ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

হিসাব কষেই বিজয়ের বন্দরে পৌঁছাতে চান খালেক-মঞ্জু

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৮ মে ২০১৮

হিসাব কষেই বিজয়ের বন্দরে পৌঁছাতে চান খালেক-মঞ্জু

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ অতীতের নির্বাচনে ভোটের হিসাব কষেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক ও বিএনপি মনোনীত ২০ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। অতীতে কেসিসি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয়নি। এবার মেয়র পদে এই দুই প্রার্থী দলীয় প্রতীক নৌকা ও ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদে আরও তিন প্রার্থী থাকলেও মূল লড়াই হবে এই দুই প্রার্থীর মধ্যে, এটা প্রায় নিশ্চিত। আর এই দুই প্রার্থী অতীতের সংসদ নির্বাচন এবং সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটের ফল, পকেট ভোট, বস্তিবাসীর ভোট, নতুন ভোটার সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে হিসাব কষেই নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটারদের পক্ষে টানতে প্রার্থী ও তাদের নেতারা নানা কৌশল অবলম্বন করছেন। কর্মীবাহিনী প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সংসদীয় আসন দুটি। এর মধ্যে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) খুলনা সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা নিয়ে খুলনা-২ এবং খালিশপুর, দৌলতপুর থানার পুরো অংশ ও খানজাহান আলী থানার অংশবিশেষ নিয়ে খুলনা-৩ আসন। এবার খুলনা-২ আসনের কিছু অংশ এবং খুলনা-৩ আসনের অংশবিশেষ কেএমপিতে নতুন করে যুক্ত হওয়ায় লবণচরা, হরিণটানা ও আড়ংঘাটা থানার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তবে তারা সিটি কর্পোরেশন এলাকার ভোটার। অতীতে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে খুলনা সদর আসনে ১৯৭৩ সালের পর ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় পায়। যদিও ওই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এ আসন থেকে বিএনপি বিজয়ী হয়েছে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে মোট চারবার। অপরদিকে খুলনা-৩ আসনে ১৯৭৩, ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে মোট চারবার আওয়ামী লীগের নৌকা প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। আর বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হন ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে। ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিল মুসলিম লীগের প্রার্থী। অতীতে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচন ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ভোট পর্যালোচনা করে প্রধান দুই প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক নৌকা প্রতীক নিয়ে এবং নজরুল ইসলাম মঞ্জু ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন। অতীতে কোন্ প্রার্থী কোন্ এলাকায় কম ভোট পেয়েছেন, কেন কম পেয়েছেন ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন তারা। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত কেসিসি নির্বাচনে দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকায় আওয়ামী লীগের মহানগর সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক সংসদীয় অসন খুলনা- ২ এলাকার প্রয়োজনীয় ভোটার টানতে সক্ষম হওয়ায় এবং খুলনা-৩ আসন এলাকা থেকে বেশি ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০১৩ সালের নির্বাচনে তিনি ৬২ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনির কাছে হার মানেন। ওই নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হতে না পারায় পরাজয় মেনে নিতে হয় বলে দলের ভেতরে ও বাইরে সমালোচনা হয়। আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠিতব্য কেসিসি নির্বাচনে জয়লাভের লক্ষ্যে কোমর বেধে নেমেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক। তার দলের নেতাকর্মী ও সহযোগী সংগঠন, আওয়ামী লীগের সমর্থক বিভিন্ন পর্যায়ের পেশাজীবীরা, ১৪ দল ও জাতীয় পার্টি-জেপির নেতারাও নৌকার প্রচারে সরব রয়েছেন। আগে যে জায়গাগুলোতে ঘাটতি ছিল তা নিরসন করে পূর্বে পিছিয়ে থাকা ভোটারদের সমর্থন আদায়ে বার বার প্রার্থী-কর্মীরা ছুটে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ অনেক নেতা মন্ত্রী ও এমপি পদে থাকায় নির্বাচনী আচরণ বিধি অনুযায়ী তারা এ নির্বাচনে প্রচারে অংশ নিতে পারছেন না। তবে এর বাইরে থাকা আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় অনেক নেতা খুলনায় আসা-যাওয়ার ওপর আছেন। তারা নৌকার পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। অপরদিকে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের চেয়ার নিজেদের দখলে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের অভ্যন্তরে যে গ্রুপিং কোন্দল ছিল তা নিরসন হয়েছে বলে প্রার্থী ও তার ঘনিষ্টরা দাবি করলেও পুরোপুরি নিরসন হয়নি এমনটিই বলছেন মঞ্জু বিরোধী গ্রুপের এক নেতা। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা বলায় তারা বিরোধিতা করছেন না। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তাতে একসঙ্গে কাজ করা যায় না। আপাতত আগুন ছাইচাপা দেয়া হয়েছে। এদিকে বিএনপি প্রার্থীর প্রচারে মঞ্জুর সঙ্গে জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট এসএম শফিুকুল আলম মনা ও তার অনুসারীদের যে দূরত্ব ছিল তা নিরসন করে এক সঙ্গে নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। এই দলের আরও দুটো গ্রুপ রয়েছে। নির্বাচনী কাজে তাদের সরব উপস্থিতি এখনও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তবে মঞ্জুর প্রচারে নগর ও জেলা বিএনপি এবং সহযোগী সংগঠন ও ২০ দলের অনেক নেতাকর্মী গণসংযোগসহ বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছেন। বিএনপির অনেক কেন্দ্রীয় নেতা খুলনায় অবস্থান নিয়ে ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে গণসংযোগ করছেন, পথসভায় বক্তব্য রাখছেন। বিএনপির মিষ্টি কথায় কান দেবেন না-খালেক ॥ কেসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার খালেক সোমবার নগরীর ২৩ ও ২৪নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ ও একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি বিএনপির মন ভোলানো মিষ্টি কথায় কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, উন্নয়নের স্বার্থে নগরবাসী আজ নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনে অধিকাংশ সময় বিএনপির মেয়র থাকলেও নগরীতে দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন হয়নি। বরং সিটি কর্পোরেশনকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করা হয়েছিল। আমি মাত্র ৫ বছর দায়িত্ব পেয়ে কেসিসিকে দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিলাম। নগরীর রাস্তাঘাট সংস্কার ও প্রশস্তকরণসহ দৃশ্যমান অসংখ্য উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করেছি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে- মঞ্জু ॥ কেসিসি নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু সোমবার নগরীর দৌলতপুর থানার ৬ ও ৪ নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেন। এ সময় তিনি বলেন, মাদকের মরণ নেশায় যুব সমাজ ধ্বংসের পথে ধাবিত হচ্ছে। মাদক সমাজকে নানাভাবে কলুষিত করে বিভিন্ন সঙ্কটের জন্ম দিচ্ছে। এই শহরে কারা মাদক বিক্রি বা ব্যবসা করে, কারা তাদের গডফাদার, কারা তাদের লভ্যাংশভোগী তা সবার জানা। তিনি ধানের শীষে ভোট প্রদানের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ১৫ মে জনগণের রায়ে মেয়র নির্বাচিত হতে পারলে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সকাল ৮ টায় ৬ নং ওয়ার্ডের রনি ভিলা থেকে গণসংযোগ শুরু করেন মেয়র প্রার্থী মঞ্জু। এরপর কবির বটতলা, শাহপাড়া, মজুমদারপাড়া, ফকিরপাড়া, আফিলউদ্দিন স্কুল, সেভ এ্যান্ড সেফ এলাকায় গণসংযোগ করেন। এরপর ৪ নং ওয়ার্ডের চনুর বটতলা, দেয়ানা দক্ষিণপাড়া, মোড়লপাড়া, বন্দপাড়া, আসাদের মোড় হয়ে দুপুরে পাখির মোড়ে গণসংযোগ শেষ করেন। খুলনার উন্নয়নে নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান বিএফইউজে সভাপতির ॥ বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল আসন্ন খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে খুলনা মহানগরীর সুষম উন্নয়নের স্বার্থে তালুকদার আব্দুল খালেকের মতো একজন সৎ, কর্মঠ ও নির্লোভ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষকে সমর্থন দেয়ায় সচেতন সাংবাদিক সমাজকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সাংবাদিক নেতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার স্মৃতিবিজড়িত খুলনার সামগ্রিক উন্নয়নে নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি সোমবার বেলা ১১টায় নগরীতে সাংবাদিক সমাজের প্রচারাভিযানে অংশ নিয়ে ভোটারদের উদ্দেশে এ কথা বলেন। ভোট নিয়ে যে কোন চক্রান্ত প্রতিহত করতে হবে-ডাঃ জাহিদ ॥ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, খুলনায় বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরাই শুধু ঐক্যবদ্ধ নন, এই নগরীর ভোটাররাও ১৫ মের নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য স্বতঃস্ফূর্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। তারা এই জালিম সরকারের অপশাসনের জবাব ব্যালটের মাধ্যমে দিতে চায়। এই ভোট নিয়ে শাসক দলের যে কোন চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যে কোন চক্রান্ত প্রতিহত করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। সোমবার খুলনার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পক্ষে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণকালে পথসভায় এ আহ্বান জানান।
×