ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

রাজধানীতে নজরুল বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২২ নভেম্বর ২০১৭

রাজধানীতে নজরুল বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্রান্তিকালে তিনি হয়ে ওঠেন প্রেরণার উৎস। সাম্প্রদায়িকতায় যখন আক্রান্ত হয় দেশ ও সমাজ তখন তার সৃষ্টিসম্ভার হয়ে ওঠে জাগরণের হাতিয়ার। এমন প্রেক্ষাপটে আবারও প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে হাজির সাম্য, দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলাম। রাজধানীতে শুরু হলো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে দুই দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এতে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেছেন, কাজী নজরুল শুধু নামেই বিদ্রোহী ছিলেন না। তিনি সকল অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার শোষণের বিরুদ্ধে ছিলেন বিরামহীন বিদ্রোহী। তার বিদ্রোহের মূলে ছিল স্বদেশপ্রীতি, স্বাধীনতাপ্রীতি ও শোষণবিরোধী মনোভাব। সাহিত্যে তিনি যে দুর্জয় সাহস যুগিয়েছেন তার তুল্য কোন কবির আজও আর্বিভাব ঘটেনি বাংলা সাহিত্যে। সাম্প্রদায়িকতার শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে আসতে তার গান-কবিতা আজও প্রাসঙ্গিক। তিনি ছিলেন জাতীয়তাবাদ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূর্ত প্রতীক। মঙ্গলবার উত্তরা ক্লাবের লোটাস লাউঞ্জে ‘একুশ শতকে নজরুল’ শীর্ষক দুই দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। সম্মেলনের আয়োজক উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়। আয়োজনে সহযোগী হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ এবং ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বিশেষ অতিথি ছিলেন এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, এমিরেটাস অধ্যাপক ও নজরুলগবেষক ড. রফিকুল ইসলাম, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. বরুণকুমার চক্রবর্তী, কবি নাতনী খিলখিল কাজী। উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ইয়াসমীন আরা লেখার সভাপতিত্বে উদ্বোধনী আয়োজনে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. খন্দকার মোঃ নাসিরউদ্দিন, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বেলা দাস, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোঃ মাহবুবুর রহমান। অনুষ্ঠানে ‘একুশ শতকে নজরুল’ শিরোনামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর। হাসানুল হক ইনু বলেন, আজকে কুসংস্কার, কূপমন্ডুকতা, সাম্প্রদায়িকতা থেকে বেরিয়ে এসে আমরা যখন একটি বৈষম্যমূলক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণের কথা বলছি, তখন কবি নজরুল আরো অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেন কালে কালে। তিনি বাঙালীর অমর সঙ্গী। নজরুল প্রকৃত অর্থে পরিপূর্ণ মানুষ ছিলেন। তিনি কখনও অন্যায়-অত্যাচার ও মিথ্যার সঙ্গে আপোষ করেননি। তিনি মানবতার কবি ছিলেন। তিনি জাত-পাত, শ্রেণী-ধর্ম নির্বিশেষে সকলকে ভালবেসে গেছেন। তার এই চেতনাই অসাম্প্রদায়িক সমাজ নির্মাণের জন্য প্রাসঙ্গিক। আনিসুজ্জামান বলেন, কবি নজরুলের মধ্যে যে আন্তর্জাতিক চেতনার স্ফূরণ ঘটেছিল, তা তার সচেতন জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সতেজ ছিল। তার এই চেতনাবোধই তাকে দেশোত্তীর্ণ ও কালোত্তীর্ণ করেছে। রফিকুল ইসলাম বলেন, গোটা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে এখন পশ্চিম সাম্র্রাজ্যবাদের যে আগ্রাসন, আজ থেকে শত বছর পূর্বে নজরুল তার কবিতায় তা প্রকাশ করে গেছেন। ইতিহাস সচেতন এই কবি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে সাম্র্রাজ্যবাদীদের মুখোশ উন্মোচন করেছিলেন। নজরুলের মতো প্রতিবাদতো আর কোন কবির কবিতায় আজও দেখতে পাই না। খিলখিল কাজী বলেন, আজকে নোবেল পুরস্কারজয়ী কবিরা রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিশ্চুপ হয়ে আছেন। কিন্তু আজ যদি কবি নজরুল বেঁচে থাকতেন, তবে তিনি চুপ করে থাকতেন না। তিনি প্রতিবাদ করতেন। তিনি আরও বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম জাতীয়তাবাদ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূর্ত প্রতীক। তার গান ও কবিতা সমাজ জাগরণের হাতিয়ার। বরুণ কুমার চক্রবর্তী বলেন, বিমল ভূষণ, সুপ্রভা সরকারসহ অনেক গায়ক-গায়িকা বলতেন ‘কাজীদার কোলে বসে আমরা গান শিখেছি’। অথচ তাদের কাছে নজরুলের গানের স্বরলিপি চাইলে তারা তা দিতে পারেননি। নজরুলের গান এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, সেগুলো সংগ্রহ করে নির্ভরযোগ্য সঙ্কলন প্রকাশ করা খুব জরুরী। মূল প্রবন্ধে সৌমিত্র শেখর বলেন, নজরুল বিদ্রোহের কবি, চির প্রেমের কবি। তিনি আধুনিকতার কবি, যে আধুনিকতায় বাস্তবতা ও প্রত্যক্ষতার সম্মিলন রয়েছে। তার কবিতায় রোমান্টিসিজম দেখতে পাই, তার তার যাপিত জীবন থেকেই সঞ্চিত হয়েছে। আলোচনায় অংশ নেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কবি ও সাংবাদিক জিয়াদ আলী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. খালেদ হোসাইন, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সভাপতি ড. বিশ্বতোষ চৌধুরী, ভারতের রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সুব্রত কুমার পাল। আজ বুধবার সম্মেলনের সমাপনী দিনের আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। জয়নুল গ্যালারিতে তরুণ শিল্পীদের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ॥ তরুণ শিল্পীদের রং-তুলির আঁচড়ে ক্যানভাসে মূর্ত হয়েছে বিচিত্র বিষয়। সেসব ছবি শিল্পানুরাগীর মনে জোগায় ভাবনার খোরাক। মঙ্গলবার থেকে শুরু হলো ২২তম বার্জার তরুণশিল্পী চিত্রকর্ম প্রতিযোগিতার প্রদর্শনী। এতে নিজ কর্মের স্বীকৃতি পেয়েছেন ছয় তরুণ শিল্পী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে শুরু হওয়া প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন প্রতিযোগিতার বিচারকেরা। তারা হলেন শিল্পী মনিরুল ইসলাম, শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী, শিল্পী নিসার হোসেন, শিল্পী আবুল বারক আলভী, শিল্পী মনিরুজ্জামান, শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য, শিল্পী নাসরিন বেগম প্রমুখ। এবারের প্রতিযোগিতায় সেরা হয়েছেন ঊর্মি রায়। ‘এমব্রেস দ্য সোল থ্রি’ শিরোনামে তার ছবিতে মেলে এক নারীর শাখা আর পলা পড়া হাত। খোলা বইয়ের ওপর তার নিশ্চল হাতের পাশেই পড়ে আছে মরা তেলাপোকা। দ্বিতীয় হওয়া জেবা ফারিয়ার ‘পেইন্টিং ফ্রম থ্রি হুইলারস্্’ ছবিতে দেখা মিললো রিক্সা চিত্রের। শুধু রিক্সার পেছনেই নয়, পুরো চিত্রপটের জমিনজুড়েই ছিল রিক্সাচিত্রের ছাপ। তৃতীয় স্থান পাওয়া মং মং সু’র ‘লাইফ এ্যান্ড ফিশারবোটস্্-৬’ ছবিতে দেখা মিললো জেলেদের জীবনযুদ্ধ। প্রদর্শনীতে পুরস্কারপ্রাপ্তরা অন্য শিল্পীরা হলেন সুলতানা শারমীন, সুরাইয়া আক্তার ও নওশীন তারান্নুম। এবারের আয়োজনে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয় শিল্পী মাহমুদুল হককে। পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পকর্মসহ প্রতিযোগিতায় ঠাঁইপ্রাপ্ত ৪০টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে প্রদর্শনী চলবে ২৫ নবেম্বর পর্যন্ত। শিল্পকলায় তিন দিনের যাত্রা উৎসব ॥ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টডিও থিয়েটার মঙ্গলবার থেকে শুরু হলো তিন দিনের নবম যাত্রা উৎসব। যাত্রাশিল্প উন্নয়ন নীতিমালা বাস্তবায়ন ও যাত্রাদল নিবন্ধনের লক্ষ্যে এ উৎসবের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ। প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে পর্যন্ত চলবে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত এ উৎসব। উৎসবের উদ্বোধনী দিনের বিকেলে নেত্রকোনার ঝলমল নাট্যসংস্থা পরিবেশন করে রাজ্জাক গোসাই পরিচালিত যাত্রাপালা ‘প্রেমের সমাধি তীরে’। নরসিংদীর ফরিদা নাট্য সংগঠন উপস্থাপন করে শহীদুল্লাহ বাহার পরিচালিত যাত্রাপালা ‘রূপবান’। সন্ধ্যায় খুলনার বনানী অপেরা পরিবেশন করে সেলিম রেজা নির্দেমিত যাত্রাপালা ‘মিলনমালা’। আজ বুধবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনে ঢাকার নিউ সোনার বাংলা অপেরা পরিবেশন করবে রাজু আহমেদ পরিচালিত যাত্রাপালা ‘কাশেমমালা’, হবিগঞ্জের নবজাগরণ অপেরা পরিবেশন করবে সুনীল দাস পরিচালিত যাত্রাপালা ‘কলঙ্কিনী বধূ’ এবং ঢাকার নিউ লোকনাথ অপেরা পরিবেশন করবে প্রদীপ চক্রবর্তী পরিচালিত যাত্রাপালা ‘বাহারাম বাদশা’। যাত্রাদল নিবন্ধন কার্যক্রমে বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন রামেন্দু মজুমদার, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, জনাব মামুনুর রশীদ, ড. আফসার আহমেদ, জোৎন্সা বিশ্বাস, মিলন কান্তি দে, এস এম মহসীন, তাপস সরকার ও ভিক্টর ড্যানিয়েল। এছাড়াও বিচারক হিসেবে রয়েছেন আইন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিবৃন্দ। জাদুঘরে সপ্তাহব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচী : কোরিয়ান দাতা সংস্থা কোইকার অর্থায়নে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উন্নত প্রযুক্তির সঙ্গে সংরক্ষণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে জাতীয় জাদুঘরে সপ্তাহব্যাপী প্রশিক্ষণ র্কমসূচী শুরু হলো। মঙ্গলবার জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এর উদ্বোধন করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি ইউন ইয়ং, কোরিয়া কালচারাল ফাউন্ডেশনের সভাপতি লি হিয়াং সু ও কোইকা বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর জো হুন-গু। সভাপতিত্ব করেন জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী।
×