ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অবিলম্বে অস্ত্রবিরতির আহ্বান গুতেরেসের

ইয়েমেনে মানবিক সঙ্কট চরমে

প্রকাশিত: ০৩:৩২, ৫ ডিসেম্বর ২০১৭

ইয়েমেনে মানবিক সঙ্কট চরমে

অব্যাহত সৌদি সামরিক অভিযানের মুখে ইয়েমেনে মানবিক সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করছে। এ অবস্থায় দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস। যুদ্ধের ফলে দেশটিতে মারাত্মক খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এএফপি ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট। জাতিসংঘ প্রধান গুতেরেস রবিবার এক বিবৃতিতে ইয়েমেনে য্দ্ধুরত সকল পক্ষকে স্থল ও আকাশ পথে হামলার বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। রাজধানী সানায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ওই বিবৃতিতে তিনি বলেন, ইয়েমেনে যুদ্ধের ফলে বহু লোক আহত ও নিহত হয়েছে। তীব্র সংঘর্ষ অব্যাহত থাকায় আহত লোকজনের কাছে জরুরী জীবনরক্ষাকারী সামগ্রী পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। বহু বেসামরিক লোক অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। গত মাসের শুরুর দিকে দেশটির ওপর অবরোধ আরোপ করায় ত্রাণ কর্মীদের পক্ষে যুদ্ধে আটকা পড়া লোকজনের কাছে জরুরী পণ্য পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। জরুরী ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে অবরোধ তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গুতেরেস। তিনি যুদ্ধরত সব পক্ষকে তাদের আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার দায়বদ্ধতার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। আরব বিশ্বের দরিদ্রতম দেশ ইয়েমেন। দেশটিতে টানা দু’বছর ধরে সরকার ও বিদ্রোহী হুতি মিলিশিয়াদের মধ্যে চলছে সশস্ত্র লড়াই। এতে সৌদি আরব ইয়েমেন সরকারকে ও ইরান হুতি বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে। সৌদি আরব সেখানে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছে। এ যুদ্ধে প্রায় ১৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। নিহতদের অধিকাংশই বেসামরিক লোক বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে। দেশটির ২ কোটি ৭ লাখ মানুষ এখন মানবিক সঙ্কটের মুখে পড়েছে। এদের মধ্যে ৯৮ লাখের অবস্থা সবচেযে শোচনীয় বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন সামরিক উপায়ে ইয়েমেন সঙ্কটের সমাধান করা সম্ভব নয়, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমধানে পৌঁছাতে হবে। এদিকে হুতি বিদ্রোহী ও দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুল্লাহ সালেহর অনুগত বাহিনীর মধ্যে সমঝোতা ভেঙ্গে যাওয়ায় দু’বছর ধরে যুদ্ধ এখন নতুন দিকে মোড় নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সোমবার হুতি ও সালেহর অনুগত বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই হয়েছে। সালেহ শনিবার বলেছেন, তিনি সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি আছেন। তার এই অবস্থান পরিবর্তন সৌদি জোটকে বাড়তি শক্তি যোগাবে। দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই তীব্রতর হওয়ায় রাজধানী সানার বাসিন্দারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের এক কর্মী সেখান থেকে জানিয়েছেন, সানা এখন এক ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে। শহরের রাস্তায় রাস্তায় লড়াই ছড়িয়ে পড়ায় লোকজন সব নিজ গৃহে অবস্থান করছে। রাস্তাঘাট জনশূন্য। লড়াই না থামলে বহু লোক নিজ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বলে তিনি জানান। ২০১৪ সালে সালেহর পৃষ্ঠপোষকতায় হুতিরা রাজধানী সানা আক্রমণ করলে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আবদ ররোহ মনসুর হাদি সৌদি আরবে পালিয়ে যান। ২০১৫ সালের মার্চে সৌদি আরব দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরু করলে হুতিরা ছত্রভঙ্গ হয়ে দেশের ভেতর বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। হুতি বিদ্রোহীরা রবিবার দাবি করেছে, তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি পরমাণু বিদ্যুত স্থাপনা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তবে আমিরাত এই দাবি অস্বীকার করেছে। আমিরাতের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বলেছে পরমাণু স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সব রকম ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়েছে। হুতিরা এর আগে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ লক্ষ্য করেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল।
×