ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজালালের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট ‘রেডলাইন’

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৯ মে ২০১৮

শাহজালালের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট ‘রেডলাইন’

আজাদ সুলায়মান ॥ বহুল আলোচিত ‘রেডলাইন’ চলে যাওয়ার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিকঠাক চলছে কিনা- তা পর্যবেক্ষণ করে গেছে যুক্তরাজ্যের ডিএফটির উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল। দলটি ঢাকায় অবস্থান করে বিমানবন্দরের প্রতিটি পয়েন্টে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সূক্ষ্ম ও তীক্ষœ নজরদারি করেছে নিরাপত্তা ব্যবস্থার। এতে তারা যা প্রত্যক্ষ করেছেন, তা মোটামুটি সন্তোষজনক হওয়ায় এবারের যাত্রায় উতরে গেছে সিভিল এভিয়েশান। ডিএফটির ভাষায়Ñ প্রাথমিক পরিদর্শনে শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উত্তীর্ণ। এটা অব্যাহত রাখার ওপর জোর পরামর্শ দিয়ে প্রতিনিধিদল বলেছেÑ পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক ভাল। এবারের পরিদর্শনে উতরে গেছে সিভিল এভিয়েশন। এটা ধরে রাখতে হবে এবং আরও ভাল করার সুযোগ রয়েছে। ছয় মাস পর একই প্রক্রিয়ায় আবারও পরিদর্শনে আসবে এই টিম। জানা গেছে, গত ১৮ থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্টের (ডিএফটি) তিন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ স্যামুয়েল, নাকিব আলি ও স্যামসং ঢাকায় আসেন। পূর্ব নির্ধারিত এ পর্যবেক্ষক দলটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের প্রবেশমুখ, ভেতরের স্ক্যানার সিস্টেম, চেকইন কাউন্টার, এপ্রোন, কার্গো ও চারদেয়ালের সীমান্ত এলাকার প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা পয়েন্ট পরিদর্শন করেন। তাদের যেখানেই সন্দেহ হয়েছে সেখানেই গেছেন। বিশেষ করে ‘রেডলাইন’ গত মার্চে চলে যাওয়ায় তাদের প্রশিক্ষিত নিরাপত্তাকর্মীরা কতটুকু দক্ষতা ও নির্ভরযোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সক্ষম সেটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করাই ছিল প্রতিনিধিদলের মিশন। জানা গেছে, প্রথম দিনেই দলটি বিমানবন্দরের প্রবেশমুখে কিভাবে লাগেজ ব্যাগেজ নিয়ে যাত্রীরা প্রবেশ করেন কীভাবে চেকইন কাউন্টারে তাদের টিকেট পাসপোর্ট দেখা হয়-লাগেজে ট্যাগ লাগিয়ে কিভাবে বেল্টে ঠেলে দেয়া হয়, কিভাবে হোল্ড ব্যাগেজে স্ক্যান করা হয়, তা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে প্র্রত্যক্ষ করে। ১ নং রো তে দাঁড়িয়ে কাজটি ঠিক আছে বলে তাৎক্ষণিক মন্তব্য করেন তারা। চেকইন কাউন্টার থেকে তারা যান পার্কিং করা এয়ারক্রাফটের ভেতরে কীভাবে পরিষ্কার ও নিরাপত্তা পরিদর্শন করা হয় সেটা তদারিক করেন। তাদের সামনেই বিমানের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীরা কাজ করে দেখান। এ কাজের মানও তাদের মনপুত হয়েছে বলে স্বীকার করেন। এরপর পর্যবেক্ষক দলটি শাহজালালের ৮নং গেটে গিয়ে দীর্ঘ সময় নজরদারি করেন কিভাবে গাড়ি স্ক্যানিং করা হয়-কতটা নিখুঁতভাবে কর্মচারী-কর্মকর্তাদের চেক করে ভেতরে প্রবেশ ও বের করানো হয়। প্রতিটি গাড়ি প্রবেশমুখেই এখানে আর্চওয়ে দিয়ে পরীক্ষা করা ও ডকুমেন্টেশান পদ্ধতিও তাদের কাছে আন্তর্জাতিক মানদ-ের বলে প্রতীয়মান হয়। শাহজালালের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কাজি ইকবাল করিম জানান, ডিএফটি প্রতিনিধিরা কার্গো রফতানি হাউসের প্রতিটি সেকশনে গিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। তারা দেখতে চান লাগেজ লোড আনলোড করার কৌশল, ইডিএস, ডুয়েল মোড এক্সরে এবং আরএ-৩ এরিয়ায় যার যার ডিউটি দক্ষতার সঙ্গে পালন করছে কিনা। এগুলোও তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলেই স্বীকার করেন। বোর্ডিং ব্রিজ এরিয়াতে গিয়েও প্রতিনিধিদলটি কজন যাত্রীর হ্যান্ডলাগেজ ও দেহ তল্লাশি প্রত্যক্ষ করেন। জানা গেছেÑ সবশেষে বিমানবন্দরের চারপাশের পেরুমিটার (সীমানা দেয়াল) পরিদর্শন করেন তারা। কোথাও কোন ত্রুটি আছে কিনা এমনটি জানতে চাওয়া হয় সিভিল এভিয়েশনের পক্ষ থেকে। এটাও মোটামুটি নিরাপদ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন তারা। জানা গেছে, এ বারের পরিদর্শনে সব কিছু ঠিকঠাক চলছে বলে তারা মন্তব্য করলেও ছোট দুটো পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। সিসিটিভি রুমে গিয়ে তারা ৭ দিন আগের ফুটেজ বের করা এবং সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করার পদ্ধতি দেখতে চান। এক্ষেত্রে অপারেটরের কাজে খুব ধীরগতি পরিলক্ষিত হলে এটা আরও দক্ষতার সঙ্গে করার পরামর্শ দেন তারা। এছাড়া বোর্ডি ব্রিজে একজন যাত্রীর দেহ তল্লাশিতে কিছুটা ত্রুটি ধরা পড়ায় তা আরও উন্নতি করার পরামশ দেন। এ দুটো ত্রুটি ছাড়া বাকি সবই সন্তোষজনক হওয়ায় এ বারের পরিদর্শনে সিভিল এভিয়েশন সঠিক পথেই রয়েছে বলে পাস মার্ক দেয়া হয়। এ বিষয়ে এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কাজের মানোন্নয়নের কোন শেষ মাত্রা নেই। এটা প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটি ক্ষেত্রে ভাল করার মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ীই শাহজালালে নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর নজরদারি চলছে। বিশেষ করে কার্গোর অবস্থা আগে কি ছিল আর এখন কি হয়েছে তার পার্থক্য চোখে না দেখলে শুধু লিখে বুঝানো যাবে না। রেডলাইন আমাদের জনবলকে সেভাবেই প্রশিক্ষণ দিয়ে গেছে। তারা চলে যাওয়ার পরও এখন দক্ষতার সঙ্গেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে। নিরাপত্তা নিয়ে বিন্দুুমাত্র আপোস করা বা ছাড় দেয়ার কোন অবকাশ নেই। এটা ধরে রাখাটাই এখন অনেক বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছি। কারণ বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশ্বমানের বলা চলে। এটা দিন দিনই ভাল করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই বডি স্ক্যানার সংযোজনের প্রক্রিয়া চলছে।
×