ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে ঢাকা পৌঁছাবেন

প্রকাশিত: ০৮:১৮, ২৩ এপ্রিল ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে ঢাকা পৌঁছাবেন

উত্তম চক্রবর্তী, লন্ডন থেকে ॥ জাতিসংঘের পর কমনওয়েলথ সম্মেলনেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে সদস্যভুক্ত ৫৩ দেশের পূর্ণ সমর্থন আদায় করে ঢাকার উদ্দেশে লন্ডন ত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে সাতটার দিকে (বাংলাদেশ সময় রাত বারোটা) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২০২ ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে লন্ডনের হিথরো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফর সঙ্গীরা। আজ সোমবার সকালে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন প্রধানমন্ত্রী। লন্ডন ত্যাগের আগে হোটেলের সামনে এবং বিমানবন্দরে বিপুল সংখ্যক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান। এর আগে সৌদি আরবে গাল্ফশিল্ড ওয়ানের সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ৬ দিনের সফরে গত সোমবার মধ্যে রাতে লন্ডনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। দু’দিনব্যাপী কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান ছাড়াও তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসহ ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে সহ বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতে মিলিত হন। এবারের কমনওয়েলথ সম্মেলনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন ও সফলতা হলো রেহিঙ্গা ইস্যুতে কমনওয়েলথ রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের ঐক্যমতে নিয়ে আসা এবং তাদের পূর্ণ সমর্থন আদায় করা। জাতিসংঘের মতো কমনওয়েলথ সম্মেলনেও নিপীড়িত-নির্যাতিন রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রথম থেকেই সোচ্চার ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্ট্রিন ট্রুডোসহ বড় বড় দেশগুলোর নেতারাও রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের রাষ্ট্রনায়কোচিত পদক্ষেপ এবং বিশাল পরিমাণ উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীকে শুধুমাত্র মানবিক কারণে দেশটিতে আশ্রয় প্রদানের বিষয়ে প্রশংসায় ছিলেন পঞ্চমুখ। একইসঙ্গে এ ইস্যুতে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের পাশে থাকার ঘোষণা দেন। শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম কর্ম অধিবেশনেই প্রধানমন্ত্রী হাসিনা তাঁর বক্তব্যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাঁর দেশের অবস্থান এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তির পরও মিয়ানমার সরকার তাদের বিপুল পরিমাণ এই জনগোষ্ঠীকে ফেরত নিতে গড়িমসির বিষয়টিও কমনওয়েলথভুক্ত নেতাদের সামনে তুলে ধরে এ বিষয়ে সদস্যভুক্ত দেশগুলোকে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো এবং মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির উদাত্ত আহ্বান জানান। সমাপনী দিনে অর্থাৎ গত শুক্রবার সন্ধ্যায় গৃহীত কমনওয়েলথ সম্মেলনে ঐক্যমতের ভিত্তিতে গৃহীত লন্ডন ঘোষণার ৫০ নম্বর অনুচ্ছেদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকার ঘোষণা দেন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা। গৃহীত যৌথ ঘোষণায় মিয়ামনারে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহারে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী অপরাধীদের স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। একইসঙ্গে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করারও তাগিদ দেয় কমনওয়েলথ। শুধু কমনওয়েলথ সম্মেলনই নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও রোহিঙ্গা ইস্যুটি উঠে আসে। দ্বিপাক্ষিক এ বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ব্রিফিংকালে সাংবাদিকদের জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত তার পূর্বের অবস্থান থেকে অনেক দূর সরে এসেছে। দেশটি বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনেও সহযোগিতা করে আসছে। এই দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে বৈঠকে বহুল আলোচিত তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। শেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্মদিনের পার্টিতেও যোগ দেন। এ দিকে লন্ডনে বিএনপির হাতেগোনা কয়েক নেতাকর্মীর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের ওপর হামলার চেষ্টা এবং সবশেষ সফরে আসা একাত্তর টেলিভিশনের ক্যামেরা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ব্রিটেন প্রবাসী বাঙালীদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। শনিবার যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে পালিয়ে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানকে দেশে ফেরাতে দেশটির সরকারের সঙ্গে কথা বলেছেন। ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, দেশে থাকতেও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করেছে, এখন লন্ডনে বসেও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও ষড়যন্ত্র করছে। তবে যেভাবেই হোক তাকে (তারেক রহমান) আমরা দেশে ফেরত আনবই। লন্ডন থেকে ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে হোটেল ক্লারিজে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে তাঁর হোটেল স্যুটে সৌজন্য সাক্ষাত দেন। এ সময় তাদের মধ্যে রাজনীতি, আগামী নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে কথা হয়।
×