ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারের কাচিনে চলছে খ্রীস্টানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৭:১২, ১৮ মে ২০১৮

মিয়ানমারের কাচিনে চলছে  খ্রীস্টানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ

মিয়ানমারের তাং সেং যখন তার গ্রামের কাছে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেলেন তখন তিনি ঠিক করলেন তার দাদিকে পিঠে বেঁধে পালিয়ে যাবেন অথবা সাহায্যের জন্য দৌড়াবেন। তাংয়ের দাদি তাকে হত্যা করে ছেড়ে যেতে বলেন। তবে তাং সে অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। খবর গার্ডিয়ানের। তাং তার দাদি সুপনা হকান বুকে নিয়ে বাস্তুচ্যুতদের জন্য তৈরি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন। সেখানে তারা এখনও তাদের পরিবার নিয়ে থাকেন। সুপনা এ জীবনে পাঁচবার সংঘর্ষের হাত থেকে বেঁচে গেছেন। প্রথম যখন তারা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন তারপর তিনি দুই দিন কোন কথা বলতে পারেননি। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সঙ্কট যুদ্ধের সমার্থক হয়ে গেছে। কিন্তু তাং সেং ও তার দাদি রোহিঙ্গা শরণার্থী নয়। তারা দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য কাচিনের অধিবাসী। সেখানে আরেকটি বর্বর হত্যাকা- চলছে কিন্তু তা নিয়ে প্রকাশ্যে তেমন কথাবার্তা হচ্ছে না। মূলত সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের সঙ্গে সরকারী মিলিশিয়া বাহিনীর এই সংঘর্ষ দেখা দিয়েছে। এক শ’ বছর ধরে কাচিনে প্রায় ১৬ লাখ লোক তুলনামূলকভাবে শান্তিতে চীন সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় পাহাড়ী এলাকায় বাস করছে। ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার যখন ব্রিটিশদের কাছে থেকে স্বাধীন হয় তখন তারা সমতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল। ১৯৬২ সালে সামরিক বাহিনী এলাকাটি জোর করে দখলে নেয়ার পর থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। এরপর কাচিন এলাকা মুক্ত করতে কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (কেআইএ) গঠিত হয়। ২০১৬ সালে যখন আউং সান সুচি ক্ষমতাসীন হন তখন কাচিনবাসী আশা করেছিল সুচি হয়ত সেখানকার সংঘাতময় পরিস্থিতির অবসান ঘটাবেন। মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যা হলো তাই হয়েছে উত্তরাঞ্চলের কাচিনদের সঙ্গে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। সুচি বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করার আহ্বান জানায়। যেটি দেশটির আধা-বেসামরিক সরকারের মধ্যস্ততায় ২০১৫ সালের অক্টোবরে আটটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে কেআইএ অস্ত্র সমর্পণ করেনি। যেজন্য কাচিন গ্রামে সামরিক বাহিনী বোমা হামলা শুরু করে। মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ইয়াংহি লি গত সপ্তাহে বলেন, কাচিন রাজ্যে গত কয়েক সপ্তাহে আমরা যা দেখছি তা পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত এবং তা অবশ্যই দ্রুত বন্ধ করতে হবে। নিরপরাধ বেসামরিক লোকদের সেখানে হত্যা করা হয়েছে। অনেকে আহত হয়েছে। শত শত পরিবার জীবন বাঁচাতে পালিয়ে গেছে। কাচিনের পার্লামেন্ট সদস্য জা সেং হকান মারান বলেন, আজ সব নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর লোকদের বেঁচে থাকা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। তারা এখন একসঙ্গে তাদের ভূমি ও মানবাধিকার রক্ষার চেষ্টা করছে। মিয়ানমারের ফরটিফাই রাইটস গ্রুপের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ডেভিড বাউলক বলেন, মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো একমত যে, মিয়ানমারের শান্তি প্রক্রিয়া সামরিক বাহিনীর বন্দুকের নলের ওপর নির্ভর করছে। এটা নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষকে আরও উস্কে দিচ্ছে। কাচিনে হিংসাত্মক পরিস্থিতি আরও অবনতি হচ্ছে। এপ্রিল থেকে সেখানে ছয় হাজার আট শ’র বেশি গ্রামবাসীর ওপর মর্টার ও ভারি অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়ে জোর করে উচ্ছেদ করা হয়েছে। যা গত কয়েক দশকে বাস্তুচ্যুত হওয়া এক লাখ ৩০ হাজার লোকের সংখ্যার সঙ্গে যুক্ত করেছে।
×