ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাইওয়েতে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিমি ॥ সড়ক পরিবহন উপদেষ্টাদের বৈঠক

সড়ক-মহাসড়কে স্বল্প গতির যান নিয়ন্ত্রণ হবে কঠোরভাবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৮ আগস্ট ২০১৮

সড়ক-মহাসড়কে স্বল্প গতির যান নিয়ন্ত্রণ হবে কঠোরভাবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সড়ক দুর্ঘটনা রোধে হাইওয়েতে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। যা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। অর্থাৎ সড়ক দুর্ঘটনার অনেকগুলো কারণের মধ্যে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো একটি। এবার ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। সোমবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সড়ক পরিবহনের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, পরিবহন খাতকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে তারা যে সুবিধা পাবে তা অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সেতুমন্ত্রী। ওবায়দুল কাদের বলেন, সড়ক-মহাসড়কে ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত তিনচাকার যান, নসিমন, করিমন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তাই বিআরটিএ’তে নতুন করে আটজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেসব জেলায় রোড-ট্রান্সপোর্ট কমিটি (আরটিসি) নেই, সেসব জেলায় আরটিসি গঠন করা হবে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী, বাস, ট্রাকসহ সব গাড়ির বাম্পার অপসারণ করা হয়েছে। যানবাহনের ইকোনমিক লাইফ নির্ধারণে বুয়েটের সহযোগিতায় যে কাজ চলছে, তা দ্রুত শেষ করতে তাগিদ দেয়া হবে। তিনি বলেছেন, রাজধানীর বিভিন্ন বাসের গায়ের রং উঠে গেছে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব বাসের বিউটিফিকেশন করবেন বলে জানিয়েছেন মালিকরা। এই সময়ের মধ্যে চকচকে বাস ঢাকার রাস্তায় নামবে। এমনকি কন্ট্রাক্ট সার্ভিসও বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, হাইওয়ে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার করার সিদ্ধান্ত ছিল। এবার ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। ঢাকা মহানগরীতে সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনকে প্রধান করে বৈঠকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৈঠকে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙা, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন, পুলিশের আইজি মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, ঢাকা উত্তরের প্যানেল মেয়র, পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহ, সড়ক পরিবহন সচিব নজরুল ইসলাম, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব আফরোজা খান, বিআরটিএ’র চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় মহাসড়কগুলোতে ইজিবাইকসহ ছোট-ছোট যানবাহন নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা তৈরি করতে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুল মালেককে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বিআরটি-এর চলমান সেবা কার্যক্রম সকাল ৯-রাত ৯টা (শুক্রবার ব্যতীত) অব্যাহত থাকবে।’ সেতুমন্ত্রী বলেন, জাতীয় মহাসড়কগুলোতে কোন অযান্ত্রিক যানবাহন চলবে না। দেশের মহাসড়কগুলোর কুমিল্লা, সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধাসহ পাঁচটি স্থানে চালক ও হেলপারদের জন্য বিশ্রামাগার করা হবে। কোন গাড়িতে ফ্লাগ স্ট্যান্ড, হুটার, স্টিকার ও মনোগ্রাম লাগানো চলবে না। হাইওয়েতে সর্বোচ্চ গতিসীমা থাকবে ৮০ কিলোমিটার। এর বেশি থাকবে না। এজন্য যন্ত্রপাতি আমদানি ও হাইওয়ে পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, দেশের ২২টি মহাসড়কে ইজিবাইক, নসিমন, করিমন ও অটোরিক্সা দেখাতে পারবেন না। সেখানে এসব মুক্ত করা হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই বছর ঈদের সময় যে তিনটি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনটিই হাইওয়েতে এবং প্রত্যেকটি হাইওয়েতেই ডিভাইডার ছিল। কাজেই সড়কগুলোতে ডিভাইডার দিলেই দুর্ঘটনা কমে যাবে, তা সত্য নয়।’ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন ॥ দেশে চলমান পরিবহন চালক সঙ্কট দূর করতে হাল্কা পরিবহনের (মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, সিএনজি) জন্য লাইসেন্সধারী চালকদের মাঝারি ও মাঝারি পরিবহনের (মাইক্রোবাস-পিকআপ) জন্য লাইসেন্সধারী চালকদের ভারি যানবাহন (বাস-ট্রাক-লরি) চালানোর অনুমতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. কামরুল আহসান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন সংশ্লিষ্টদের জ্ঞাতার্থে সোমবার বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দেশে ভারি ও মধ্যম শ্রেণীর মোটরযানের তুলনায় ভারি ও মধ্যম মানের ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা অপ্রতুলতার কারণে যাত্রী ও পণ্যবাহী মোটরযানের স্বাভাবিক চলাচল অব্যাহত রাখার স্বার্থে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের হাল্কা মোটরযান চালনার বৈধ পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে এবং ওই লাইসেন্সের মেয়াদ ন্যূনতম একবছর পার হয়েছে, তারা মধ্যম শ্রেণীর মোটরযান সংযোজনের জন্য সংশ্লিষ্ট লাইসেন্স কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে পারবেন। একইভাবে মধ্যম শ্রেণীর মোটরযান চালনায় বৈধ পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সধারীরা ভারি মোটরযান সংযোজনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইসেন্সে মধ্যম বা ভারি মোটরযান সংযোজনের ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রচলিত বিধি বিধান অনুসরণ করা হবে। এই নির্দেশনা এই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখ পর্যন্ত সময়ে সর্বনিম্ন একবছরে মেয়াদী হাল্কা মোটরযান চালনার পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা মধ্যম শ্রেণীর মোটরযান এবং সর্বনিম্ন একবছর মেয়াদী মধ্যম মোটরযান চালনার পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা ভারি শ্রেণীর মোটরযান চালাতে পারবেন। ওই সময়সীমার পর এর কার্যকারিতা বাতিল বলে গণ্য হবে। মোটরযান চালানোর ক্ষেত্রে ট্রাফিক আইন, সাইন-সিগন্যাল, বিধি-বিধান ও প্রচলিত সরকারী নিয়ম-নীতি ও নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করার কথাও বলা হয়েছে।
×