ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মনোয়ার হোসেন

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

শহরজুড়ে বইছে উৎসবের আবহ। স্নিগ্ধ শরত ঋতুর মাঝে আবির্ভূত হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব। সেই উৎসবে শহর ঢাকা পেয়েছে রঙ্গিন রূপ। সুরের শক্তিতে ভর করে অসুর বিনাশে স্বর্গ থেকে মর্ত্যে এসেছেন দেবী দুর্গা। চলছে ভক্ত-অনুরাগীদের পূর্জা-অর্চনাসহ নানা আচার আনুষ্ঠানিকতা। হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ এ ধর্মীয় উৎসবের রেশ ধরে বাজছে শঙ্খের সুর, উলুধ্বনি আর ঢাকের বাদ্য। রাজধানীর অলিগলি থেকে শুরু করে মন্দির কিংবা মাঠে-ময়দানে বসেছে অসংখ্য পূজামণ্ডপ। এসব মণ্ডপে পূজারীদের সঙ্গে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। রাতের বেলায় যেন দিনের চেয়ে বেশি ঔজ্জ্বল্য ছড়াচ্ছে এ মণ্ডপগুলো। আলোর রোশনাইয়ের সঙ্গে প্রতিমার রূপময়তায় মুগ্ধ হচ্ছেন পূজারী ও দর্শনার্থীরা। বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরে ঘুরে চলছে প্রতিমা দর্শন। পৃথক পৃথক আঙ্গিক ও নান্দনিক গড়নের কারণে প্রতিমার সৌন্দর্যে যুক্ত হয়েছে ভিন্নমাত্রা। তেমনটাই দেখা গেল পুরান ঢাকার নারিন্দার শাহ শাহেববাড়ি পূজাম-পে। এখানে দেবী দুর্গা আসীন হয়েছেন নৌকার কাঠামোর ওপর। বৈচিত্র্যময় এমন সব প্রতিমা অবলোকনের আনন্দ কিংবা মঙ্গলময়ী দেবী দুর্গাকে নিবেদিত অঞ্জলি নিবেদনের আয়োজনে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমানতালে উৎসব উদযাপনে শামিল হয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষও। সম্প্রীতির বাংলাদেশে যেন উচ্চারিত হচ্ছে সেই সুন্দরতম বাক্যটি ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। তাই তো ধর্মীয় উৎসবের সূত্র ধরেই কোথায় যেন হারিয়ে গেছে ধর্ম বা গোত্রের পরিচয়। বন্ধু, প্রতিবেশী কিংবা স্বজনরা মিলে ঘুরে বেড়াচ্ছে এ ম-প থেকে অন্য ম-পে। বিশেষ করে পুরান ঢাকায় এ উৎসবের আমেজটি অনেক বেশি দৃশ্যমান। শাঁখারীবাজার কিংবা তাঁতীবাজারের সরু গলির পথে পথে বসেছে ম-প। রাতভর সেখানে দেবী দুর্গার প্রতিমা দেখার পাশাপাশি চলছে চটপটি-ফুচকাসহ নানা পদের খাদ্যসামগ্রীর ভোজনবিলাস। দুর্গাপূজার সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার রাজধানীর রামকৃষ্ণ মঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে কুমারীপূজা। আজ শুক্রবার নবমী আর কাল শনিবার বিজয়া দশমীর মাধ্যমে সম্পন্ন হবে দেবী দুর্গার বিসর্জন। সবার প্রত্যাশা, অশুভকে হটিয়ে কল্যাণের পথপরিক্রমায় শান্তি ও সম্প্রীতির পথরেখায় শেষ হবে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব। এ বছর রাজধানীর ২৩১টি ম-পে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুর্গাপূজা। একদিকে যেমন দেশব্যাপী বিরাজ করছে দুর্গাপূজার উৎসব আবহ, অন্যদিকে তখন প্রকট হয়ে ধরা দিয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যু। মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘটিত জাতিগত নির্মূল অভিযানের সবচেয়ে বড় আঁচটি পড়েছে বাংলাদেশের ওপর। সে দেশের সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের গণহত্যা, গণধর্ষণ, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়াসহ নানা নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গা মুসলিমরা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক বোধের কারণে দেশে ইতোমধ্যে আশ্রয় নিয়েছে স্বজন ও গৃহহারা চার লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী। এ শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়ে রাজধানীবাসীর অনেকেই প্রশংসা করছেন। উল্টোদিকে নগরবাসীর অনেকেই শঙ্কায় রয়েছেন, এই বিপুলসংখ্যক শরণার্থীকে কিভাবে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে তাদের স্বদেশে। আগের চার লাখের সঙ্গে বর্তমানে যুক্ত সাড়ে চার লাখ- এ বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার ভার আর কতদিন বইতে হবে বাংলাদেশকে? তাই রোহিঙ্গা ইস্যুতে একই সঙ্গে মানবিকতা ও সঙ্কট নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে শহরবাসীর মাঝে। এবার আসি রুপালি ইলিশের কথায়। ভরা মৌসুমে ধনী-গরিব সবাই এ বছর কম-বেশি স্বাদ নিয়েছেন সুস্বাদু এই জাতীয় মাছের। ভাজা ইলিশ, ভাপা ইলিশ, কাসুন্দি ইলিশসহ নানা পদের রান্নায় নগরবাসী উপভোগ করেছেন এই মাছের স্বাদ। বর্তমানে দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে ইলিশের বাজার দারুণ রমরমা। উল্লেখ্য, আগামী ১ অক্টোবর থেকে প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে ২২ দিনের জন্য নিষিদ্ধ হচ্ছে ইলিশ ধরা ও বাজারজাতকরণ।
×