূর্ব পাশে চলে আসে। মাসিক পাঁচ লাখ দিনার ভাড়ায় তারা ১৫০ বর্গমিটারের একটি বাসায় ওঠে। বেঁচে থাকা সানার অপর চার সন্তান বেকার। তাই এই বাসা ভাড়া যোগাড় করতে সানাকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। তিনি বলেন, আমরা মসুলে দুর্গতদের জন্য সহায়তা দানকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এই দাতাদের সাহায্য ছাড়া আমাদের ক্ষুধা ও অসুখে মারা যেতে হতো। এমন একজন দাতা এএফপির প্রতিনিধির নজরে পড়েন। তিনি একটি দাতব্য সংস্থায় খাবার ও পোশাক ভর্তি ব্যাগ নিয়ে আসেন। এক সরকারী কর্মকর্তা বলেন, ওই নারী তার ছেলের বেতনের একটি অংশ সানার পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় দান করেন। ছোট রান্নাঘরে সানা ও তার ছোট ছেলের স্ত্রী শিশুদের জন্য রান্না করছিলেন। ব্যস্ততার মধ্যেও সানা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেন। তিনি তার নাতি-নাতনিদের উচ্চ শিক্ষিত হয়ে ভাল চাকরি পাবার আশা করেন।
×