ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বর্তমানে একটি মামলার রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়েছে

ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের পর আজ থেকে ফের বিচার শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৮ জুলাই ২০১৮

ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের পর আজ থেকে ফের বিচার শুরু

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ পুনর্গঠিত হবার পর আজ রবিবার থেকে আবার বিচার কাজ শুরু হচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের একজন সদস্যকে ৩০ মে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ দেয়ায় ৩১ মে থেকে ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হচ্ছিল না। অবশেষে ৬৭ দিন পর ৫ জুলাই ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে আইনমন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়েছে। শীঘ্রই রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করা হবে বলে ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জনা গেছে। এটি হবে ৩৩তম রায়। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে আরও ৩৩টি মামলায় ১৩৯ জন রাজাকার বিভিন্ন পর্যায়ে বিচারাধীন রয়েছে। এর আগে আরও ৩২টি রায় প্রদান করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ৩২ মামলায় মোট ৬৯ জন আসামিকে দ- প্রদান করা হয়েছে। যার মধ্যে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়েছে ৪৩ জনকে, আমৃত্যু কারাদ- প্রদান করা হয়েছে ২৪ জনকে। আর একজনকে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান, একজনকে ৯০ বছরের দ-, একজনকে ২০ বছরের কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে ৭টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। একজনকে আমৃত্যু কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে আপীল বিভাগে আপীলে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে ২২টি মামলা। ৫ জুলাই বিচারপতি মোঃ আবু আহমেদ জমাদারকে পুনরায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সদস্য পদে নিয়োগ দেয় সরকার। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর পুনরায় ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার (জেলা জজ) প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস জনকণ্ঠকে বলেন, আজ থেকে ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ পুরোদমে শুরু হবে। বিচারপতিগণ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালূম জনকণ্ঠকে বলেন, অবশেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ পুনর্গঠিত হলো। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের সফলতা কামনা করি। তিনি আরও বলেন, এই পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে পুনরায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ শুরু হলো। আমি আশা করি বর্তমানে যে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য সিএভি (অপেক্ষমান) রাখা হয়েছে ট্রাইব্যুনাল শীঘ্রই রায় ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারণ করবে। চলতি বছরের ২৭ মার্চ মৌলভীবাজারের রাজানগর উপজেলার আকমল আলী তালুকদারসহ চার রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলায় উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়। এ ছাড়াও কয়েকটি মামলার সাক্ষীগ্রহণ সহ বিভিন্ন পর্যায়ে বিচারিক কাজ চলছে। ২৭ মার্চ মৌলভীবাজারের রাজানগর উপজেলার আকমল আলী তালুকদারসহ চার রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলায় উভয পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, গুম, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে। প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ প্রদান করেছেন। আসামিদের মধ্যে আকমল আলী তালুকদার (৭৩) এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকি তিন আসামি মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার আব্দুন নূর তালুকদার ওরফে লাল মিয়া, আনিছ মিয়া ও আব্দুল মোছাব্বির মিয়া পলাতক। ২০১৫ সালের ২৬ নবেম্বর চার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। ওই দিনই রাজনগরের পাঁচগাঁও গ্রাম থেকে আকমল আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মৌলভীবাজার টাউন সিনিয়র কামিল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত এই উপাধ্যক্ষকে পরে ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ চার আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর গত বছরের ৭ মে অভিযোগ গঠন হয়। এর আগে, ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর সর্বশেষ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারপতি মোঃ আনোয়ারুল হক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। দীর্ঘ ৯১ দিনের মাথায় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামকে নিয়োগ দেয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। এরপর ট্রাইব্যুনালের পঞ্চম চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম। অন্যদিকে, ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসেবে হাইকোর্টের বিচারপতি আমির হোসেন ও বিচারক মোঃ আবু আহমেদ জমাদারকে বিচারিক প্যানেলের সদস্য করা হয়। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ পুরাতন হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তখন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিমকে। ২০১২ সালের ২২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরও একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। সেখানে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় হাইকোর্টের বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরকে। ২০১৩ সালের ১৩ অক্টোবর দুই ট্রাইব্যুনালই পুনর্গঠন করা হয়। ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবিরের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় অবসর গ্রহণ করেন। ২০১৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। সদস্য করা হয় বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হককে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান করা হয় বিচারপতি মোঃ ওবায়দুল হাসান শাহীনকে। সদস্য করা হয় বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিঞা ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামকে। পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনালের মামলার সংখ্যা কমে যাওয়ায় ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর একটি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। তখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ নামে একটি ট্রাইব্যুনাল করা হয়। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান করা হয় বিচারপতি আনোয়ারুল হককে। এরপর বিচারপতি আনোয়ারুল হক চিকিৎসাধীন অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মারা যান। তখন বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামকে চেয়ারম্যান করে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়।
×