ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় হঠাৎ বড় ধস

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ৪ এপ্রিল ২০১৮

মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় হঠাৎ বড় ধস

রহিম শেখ ॥ দ্রুত অর্থ স্থানান্তরের জনপ্রিয় মাধ্যম মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় হঠাৎ বড় ধরনের ধস নেমেছে। তবে আগের মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে ৩ শতাংশের কিছু বেশি। কিন্তু মোট লেনদেন থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ রেমিটেন্সের অর্থ স্থানান্তর, নগদ টাকা উত্তোলন ও জমা, বেতন-ভাতা প্রদান, ব্যবসায়িক লেনদেন এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। বর্তমানে মোট ১৮ ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত আছে। সর্বশেষ তথ্য মতে, ফেব্রুয়ারি মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মোট লেনদেন হয়েছে ২৮ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। আগের মাসের তুলনায় ৬ শতাংশের মতো লেনদেন কমেছে ফেব্রুয়ারিতে। তবে দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশের মতো। ফেব্রুয়ারি মাসে দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৫ কোটি টাকা। এ সময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মোট এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৭৩৪। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আগের মাসের তুলনায় কম এসেছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে ক্যাশ ইন ট্রানজেকশন বা নগদ টাকা জমা হয়েছে ১১ হাজার ৯৬৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আগের মাসের তুলনায় কমেছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এ সময়ে ক্যাশ আউট ট্রানজেকশন বা নগদ টাকা উত্তোলনও কমেছে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি মাসে পিটুপি ট্রানজেকশন বা ব্যক্তিগত গ্রাহক থেকে অন্য গ্রাহকের হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ৪২৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ওই মাসে বেতন পরিশোধ বাবদ লেনদেন হয়েছে ৪৫৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আগের মাস জানুয়ারিতে হয়েছিল ৪৭৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। সে হিসেবে এই সেবা কমেছে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন বিল পরিশোধ করা হয়েছে ১৮৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। জানুয়ারি মাসে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নগদ আর্থিক লেনদেনে হয়েছে ১৪৩ কোটি ৯০ লাখ। ফেব্রুয়ারি মাসে এসে এই লেনদেন কমেছে প্রায় ২০ শতাংশের মতো। টাকার অঙ্কে ১১৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে লেনদেন কমেছে সরকারী বিভিন্ন দফতরের নগদ লেনদেনে। ওই মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করা হয়েছে ৭৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আগের মাসের তুলনায় ৩০ দশমিক ৮ শতাংশের মতো লেনদেন কমেছে। সর্বশেষ হিসাব মতে, দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের গ্রাহক সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৪৫ হাজার। ফেব্রুয়ারি শেষে সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৮ লাখ ৩১ হাজার। জানুয়ারি মাসে সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৭ লাখ ১৩ হাজার। এক মাসের ব্যবধানে সংক্রিয় হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ বা শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী, কোন এ্যাকাউন্ট থেকে টানা তিন মাস কোন ধরনের লেনদেন না হলে তা ইন-এ্যাকটিভ বা নিষ্ক্রিয় এ্যাকাউন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। আর তিন মাসের মধ্যে একটি লেনদেন হলেই তা সক্রিয় হিসেবে বিবেচিত। অবশ্য বড় কোন অনিয়ম না পাওয়া গেলে এ্যাকাউন্ট বন্ধ করে না ব্যাংক। কিন্তু সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় অপব্যবহার ঠেকাতে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে হিসাব খোলা ও পরিচালনা এবং লেনদেনে আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়, এখন একজন ব্যক্তি একটি সিম দিয়ে যেকোন মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় একটি মাত্র হিসাব চালু রাখতে পারবেন। ওই নির্দেশনার পর যাদের একাধিক হিসাব ছিল তা বন্ধ করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, নতুন নির্দেশনার আলোকে মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের তথ্য হালনাগাদ করায় নিষ্ক্রিয় বা বন্ধ হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে। সাময়িক সময়ের জন্য সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা কমলেও ভবিষ্যতের জন্য এটা ভাল দিক বলে তিনি মনে করেন। মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল কাদির জনকণ্ঠকে বলেন, আগে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় একাধিক হিসাব চালু রাখতে পারতেন গ্রাহরা। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি একটি সিম দিয়ে যেকোন মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় একটি মাত্র হিসাব চালু রাখতে পারবেন। নির্দেশনা মোতাবেক মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের তথ্য হালনাগাদ করায় নিষ্ক্রিয় হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে। তিনি বলেন, বন্ধ হিসাবের সংখ্যা বাড়লেও দৈনিক গড় লেনদেন কমেনি। বরং আগের তুলনায় বেড়েছে বলে তিনি জানান।
×