ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মনের হাসপাতাল

বিবলিওথেরাপি-বই পড়ে মনের অসুখ নিরাময়

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭

বিবলিওথেরাপি-বই পড়ে মনের অসুখ নিরাময়

সমুদ্র হক মনের হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা মানুষ নিজেই দিতে পারে। শুধু দরকার চিকিৎসা পদ্ধতি জানা। না-কোন ওষুধ পথ্যের দরকার নেই। কোন ব্যয়ামের দরকার নেই। শুধু দরকার মনের রোগ বুঝে বই পড়া। বলা হয় বিবলিওথেরাপি। বিবলিও অর্থ বই, থেরাপি অর্থ চিকিৎসা পদ্ধতি। প্রাচীন গ্রীকরা মনে করতেন, আত্মার ওষুধ পুস্তক। উন্নত দেশে বিষয়টি নিয়ে বহুবিধ চর্চা ও এই থেরাপি প্রয়োগ হচ্ছে। বাংলাদেশের একটি নগরী বগুড়ায় এক ব্যক্তি দেশে এই প্রথম বিবলিওথেরাপি দিচ্ছেন। এ জন্য কোন বিনিময় নেই। নিজের উদ্যোগে সামাজিক অবক্ষয়গুলো দূর করে দিতে এই পথে পা বাড়িয়েছেন। তার নাম মোঃ রোকনুজ্জামান (৩৮)। বাড়ি নাটোর। স্ত্রী এক মেয়ে এক ছেলে নিয়ে সংসার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) থেকে ২০০৮ সালে তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে ¯স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। ২০১০ সালে তিনি বগুড়া উডবার্ন সরকারী গণগ্রন্থাগারের (সাবেক উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরি) লাইব্রেরিয়ান পদে যোগদান করেন। তিনি বিবলিওথেরাপিস্ট হিসেবে পরিচিতি দেন। দাবি করেন দেশে প্রথম তিনি এই থেরাপি দিচ্ছেন। বিবলিওথেরাপি মূল কথা হলো- ‘টু এ্যাপ্লাই রাইট বুক টু দ্য রাইট পেসেন্ট’। ব্যক্তির মনের রোগ বুঝে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু বই পড়তে দেয়া। রাবিতে অধ্যয়নের সময় তিনি বিবলিওথেরাপি শব্দের সঙ্গে পরিচিত। তিনি অতি আগ্রহী হয়ে একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি বিবলিওথেরাপি সম্পর্কে জ্ঞানচর্চা করতে থাকেন। একই সঙ্গে তিনি লক্ষ্য করেন, দেশের মানুষের বড় একটি অংশ নানা কারণে মানসিক কঠিন চাপ, ধকল, একাকিত্ব, স্বস্তি, অশান্তি, হতাশা, অসুখী থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজছেন। তারা কখনও কোন না রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন। অথচ বিজ্ঞানেই এই ধরনের অসুখ থেকে রক্ষা পাওয়ার বিবলিওথেরাপি আছে। মোঃ রোকনুজ্জামান জানান, বগুড়া উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরিতে যোগদানের পর লক্ষ্য করেন, কয়েকজন শিক্ষার্থী একাকিত্ব বোধ করছেন। তরুণ ও মধ্যবয়সী কয়েকজন অসহায় হয়ে অস্থির আচরণ করছেন। তাদের অসুস্থ মন একটি জায়গায় স্থির হয়ে আছে। এ থেকে বের হয়ে আসতে পারছেন না। দিনে দিনে তারা মানসিক শক্তি ও সাহস হারিয়ে ফেলছেন। সুখবোধ ও প্রশান্তি পাচ্ছেন না। ওইসব মানুষ লাইব্রেরি থেকে যাওয়ার আগে তিনি (মোঃ রোকনুজ্জামান) তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের কথা মনযোগ দিয়ে শোনেন। এই কাউন্সিলিংয়ে ওই ব্যক্তিরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি ওইসব ব্যক্তিদের মনের অবস্থা ও দুর্দশা বুঝে সেই ধরনের বই পড়ার পরামর্শ দেন। এ জন্য তাকে অনেক বই বেছে নিতে হয়। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে যারা লাইব্রেরির সদস্য তাদের মনের অসুখ বুঝে কাউকে পাঁচটি, কাউকে ৭/৮টি বই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পড়া শেষ করে লাইব্রেরিতে জমা দিতে বলেন। এরপর তাদের কাছে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাউন্সিলিংয়ে অগ্রগতি জানতে চান। এতে দেখা যায় ৮০ শতাংশ তাদের জীবনের পূর্বাবস্থায় ফিরে আসতে পেরেছেন। এই বিষয়ে রোকনুজ্জামান বলেন, সমাজের মানুষের মধ্যে কেউ হলফ করে বলতে পারবে না সে সুখী। সুখ আপেক্ষিক বিষয়। বেশিরভগ পরিবারেরর সদস্য নানা কারণে স্ট্রেস (মনের চাপ) নিয়ে থাকেন, যা মনকে অসুস্থ করে দেয়। সভ্যতার বহুমুখী উন্নয়নে মানুষের জ্ঞানভান্ডার ক্রমেই হাজারও তথ্যে ভরে ওঠে। বিবলিওথেরাপির মূল উদ্দেশ্য বই পড়া। বর্তমানে বই বিমুখতার কারণে মনের প্রশান্তি আর থাকতে চাইছে না। ‘হ্যাপিনেস’ বা সুখ বলতে যা বুঝায় তাও কমে যাচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায় অন্তঃসত্ত্বা নারীর সন্তান প্রসবের আগে মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা গ্রাস করে ফেলে। যা ইউটেরাসে বেড়ে ওঠা সন্তানের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
×