ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার সাজা আদালতের বিষয়, নেতাকর্মীরা শান্ত থাকুন ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

খালেদার সাজা আদালতের বিষয়, নেতাকর্মীরা শান্ত থাকুন ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাজাকে আদালতের বিষয় উল্লেখ করে এর প্রতিক্রিয়ায় দলের নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এটা আদালতের বিষয়। এ নিয়ে উচ্ছ্বাসের কিছু নেই। কারণ এ রায় আদালত দিয়েছে, সরকার নয়। বরং সবাইকে মাথা ঠা-া রেখে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। কেননা বিএনপি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের নামে তারা দেশজুড়ে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়। বৃহস্পতিবার রাতে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। জিয়া অরফানেজ মামলায় খালেদা জিয়ার ৫ বছরের কারাদ-ের রায় নিয়ে বিএনপির নেতাদের বিভিন্ন অভিযোগের জবাব দিতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, রায়ের দিন গতকাল তারা বিশৃঙ্খলা করতে চেয়েছিল কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং দলের নেতাকর্মীরা সতর্ক থাকায় সেটা তেমনভাবে করতে পারেনি। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির দেয়া বিক্ষোভ কর্মসূচীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা বলছেন, এই রায় সরকারের দেয়া। এ বক্তব্যের মাধ্যমে আসলে তারা আদালতকে মানছেন না। এ কর্মসূচী আদালতের বিরুদ্ধে। যদি আদালতকে নাই মানবেন তাহলে আবার আপীল কেন? এখনও হাইকোর্ট, আপীল বিভাগ এবং রিভিউ নিয়ে তিন ধাপে আইনী লড়াই করার সুযোগ আছে। বিএনপি সরকারের আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদও আইনের শাসনকে তোয়াক্কা করেনি মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সেই মওদুদ আহমদ আবার বলছেন, রায় সংবিধানবিরোধী। আসলে এরা সংবিধান, আদালত কিছুই মানেন না। একদিকে তারা ধৈর্য ধরার কথা বলছেন, অন্যদিকে তারা তা-ব করছে। এগুলো অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। তিনি বলেন, বিএনপি রাজনৈতিক কর্মসূচী দিলে আওয়ামী লীগ তা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করবে আর সন্ত্রাস-নাশকতা করলে সেটা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দেখবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি এ রায়কে কেন্দ্র করে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়। কিন্তু সে দুরভিসন্ধি সফল হবে না। সাজার পর খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি নেতারা তো বলছেন যে পারবেন। অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করায় ফখরুল সাহেবদের দুরভিসন্ধি সফল হয়নি। আসলে বিএনপির এমন অবস্থা হয়েছে যে, ল-ভ- করে দে মা লুটেপুটে খাই। তারা ক্ষমতায় থাকতেও লুটে খেয়েছে এখনও তারা খেতে চায়। ওবায়দুল কাদের আগামীতেও দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ভায়োলেন্স (সহিংসতা) হলে তার জবাব দেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাতামাতির কোন প্রয়োজন নেই। রায়ের পরে আরও তিন ধাপ রয়েছে। এরপর হাইকোর্ট, এপিলেট ডিভিশন ও রিভিউ করার সুযোগ রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের এ কে এম এনামুল হক শামীম, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, অসীম কুমার উকিল, দেলোয়ার হোসেন, এস এম কামাল হোসেন, মারুফা আক্তার পপি, মোল্লা মোঃ কাউসার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সারাদেশে সতর্ক প্রহরায় ছিল আওয়ামী লীগ ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার রায় ঘিরে দিনভর ঢাকাসহ সারাদেশে সতর্ক প্রহরায় ছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি ওয়ার্ড, থানা, পাড়া-মহল্লায় সতর্ক অবস্থানে থেকে পুলিশকে সহযোগিতা করেছেন দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। বিএনপি-জামায়াত জোটের কেউ কোন ধরনের নাশকতা চালানোর সুযোগ না পায় সেজন্য অনেক স্থানেই মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিয়েছে সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে একমাত্র মগবাজার এলাকা ছাড়া রাজধানীর কোথাও বিএনপি-জামায়াত জোটের কোন নেতাকর্মীকে মাঠে দেখা যায়নি। এদিকে বৃহস্পতিবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সকাল থেকেই নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিতে থাকেন। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের ভিড় বাড়তে থাকে। মিছিলের ওপর নিষিদ্ধ থাকায় এ সময় যুব মহিলা লীগের সদস্যরা হাতে ব্যানার নিয়ে রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকে। রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ প্রকাশ করে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে পুরো এলাকা মুখরিত করে রাখেন। রায়ের পর পরই ধানম-ির কার্যালয়ে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কাছে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানান আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার সাজার বিষয়টি আওয়ামী লীগ বা বিএনপির বিষয় নয়। এ রায়ে আওয়ামী লীগের সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট হওয়ার বিষয় নয়। এটা সম্পূর্ণ আদালত ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিষয়। তবে রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে কেউ আইনের উর্ধে নন। ঢাকা মহানগরীর কোথাও বিএনপি-জামায়াত জোটের কোন তৎপরতা দেখা না গেলেও আদালতে যাওয়ার পথে মগবাজার এলাকায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর থেকে নানা উস্কানিমূলক স্লোগান দিতে থাকলে সেখানে সতর্ক অবস্থানে থাকা ওয়ার্ড ও থানার নেতারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এ সময় বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের সামান্য ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশ এ্যাকশনে গিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
×