ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কেভিন কোহনার্ট-ক্রিস্টেইন কেয়াং

প্রকাশিত: ০৭:১৯, ৩১ জুলাই ২০১৮

কেভিন কোহনার্ট-ক্রিস্টেইন কেয়াং

টাইম ম্যাগাজিনের ভাষায় ওরা- নেক্সট জেনারেশন লিডারস। ওরা প্রত্যেকেই তরুণ এবং সফল। তাদের বেলায় সাফল্যই শেষ কথা নয়। নিজ নিজ অবস্থান থেকে ইতিবাচক চিন্তাধারা নিয়ে তারা উঠে এসেছেন এই তালিকায়। বদলে দিতে চাইছেন পরিচিত পৃথিবী। হয়ে উঠেছেন প্রজন্মের কণ্ঠস্বর। ধারাবাহিকের ষষ্ঠ পর্ব, লিখেছেন- পপি দেবী থাপা কেভিন কোহনার্ট শুরুতে এটা কেউ ভাবতেই পারেনি যে, কেভিন কোহনার্ট হয়ে দাঁড়াবেন জার্মান চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মার্কেলের পথে সবচেয়ে বড় কাঁটা। ঢোলা জিনস পরিহিত জার্মান ট্যাবলয়েডের ভাষায় ‘বেবি ফেস,’ ২৮ বছর বয়সী কেভিন গত বসন্তে প্রায় টলিয়ে দিয়েছিলেন ইউরোপের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতা এঙ্গেলা মার্কেলের গদি। গত নবেম্বরে কেভিন প্রথম আলোচনায় আসেন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এসপিডি) যুব শাখার প্রধান নির্বাচিত হয়ে। এর পরপরই, নির্বাচনী ফলাফল বিপর্যয়ের কারণে এসপিডি বিরোধী বামপন্থীদের নেতৃত্ব দেয়ার প্রতিশ্রুতি ভেঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ সরকারে যোগ দেয়। কেভিন দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। তার ভাষায়, দলীয় নেতৃত্ব নীতিচ্যুত হয়েছে। মার্কেলের জুনিয়র পার্টনার হয়ে ক্ষমতার স্বাদ নেয়ার চেয়ে আমাদের মূলধারা তথা বামপন্থায় ফিরে আসতে হবে। অভিবাসীদের সুরক্ষা, চাকরির অধিকার, সমাজিক কল্যাণের কথা বলতে হবে। এমন ভাবনা থেকেই কেভিন নীতিভ্রষ্ট রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের আহ্বান জানান। দেশজুড়ে সফর করেন, দলীয় সদস্যদের প্রতি- নীতিহীন রাজনীতি প্রত্যাখ্যানের আহ্বান নিয়ে। যদিও শেষ পর্যন্ত এই তরুণ ব্যর্থ হয়েছেন নিজের পক্ষে পর্যাপ্ত দলীয় সমর্থন জোগাতে, ৬৬% দলীয় সদস্য কোয়ালিশন সরকারে থাকার পক্ষে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। কিন্তু তার এই প্রতিবাদ দুটো বিষয়কে আলোয় এনেছে। প্রথমত : ১৯৯০-এর পর থেকে অর্ধেকের বেশি সদস্য হারানো এসপিডির ভবিষ্যত। দ্বিতীয়ত : জার্মান রাজনীতির সার্বিক অবস্থা। দলীয় প্ল্যাটফর্মে হেরে যাবার পর কেভিনের অনেক সমর্থকই তাকে পরামর্শ দিয়েছিল এসপিডি ত্যাগ করে নতুন দল গঠনের। কেভিন তাতে সম্মত হননি। মাত্র ১৫ বছর বয়সে যে দলে তিনি যোগ দিয়েছিলেন, যে দলের জন্য কাজ করতে চান। কেভিনের মতে, প্রশ্নটি নীতিরÑ দলবদলের নয়। ক্রিস্টেইন কেয়াং ফুট ব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে কেয়াং প্রথম চীনের উত্তর-পশ্চিমাংশ সফর করেন ২০১৪-তে, তার দায়িত্ব ছিল স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশ বিপর্যয় রোধে সম্পৃক্ত করা। শানজি প্রদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে নদী দূষণের কারণে বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট দেখা দেয়, স্থানীয়দের সহায়তায় তিনি দূষণের উৎস খুঁজে বের করে তা নিয়ন্ত্রণ ও বর্জ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করেন। তার পিতৃভূমির মানুষের ভাগ্য বদলে দেয়া এমন অসংখ্য বিষয় নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তার এক বছর অবস্থানের মেয়াদকাল বেড়ে দাঁড়ায় চার বছর। পরিবেশ দূষণ, স্বাস্থ্য সুরক্ষার মতো বিষয়গুলোতে তিনি চায়নার সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও মার্কিন গবেষকদের মধ্যে সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করেন। কাজ করেছেন তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে। চায়নায় শিশুদের চশমা ও মায়েদের পুষ্টিকর খাবার প্রদানে কাজ করেছেন মার্কিন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। তার সব কাজের উদ্দেশ্যই নিজ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন। তিনি চান সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সমস্যা সমাধানে দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসুক। তার মতে বিষয়টি একটি বা দুটি সমস্যা সমাধানের নয়, তাদের সার্বিক দায়িত্ব নিতে হবে। কেয়াং বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ড্রপবক্সের আইনী শাখার প্রধান হিসেবে কর্মরত। তারপরও প্রান্তিক চায়নার দরিদ্র জনগোষ্ঠী তার ভাবনাজুড়ে সারাক্ষণ। রাত জেগে গবেষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন চায়নার সমস্যা নিয়ে। অবসরে ইউরোপ জুড়ে ঘুরে বেড়ান তাদের কল্যাণে তহবিল গঠনে। কেয়াং হাসির ছলে বলেন, ‘আমার বিনিদ্র রজনী আর অবসর সময়ের বিনিময়ে যদি স্বদেশের জন্য কিছু করতে পারি তবে মন্দ কী।’
×