ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অনিন্দিতা চৌধুরী

উচ্চাকাক্সক্ষা মানে সফলতা নয়

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৩০ অক্টোবর ২০১৭

উচ্চাকাক্সক্ষা মানে সফলতা নয়

সফলতা শুধু অভ্যন্তরীণভাবেই ঘটতে পারে, কেননা এর ভিতটা গাড়া রয়েছে আবেগ-অনুভূতির মধ্যে। সবচাইতে প্রাথমিক ধাপ হিসেবে আপনার নিজের সঙ্গে সম্পর্কটাই ‘সফলতা’। অধিকাংশ মানুষই মিথ্যের সঙ্গে বসবাস করছে। তারা জেনেশুনে নিজেকেই এড়িয়ে চলে এবং মনের খুব গভীর থেকে যা চায়, তা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখে। অনেকেই নিজের জন্য অনেক কিছু চায়। তাদের অনেক স্বপ্ন এবং লক্ষ্য থাকে। যদিও খুব কম মানুষই যা চায়, তা পেয়ে থাকে। শুধু উচ্চাকাক্সক্ষী হওয়াই যথেষ্ট নয়, এর চাইতেও বেশি প্রয়োজন সংকল্পবদ্ধ হবার। নিজের স্বপ্নের প্রতি দায়বোধ থেকেই সফলতার সম্ভাবনা আসে। যখন আপনি কোনকিছুর প্রতি দায়বোধ অনুভব করবেন, তখন তাতে সফলতা অর্জনের জন্য যা হওয়া এবং করা উচিত, আপনার চেষ্টার মধ্য দিয়ে তা অর্জিত হবে। তখন আপনি শুধু চিন্তা-ভাবনা এবং আকাশকুসুম স্বপ্ন বোনা ছেড়ে দিয়ে সত্যিকার একটি রূপ দিতে সচেষ্ট হবেন। লক্ষ্য থেকে সরে যাওয়া নয়, বরং শিক্ষা গ্রহণ শুরু হবে। আপনি নিজেকে যুক্ত করবেন, আপনি বারবার ব্যর্থ হবেন। আর ব্যর্থতা সফলতার ভিত্তি, কে না জানে? আপনি যা সত্যি সত্যি চান, এক এক করে তা অর্জন করে নিন, নয়ত আপনার উচ্চাকাক্সক্ষার তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতেই থাকবে! নিজের মধ্য থেকে কিছু দক্ষতা বের করে আনুন যাতে আপনার ভেতরকার লক্ষ্য, নীতি এবং মূল্যবোধকে প্রতিফলিত করে। আপনি যদি বিবাহবন্ধনে স্বেচ্ছায় দায়বদ্ধ হয়ে থাকেন, এতে প্রয়োজনীয় সকল ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আপনি যাবেন। আপনি তা-ই করবেন যাতে এটি একটি সফল বন্ধনে রূপ নেয় ও টিকে থাকে। শিল্পীর মন যদি শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতা অনুভব করে, তবে এর স্বার্থে নিজেকে ঝালিয়ে নেয়া এবং সফলভাবে সৃষ্টি করতে যা যা লাগে, তা-ই করবেন তিনি। নিজের আকাক্সক্ষার সীমা নিজেকেই অতিক্রম করতে হয়। এই দায়বোধ আপনার কাছে কোন মানসিক সীমাবদ্ধতা মনে হবে না এবং তা নয়ও। সব সীমারেখা বদলে যাবে শুধু এই জোরাল আকাক্সক্ষাগুলো পূরণের জন্য। সব সীমানা দূরে সরে যাবে যাতে তারা আপনাকে রুখতে না পারে! যারা নিজের উচ্চাকাক্সক্ষাকে শুধু একটি ‘ইচ্ছা’ বানিয়ে না রেখে তার প্রতি যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাবে এবং যথেষ্ট দায়বোধ রাখবে, তারাই চূড়ান্তভাবে তা অর্জন করতে পারবে। জীবনের অন্য দিক, সুখ, স্বস্তিও হয়তো ত্যাগ করতে হয় এই তাগিদগুলো পূরণের জন্য। কিন্তু তারপরও ‘সফলতা’ এমনই একটি প্রাপ্তি, যার জন্য হাসিমুখে ছেড়ে দিতে হয় অনেক কিছুই। আজকে খুব করে আপনি যা চাইছেন, তা পাবার জন্য কিন্তু আপনাকে আজকের অনেক কিছুই বদলাতে হতে পারে। আর যদি সেই বদলানোর ভারটুকু আপনি নিয়ে না পারেন, তবে হয়তো বর্তমানে যা কিছু আছে বা যেমনটি আছে তা থেকে পরিবর্তন কিংবা উত্থানের আশা করাটা অসঙ্গত। পরিবর্তনে যদি বিশ্বাস না রাখেন, তবে হয়ত আকাক্সক্ষা থেকে সফলতার পথে যাত্রাটাও রয়ে যাবে স্থির পথের বিন্দুতে। দেখবে না আর নতুন কোন গন্তব্য। জীবন যা দিয়েছে, তার চাইতেও বেশি কিছু যদি কেউ পেতে চায়, তবে তাকে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেবার মতো কিছু নিজের তাগিদেই করতে হবে। গন্তব্যে পৌঁছুনোর জন্য পথ বেছে নেয়া এবং সেই পথে চলার সিদ্ধান্তও জীবনের হাতে ছেড়ে দিলে চলবে না। অপরিবর্তনের ভ্রান্ত ধারণাটি কতদিন টিকে থাকে? জীবন আপনার প্রতিচ্ছবি। যদি জীবনটাকে পরিবর্তনই করতে হয়, তবে নিজেকে পরিবর্তন করাটা অনিবার্য। কোন পরিবর্তন আনতে হলে, সিঁড়ির শুরু ধাপের সেই পরিবর্তনটি নিজেকেই হতে হয়। পরিবর্তন আনুন, তার আগে সে অনুযায়ী পরিবর্তিত হন। কোটিপতি হতে গেলে নিজেকে তা হবার যোগ্য ও সমর্থ করে তুলতে হবে। আপনার ভেতরের কোন দক্ষতা সেই পথে ইন্ধন যোগাতে পারে, তা খুঁজে বের করতে হবে, তাকে শাণিয়ে তুলতে হবে আসন্ন যুদ্ধের জন্য, সাফল্য যাত্রার উদ্দেশ্যে। কারর সঙ্গে সুস্থ সম্পর্ক চাইলে, সেই সম্পর্কে আপনার যে ভূমিকা তা পালন করতে নিজের সবটুকু চেষ্টা দিন। অপরের কাছ থেকে সম্পর্কে বিশ্বস্ততা, সুস্থতা আশা করলে আপনাকে তা প্রথমেই নিজের মধ্যে আনতে হবে। একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব শুধু তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের রপর নির্ভর করে না। তার চারপাশের মানুষজন, প্রকৃতি ও পরিবেশ সবকিছুই ভূমিকা রাখে ‘ব্যক্তিত্ব’ গড়ে তোলার যাত্রায়। নিজের স্বাতন্ত্র্যের রপর অতি-বিশ্বাস অনেক স্বাভাবিক একটি বিষয়। স্বাতন্ত্র্য বলতে নিজেকে শুধু নিজের মাধ্যমেই গড়া এবং তাতে আশপাশের কোনকিছুর বিন্দুমাত্র আঁচ না লাগাকে যদি বোঝানো হয়, তবে তা নিশ্চিতভাবেই একটি ভ্রান্ত ধারণা। স্বাতন্ত্র্য তার শুদ্ধতম রূপে এসেও অপরিবর্তিত থাকে না। কেন? কারণ তার চারপাশ বদলায়। মানুষের ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলবার প্রতিটি বাহ্যিক নিয়ামক বদলায় এবং তার ছাপ এসে পড়ে মানুষের মধ্যে। তাই স্বাতন্ত্রের সংজ্ঞাও পাল্টায়। কেউ কোনভাবেই চিরন্তন রূপে থাকে না, আসলে ‘চিরন্তন রূপ’ ব্যাপারটি একটি মিথ, তা ভেতরেরই হোক অথবা বাইরেরই হোক!
×