ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ চুক্তি সই

প্রকাশিত: ০৬:১০, ৩০ নভেম্বর ২০১৭

ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ চুক্তি সই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জি টু জি ভিত্তিতে চব্বিশ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শীঘ্রই শুরু হতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে নির্মাণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বেজিংয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং নির্মাণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইম্পোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের বোর্ড চেয়ারম্যান মি. রুয়ান গুয়ান নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিপত্রে স্ব^াক্ষর করেন। বুধবার এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রায় তেরো শ’ ঊনষাট মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হবে। উল্লেখ, ঢাকা শহরের উত্তরাঞ্চল তথা সাভার, আশুলিয়া ও ইপিজেড সংলগ্ন শিল্প এলাকার যানজট নিরসন এবং দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি গ্রহণ করে সরকার। এক্সপ্রেসওয়েটি হবে সাভার ইপিজেড হতে আশুলিয়া-বাইপাইল-আব্দুলাপুর হয়ে হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত। চলতি বছরের ২৪ অক্টোবর সরকারী-বেসরকারী অংশীদারি বা পিপিপির সিদ্ধান্ত বাতিল করে জি টু জি বা সরকারীভাবে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ হবে চীনের অর্থায়নে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ দেবে ১০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। বাকি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে দেয়া হবে। সরাসরি দরপত্র প্রক্রিয়ার (ডিটিএম) মাধ্যমে চীনের ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে। ২০২২ সালে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেতু বিভাগ। সেতু বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকার আশপাশে যানজট কমাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদের ২০১০ সালে। ওই সময় সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ হবে পিপিপির মাধ্যমে। তখন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশও নিয়েছিল। ২০১১ সালের ৪ এপ্রিল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ভিত্তি প্রস্তরও স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু পিপিপির সিদ্ধান্ত বদল, জমি অধিগ্রহণ, নক্সা পরিবর্তনসহ নানা কারণে গত ছয় বছরে আলোর মুখ দেখেনি প্রকল্পটি। অবশেষে সরকার নতুন করে সিদ্ধান্ত নিল প্রকল্পটি সরকারীভাবে চীনের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল হয়ে নবীনগর মোড় ইপিজেড হয়ে চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। এক্সপ্রেসওয়ের উভয়পাশে চার লেনের প্রায় ১৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কও নির্মাণ হবে। পরিকল্পনা কমিশন ও সেতু বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ঢাকা ও এর পাশের আশুলিয়া অংশে যানজট অনেকটা নিরসন হবে। এ ছাড়া ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তর ও পশ্চিমের অন্তত ৩০ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীদের ঢাকা ছাড়ার জন্য গাবতলী, সাভার ও চন্দ্রায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতে হবে না। অল্প সময়ের মধ্যেই ঢাকা থেকে চন্দ্রা পৌঁছে যাবে যানবাহন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষে এর পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের দায়িত্বে থাকবে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসি। সেতু বিভাগ সূত্র মতে, প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ র‌্যাম্প থাকবে। নবীনগর ইন্টারসেকশনে থাকবে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ উড়াল সড়ক। প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন এলাকায় তিন কিলোমিটার সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া ভূমিকম্প প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনাও থাকবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে। প্রকল্পে ঋণের সুদের হার হবে ৪ শতাংশের মতো। গত বছর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময় এলিভেটেড এক্সপ্রেস নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। অবশ্য এই প্রকল্পের বিষয়ে চীনের সঙ্গে কবে নাগাদ ফ্রেমওয়ার্ক এ্যাগ্রিমেন্ট ও অর্থিক চুক্তি সই হতে পারে, তা কেউ বলতে পারেনি। কারণ, সবার মনোযোগ এখন চীনের অর্থায়নে পদ্মা রেল সংযোগ সেতুর দিকে। প্রকল্পটি সরকারের এক নম্বর অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
×