ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাশবনের অবদান

প্রকাশিত: ০৮:০৫, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

কাশবনের অবদান

কেউ কাশবনে গিয়ে কেটে আনছে কাঠি। কেউ বাড়ির উঠানে বসেই শুরু করেছে কাশের কাঠির নিখুঁত বুনন। গ্রামের নারীর একদ- ফুরসত নেই। এরা এই কাঠি নিয়েই নেচে ওঠে। শ্বেতশুভ্র কাশফুলের নাচনে এদের মন ভরে যায়। কাশবনের এই কাঠি গ্রামীণ নারীর রোজগারের পথ দেখিয়েছে। করে তুলেছে স্বাবলম্বী। পাল্টে দিয়েছে ভাগ্য। এই কাঠির তৈরি ডালা, ধামা, ডাবর, শোপিসসহ নানা কারুপণ্য দেশের গ-ি ছাড়িয়ে বিদেশ বিভূঁইয়ে সুনাম কুড়িয়েছে। গৃহস্থ বাড়ির ধান রাখার মাটির ডাবর ও গোলার পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে কাশের কাঠির পরিবেশ সম্মত এই ডাবর। এই কাশবন বগুড়ার যমুনা ও বাঙালী তীরের ধুনট সারিয়াকান্দি সোনাতলা এলাকা এবং চরগ্রামে মানুষের অস্তিত্বের লড়াইয়ে সঙ্গী হয়েছে। একদা কাশবন ছিল প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রতীক। এই কাঠি এখন পথ দেখিয়েছে আয়ের। একবিংশ শতকে দেশে সেই কাঠি গ্রামীণ জীবন মান উন্নত করেছে। বগুড়ার ধুনট উপজেলার মহিপুর গ্রামে কাশের কাঠি দিয়ে নানা ধরনের হস্তশিল্প তৈরির এক কলোনি তৈরি হয়েছে। জুলেখা বেগম জানালেন যমুনা তীরের বিশাল এলাকাজুড়ে বর্তমানে কাশকাঠির চাষ হচ্ছে। একটা সময় প্রকৃতি থেকেই কাশবন তৈরি হয়ে আপনা আপনি বিলীন হয়ে যেত। বর্তমানে নদী তীরের এলাকার লোকজন কাশবন টিকিয়ে রাখে। অনেক কৃষক অর্থকরী কাঠি হিসেবে পাটের মতো কাশ চাষ করে। এই বন থেকে কাশ কাঠি কেটে পাইকারি ও খুচরা দরে বিক্রি করা হয়। যা কিনে নেয় গ্রামের নারীরা। ধুনটের গোসাইবাড়ি, ভা-ারবাড়ি, সারিয়াকান্দির ধরাবর্ষা, বোহাইল, সোনাতলায় বাঙালী নদী তীরের হরিখালি এলাকার অনেক মানুষের জীবিকা এনে দিয়েছে এই কাশ। ধুনটের মহিপুরের সাধনা বেগম জানালেন, স্থানীয় হাট বাজারে কাশ কাঠির তৈরির নানা সামগ্রী বিক্রি করা হয়। এইসব পণ্য ঘরে ঘরে যাওয়ার পর চাহিদা বেড়েছে। বর্তমানে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় শহরের ব্যবসায়ীরা কাশ কাঠির তৈরি নানা পণ্যের অর্ডার দিচ্ছে। এইসব পণ্য বিদেশেও যাচ্ছে। বড় মাঝারি ডালা, ধামা, খাবার টেবিলে ফল ফলাদি রাখার ছোট নকশা করা ডালা, ঘর সাজানোর শোপিস, ঘরের ভিতরের পার্টিশনসহ নানা প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি হচ্ছে কাশ কাঠিতে। সাধনা, জ্যোৎস্না আছিয়া বললেন, বছর চারেক আগে তারা গোসাইবাড়ি থেকে কাশ কেটে এনে নিজেরাই ডালা বানানো শুরু করেন। ওই সময় গৃহস্থ বাড়ির লোকজন ধান রাখার বড় ডাবর বানানো যায় কিনা তা জানতে চায়। পরে কাশের শক্ত কাঠি দিয়ে বড় ডাবর ও ধামা বাননোর পর দশ গাঁয়ের গৃহস্থ ও মাঝারি কৃষক অর্ডার দিলে বানিয়ে দেয়া হয়। ঘর গেরস্থালির জিনিসপত্র তৈরির পাশাপাশি শো পিস বানানো শুরু হলে একটি প্রতিষ্ঠান নারী উন্নয়নে সহায়তা দিতে এগিয়ে আসে। প্রতিষ্ঠানটি নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, ন্যায্য মজুরির ব্যবস্থা, পরিবেশ সচেতনতা, নারী পুরুষ সমতা ইত্যাদি বিষয় কর্মসূচীতে নিয়েছে। এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি মোজাহার আলী বললেন, এই উদ্ভিদ এখন গ্রামীণ জীবন মান উন্নত করেছে। বিশেষ করে নারী উন্নয়নে বড় অবদান রেখেছে এই কাশবন। -সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×