ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সংবাদ সম্মেলনে নিখোঁজ বলে দাবি তারেকের বাবার

‘আমি তাকে বলতাম চাকরি এমনি হবে আন্দোলন লাগবে না’

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৭ জুলাই ২০১৮

 ‘আমি তাকে বলতাম চাকরি এমনি হবে আন্দোলন লাগবে না’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা তারেক রহমান নিখোঁজ বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে সন্তানের সন্ধান চেয়ে তারেকের বাবা মোঃ আব্দুল লতিফ এবং মা শাহানা বেগম বলেছেন, আমরা ছেলের সন্ধান চাই। এদিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সহপাঠীর হাত ধরার কারণে অর্থনীতি বিভাগের দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত তিন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক তারেক রহমানের সন্ধান চেয়েছেন তার বাবা মোঃ আব্দুল লতিফ এবং মা শাহানা বেগম। সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল লতিফ বলেন, গত ১৪ জুলাই তারেকের সঙ্গে শেষ কথা হয় আমার মেয়ের। সে ফোনে বলছিল- তাকে সাদা পোশাকে কেউ অনুসরণ করছে ও খুঁজছে। এই কথার পর থেকে আমরা তার মোবাইল বন্ধ পাই। রবিবার মধ্যরাতে শাহবাগ থানায় তারেকের মা জিডি করতে গেলে ডিউটি অফিসার জানান তারা তদন্ত করে জিডি নেবে। আব্দুল লতিফ আরও জানান, তারেক কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করেছে। ছাত্রজীবনে সে কুমিল্লা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল। বিসিএস এর কোচিং করতে সে ঢাকায় আসে। ভর্তি হয় কনফিডেন্স কোচিং সেন্টারে। বাড্ডায় বোনের বাসায় থেকে চাকরির জন্য পড়াশোনা করছিল তারেক। তিনি বলেন, আমি তাকে (তারেক) বলতাম চাকরি এমনিতেই হবে আন্দোলন করা লাগবে না। সে আমাকে বুঝানোর চেষ্টা করত। আমি বলতাম তোমার লেখাপড়া শেষ এখন ক্যাম্পাসের দিকে যাওয়ার দরকার নেই। কথা শুনত না। আমি আমরা ছেলের সন্ধান চাই। তারেকের বাবা আরও বলেন, যদি ডিবি পুলিশ তারেককে আটক করে থাকে তবে তা স্পষ্ট করা হোক। সে যদি অপরাধ করে থাকে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে কিন্তু আমরা তার খোঁজ চাই। ঢাবিতে মানববন্ধন ॥ কোটার পক্ষে মানববন্ধন শেষে ফেরার পথে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে ঢাবিতে মানববন্ধন করেছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ আব্দুল মান্নান বলেন, যারা শিক্ষকের ওপর হামলা করতে পারে, তারা অন্তত মানুষ হতে পারে না। তারা শিক্ষার্থী হওয়ার যোগ্য না। তাদের শুধু একটি কথাই বলব, আবার তোরা মানুষ হ। তিনি শিক্ষকদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বিভাগটির শিক্ষক প্রভাষক লামিয়া মোমেন বলেন, রবিবার মুখোশধারী কিছু ছাত্র যা ঘটিয়েছে, তা এখনও চোখে ভাসছে। এমন দিন আসবে কখনও কল্পনা করিনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনও এ বিষয়ে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তিনি শিক্ষকের ওপর হামলার বিচার দাবি করেন। বিভাগের শিক্ষক মোঃ আলী সিদ্দিকীও মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন। তিন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার ॥ এছাড়া সহপাঠীর হাত ধরার কারণে অর্থনীতি বিভাগের দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত তিন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বনী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বহিষ্কৃত তিন শিক্ষার্থী হলেন- উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সিফাত উল্লাহ সিফাত, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের আলে ইমরান পলাশ ও আধুনিক ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউটের অধীনে ইংলিশ ফর স্পিকারস অব আদার ল্যাংগুয়েজেস বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান। তারা তিনজনই সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী। অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, এ ঘটনায় গঠিত কমিটি তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা যে তথ্য পেয়েছি, তার ভিত্তিতেই ওই তিনজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিকসহ সব বিষয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এদিকে সহপাঠীর হাত ধরার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় মানববন্ধন করেছেন বিভাগটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। হামলাকারীদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে বিভিন্ন দাবি জানিয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে তারা মানববন্ধনে অংশ নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। বিশ্ববিদ্যালয়ই শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। অথচ এ বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষার্থীরা হামলার শিকার হচ্ছে। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা ভিসি স্যারের কাছে গিয়েছিলাম তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে তিনি জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করবেন। আমরা তার প্রমাণ দেখতে চাই। মানববন্ধনে হামলার শিকার দুই শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ ও রোকেয়া গাজী লিনাও উপস্থিত ছিলেন। তারা জানান, অন্যায়ভাবে তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন উল্লেখ করে আসাদ ও লিনা বলেন, হামলার পর থেকে আমরা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমাদের ক্যাম্পাসে আমরা নিরাপদ নই। আমাদের ওপর কেন হামলা করা হলো? আমরা বিচার চাই। মানববন্ধনে ছিলেন অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ শফিকুজ্জামান, অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হানসহ বিভাগের অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধনে দাবি আদায়ে ৭২ ঘণ্টা ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলেন, কোন ক্ষমতার দাপটে একজন শিক্ষার্থী আরেকজন শিক্ষার্থীর পরিচয়পত্র দেখতে চায়? এই সাহস তাদের কে দিল?’
×