ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নববর্ষের কার্ডে বাঙালিয়ানা

কচুরিপানার কাগজ পত্র-পল্লবে তৈরি, চাহিদা কমেনি...

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১০ এপ্রিল ২০১৮

কচুরিপানার কাগজ পত্র-পল্লবে তৈরি, চাহিদা কমেনি...

খোকন আহম্মেদ হীরা ॥ আধুনিক যুগে মোবাইল ফোনের খুদে বার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা পাঠানোর কারণে বর্তমানে প্রায় হারিয়েই যাচ্ছে কাগজে ছাপা শুভেচ্ছা কার্ড। শুধু মোবাইল নয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক কিংবা ই-মেইলেও পাঠানো হচ্ছে এ শুভেচ্ছা বার্তা। ইতোমধ্যে অনেকেই অগ্রিম শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানোর কাজ সেরে ফেলছেন। বাঙালীর সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক লোকজ উৎসব পহেলা বৈশাখ। এটি জাতির হাজার বছরের ঐতিহ্যের প্রধান অনুষঙ্গ। নানা আয়োজনে এ দেশের মানুষ মেতে ওঠে বৈশাখকে কেন্দ্র করে। আগেকার দিনে পহেলা বৈশাখে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য একে অপরকে বিনিময় করত নানা ধরনের কার্ড বা শুভেচ্ছা বার্তা- যা বর্তমানে বিলীন হওয়ার পথে। কার্ড ব্যবসায় জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকরা জানান, দাওয়াতের পর্বটি এখন মোবাইলের খুদে বার্তার মাধ্যমেই সেরে নেয়া হয়। এখন আর আগের মতো বৈশাখের কার্ড বিক্রি হয় না। তারা আরও জানান, সাত থেকে আট বছর আগেও প্রেমিক-প্রেমিকারা বৈশাখের শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য কার্ড কিনতে আসতেন। পুরনো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালেদা নাছরিন। তিনি গত এক মাস আগে আগৈলঝাড়া উপজেলার বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি (এমসিসি) পার্টনার সংস্থা কালুরপাড় এলাকার বির্বতন এন্টারপ্রাইজে সশরীরে উপস্থিত হয়ে সম্পূর্ণ বাঙালীয়ানায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য পাঁচ শতাধিক কার্ড তৈরির অর্ডার দিয়ে আসেন। ওই কার্ডগুলো কচুরিপানার কাগজ, ঘাস, ফুলের পাপড়ি ও বৃক্ষের পাতা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। বাংলা নতুন বছরের ‘নববর্ষের’ কার্ড দিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি, ই-মেইল, ফেসবুক অথবা মুঠোফোনের খুদে বার্তা (এসএমএস)’র যুগে নববর্ষের কার্ড দিয়ে ব্যতিক্রমধর্মী এ আমন্ত্রণের বিষয়টি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কচুরিপানার কাগজ, ঘাস ও ফুলের পাপড়ি দিয়ে নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় এসব কার্ড তৈরি করা হয়েছে। কার্ডের ভেতরের আমন্ত্রণপত্রটি লেখা হয়েছে বৃক্ষের পাতার ওপর। খালেদা নাছরিন বলেন, পুরোনো দিনের দুঃখ-স্মৃতি মুছে ফেলে প্রতিটি বাঙালী যেন নতুন স্বপ্ন ও আশা নিয়ে নববর্ষে যাত্রা শুরু করেন। নববর্ষ এগিয়ে এলেই তাকে স্বাগত জানাতে আমরা প্রথম দিনটিতে পান্তা-ইলিশ খাই। মেতে উঠি দেশীয় আরও নানা খাবার এবং বাদ্য-বাজনায়। তেমনি প্রিয়জনকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে দিয়ে থাকি নানা উপহার। তিনি আরও বলেন, যুগে ই-মেইল, ফেসবুক অথবা মোবাইল ফোনের খুদে বার্তা (এসএমএস) দিয়ে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানো কিংবা আমন্ত্রণের বিষয়টি অনেকটাই আন্তরিকতার ঘাটতি বলে মনে হওয়ায় বিশেষ কার্ড দিয়ে আমন্ত্রণ জানানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফেসবুক টুইটারের যুগেও অনেকেই নববর্ষের শুভেচ্ছা হিসেবে কার্ড পছন্দ করেন। আর সেটা যদি হয় হাতে তৈরি বিশেষ কার্ড তবে তো কথাই নেই। তাই প্রথমবারের মতো নানা বৈচিত্র্যের নক্সা ছবি রাঙিয়ে দিয়ে বাহারি নববর্ষের কার্ড তৈরি করানো হয়েছে। নতুন বছরে প্রিয়জনদের কার্ড দেয়া যেন এক অমূল্য প্রাপ্তি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
×