ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মেসি-রোনাল্ডোর বাজিমাত

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭

মেসি-রোনাল্ডোর বাজিমাত

কালের গর্ভে বিলিন হতে চলেছে আরও একটি ইংরেজী বছর। দিনলিপি ফুরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই আলোচনায় উঠে আসছে বছরের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ। এক্ষেত্রে দেশীয় ও বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি, তথ্যপ্রযুক্তি, বিনোদন প্রভৃতি বিষয়ের সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসছে ক্রীড়াঙ্গনও। ২০১৭ সালে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন আলোচনায় থেকেছে প্রায় সব সময়। এ বছর শেষ হয়েছে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব। যেখানে ৬০ বছর পর বাদ পড়েছে ইতালি। ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। শিরোপার বৃত্তপূরণ করেছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি, এক বছরে দুইবার ফিফা বর্ষসেরা হয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, নিজ দেশ আর্জেন্টিনাকে এককভাবে বিশ্বকাপে তুলেছেন লিওনেল মেসি। এ রকম আরও অনেক ঘটনা নিয়ে বছর শেষের এ আয়োজন। রেকর্ড পাঁচবারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির অপবাদ ছিল, জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তেমন কিছুই করতে পারেন না! কে বলেছে পারেন না? নিন্দুকদের মুখে চুনকালি দিয়ে কি দুর্দান্ত ভঙ্গিতেই না নিজ দেশ আর্জেন্টিনাকে পৌঁছে দিয়েছেন ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে। অক্টোবরে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে ইকুয়েডরকে তাদেরই মাঠে ৩-১ গোলে পরাজিত করে আর্জেন্টিনা। তাতেই সব অনিশ্চয়তা আর শঙ্কা দূরে ঠেলে সরাসরি বিশ্বকাপের টিকেট পেয়েছে দিয়াগো ম্যারাডোনার দেশ। কঠিন এই মিশনে দলকে একাই টেনে তুলেছেন জাদুকর মেসি। চোঁখ ধাঁধানো তিন গোলই করেছেন তিনি। অথচ ম্যাচটির আগে ক-ত-তো সমীকরণ ছিল। তাতে সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার আশাটা ছিল ক্ষীণ। কিন্তু মেসির রূপকথার পারফর্মেন্সে সব শঙ্কা কাটিয়ে রাশিয়ার টিকেট পেয়েছে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা। বিদায়ী বছরটা ব্যক্তিগত সাফল্যে ভাস্বর হয়েছেন সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। এক বছরে দুইবার ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার হয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগীজ সুপারস্টার। শুধু তাই নয়, ইউরোপীয় ফুটবলের বর্ষসেরা এ্যাওয়ার্ড ব্যালন ডি’অরও জিতেছেন সি আর সেভেন। এর ফলে ফিফা বর্ষসেরা ও ব্যালন ডি’র দু’টিতেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসিকে ছুঁয়ে ফেলেছেন। দু’জনই এ দুটি এ্যাওয়ার্ড জিতেছেন পাঁচবার করে। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ফিফার ‘দ্য বেস্ট’ অনুষ্ঠানে বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন রোনাল্ডো। মাত্র আট মাসের ব্যবধানে অক্টোবরে আবারও পুরস্কারটি বাজিমাত করেন পর্তুগীজ তারকা। এর আগে ফিফা বর্ষসেরা এ্যাওয়ার্ড দেয়া হতো জানুয়ারি মাসে। তবে এখন থেকে তা দেয়া হবে প্রতিবছরের অক্টোবরে। এ কারণেই গত বছর এই এ্যাওয়ার্ডটা দুইবার হয়েছে। দুইবার ফিফা বর্ষসেরা হওয়ার পর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের আইফেল টাওয়ারে ব্যালন ডি’অর এ্যাওয়ার্ড বাজিমাত করেন রোনাল্ডো। সবমিলিয়ে সাফল্যে ভরপুর বছর অতিবাহিত করেন সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার। সেমিফাইনাল আর ফাইনাল ট্র্যাজেডির দল বলা হয় জার্মানিকে। ফুটবলের যে কোন আসরে সবসময়ই ফেবারিটের তকমা থাকে তাদের গায়ে। ফাইনাল আর সেমিতে হারের লম্বা মিছিলে যোগ না দিলে জার্মানদের বিশ্ব ফুটবলের সেরা দল আপনাকে বলতেই হতো! সেক্ষেত্রে ব্রাজিলের আগে তাদের নামটিই উচ্চারণ করতে হতো। তবে এখন বোধ হয় সেই সময়টি এসে গেছে। সাফল্যে সাম্বা ছন্দের দেশটিকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে ইউরোপের পাওয়ার হাউসরা। জুলাই মাসে প্রথমবারের মতো ফিফা কনফেডারেশন্স কাপ জিতে সে স্বাক্ষরই রেখেছে জোয়াকিম লোর দল। এতে করে সাফল্যের বৃত্ত পূরণও হয়ে গেছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। কেননা এর আগে বৈশ্বিক সব টুর্নামেন্টের ট্রফি জিতলেও কনফেডারেশন্স কাপই শুধু বাকি ছিল। সেটও হয়ে গেছে গেল বছরে। এখন জার্মানদের শোকেসে চারটি বিশ্বকাপ, তিনটি ইউরো ও একটি কনফেডারেশন্স কাপের ট্রফি। এবারের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সবচেয়ে আলোচিত দল আর্জেন্টিনা। দিয়াগো ম্যারাডোনার দেশের ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা হবে কিনা তা নিয়ে শেষ পর্যন্ত ছিল শঙ্কা। নিজেদের শেষ ম্যাচে অধিনায়ক লিওনেল মেসির জাদুকরী পারফর্মেন্সে ভর করে অবশেষে বিশ্বকাপের রঙিন মঞ্চে খেলা নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনা বাদ যেতে যেতে বিশ্বকাপে উঠে এসেছে। তখন পর্যন্ত কেউ ভাবেনি এই যন্ত্রণায় ছটফট করতে হবে ইতালিকে। অবাক করে দিয়ে ইউরোপীয় অঞ্চলের বাছাইপর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে রেকর্ড দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। ১৯৫৮ সালের পর অর্থাৎ ৬০ বছর পর বিশ্বকাপের রঙিন মঞ্চে দেখা যাবে না ইতালিকে। নবেম্বরে প্লে অফে সুইডেনের বিপক্ষে ব্যর্থতার কারণেই এ করুণ পরিণতি। রাশিয়া বিশ্বকাপে যেতে নিজেদের মাঠ মিলানের সান সিরোতে সুইডেনের বিপক্ষে কমপক্ষে দুই গোলের ব্যবধানে জয় প্রয়োজন ছিল জিয়ানলুইজি বুফনের দলের। ১-০ গোলে জিতলেও ম্যাচটা অতিরিক্ত সময়ে গড়াত। কিন্তু জয় দূরে থাক গোলের দেখা পায়নি স্বাগতিকরা। গোলশূন্যভাবে ম্যাচ শেষ করে আজ্জুরিরা। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ১-০ গোলের জয় নিয়ে বিশ্বকাপের টিকেট কাটে সুইডিশরা। আর বিদায়ঘণ্টা বাজে ইতালির। বিশ্বকাপের মূলপর্বে পর পর পাঁচবার (১৯৯৮, ২০০২, ২০০৬, ২০১০, ২০১৪) খেলে রেকর্ডে ভাগ বসান মেক্সিকোর এ্যান্টোনিও কারবাহাল (১৯৫০, ১৯৫৪, ১০৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৬৬) এবং জার্মানির লোথার ম্যাথিউসের (১৯৮২, ১৯৮৬, ১৯৯০, ১৯৯৪ ও ১৯৯৮) সঙ্গে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে টানা ছয় আসরে খেলা একমাত্র ফুটবলার হওয়ার হাতছানি ছিল। ঘোষণাও দিয়ে রেখেছিলেন ২০১৮ বিশ্বকাপ খেলেই অবসর নেবেন। কিন্তু মানুষের সব চাওয়া তো আর পূরণ হয় না। ইতালির ইতিহাসের তো বটেই বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম কিংবদন্তি জিয়ানলুইজি বুফনের শেষ ইচ্ছেটাও পূরণ হয়নি। টানা ছয় বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন তার পূরণ হয়নি। কারণ বুফনের দেশ ইতালি বিশ্বকাপের মূলপর্বের আগেই বাদ পড়েছে। এ কারণে ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে নবেম্বরে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেন ৩৯ বছর বয়সী কিংবদন্তি গোলরক্ষক। বর্ণিল ফুটবল ক্যারিয়ারে প্রায় সবকিছুই জিতেছেন। ২০০৬ সালে স্বপ্নের বিশ্বকাপও জিতেছেন। কিন্তু ২০ বছরের ক্যারিয়ারের শেষটা বুফনকে করতে হয়েছে চোখের জলে। আগে যা হয়নি তাই করে দেখিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। স্প্যানিশ পরাশক্তিরা নিজেদের ক্লাব ইতিহাসের সেরা সাফল্য পেয়েছে বিদায়ী ২০১৭ সালে। ১৬ ডিসেম্বর ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে অনন্য রেকর্ড গড়ে গ্যালাক্টিকোরা। এর ফলে টানা দু’বছর ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে রেকর্ডের অংশীদার হয় ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা।
×