ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কিন প্রেসিডেন্টকে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের এই ঘৃণা ও ধর্মান্ধতার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিন্দা করতে দেখা যেত

আমেরিকার এক কৃষ্ণ দিবস

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৩০ আগস্ট ২০১৭

আমেরিকার এক কৃষ্ণ দিবস

গত ১২ আগস্ট আমেরিকার ইতিহাসে এক কালো দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ওই দিন ভার্জিনিয়ার শার্লোটসভিলে স্বস্তিকা চিহ্ন নিয়ে তরুণ ও বৃদ্ধরা বেরিয়ে পড়ে। ক্রুব্ধ নর-নারীরা চিৎকার করে কুৎসিত ও বর্ণবাদী স্লোগান তোলে। এই বিক্ষোভকারীদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য এগিয়ে আসে শ্বেতাঙ্গ মিলিশিয়ারা যাদের অনেকেই প্রকাশ্যে অস্ত্র বহন করছিল। শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীদের এই বিক্ষোভের প্রতিবাদে পাল্টা বিক্ষোভ হয়। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সেটা সহিংসতায় পরিণত হয়। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদরত জনতার ওপর এক ব্যক্তি গাড়ি চালিয়ে দেয়। সহিংসতায় দু’জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষায় এমন ঘৃণা আমি জীবনে দেখিনি। স্বাভাবিক সময় হলে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের এই ঘৃণা ও ধর্মান্ধতার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিন্দা করতে দেখা যেত। কিন্তু এটা তো স্বাভাবিক সময় নয়। তাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দেখা গেল তিনি নানা পক্ষের ওপর এই সহিংসতা, ধর্মান্ধতা ও ঘৃণার নিন্দা করলেন। এর জন্য শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের কথা উল্লেখ করলেন না, শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের দায়ী করলেন না। ট্রাম্প অনেক বাগাড়ম্বর করলেন। তবে তার নিন্দা জ্ঞাপনটা হলো সাধারণভাবে সবাইকে উদ্দেশ্য করে। এ হলো পুরনো চাল। কথার ফুলজুরি সাজিয়ে সমালোচকদের কোণঠাসা অবস্থায় ফেলা এবং নিজের প্রকৃত অভিসন্ধিটা আড়াল করা। কৃষ্ণাঙ্গ জনগণ এই কৌশলের সঙ্গে পরিচিত। ট্রাম্প শার্লোটসভিলের ঘটনার জন্য শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের নিন্দা করেননি। কারণ তারা হলো তার পক্ষের লোকজন। এই লোকেরাই ট্রাম্পকে জিততে সাহায্য করেছিল। ‘দি ডেইলি স্টারমার’ নামে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী ওয়েবসাইট থেকে যদি কোন আলামত পাওয়া যায় তাহলে তা হলো এই যে শার্লোটসভিলের ঘটনা সম্পর্কে ট্রাম্প যা বলেছিলেন তাতে এই লোকেরা বেশ খুশি। ওখানে বলা হয়েছে : ‘তিনি বলেছেন তিনি আমাদের ভালবাসেন... কোন নিন্দা করেননি। সত্যি সত্যিই ভাল। ঈশ্বর তার মঙ্গল করুন।’ ঘটনার নিন্দা এবং ট্রাম্পের ভূমিকার সমালোচনা করে বিভিন্ন জনের সে সব বক্তব্য উঠে এসেছে তার মোদ্দাকথা হচ্ছে শার্লোটসভিলের ঘটনা শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের সন্ত্রাস। ওই ঘটনা আমেরিকান মূল্যবোধের পরিপন্থী। এ দেশে ঘৃণা ও গোরামির স্থান নেই। শার্লোটসভিলের সেই উন্মাদ বর্ণবাদীরা নাৎসিবাদী সে্ল্গান তোলে, কনফেডারেট মনুমেন্ট্রগুলো রক্ষার পক্ষে দাঁড়ায় এবং ঘোষণা করে যে আমেরিকা একটি শ্বেতাঙ্গ জাতি। কেউ কেউ যুক্তি দেখায় যে শার্লোটসভিলের ঘটনাটি শ্বেতাঙ্গ শ্রমিক শ্রেণীর এতদিনের পুঞ্জীভূত বঞ্চনাবোধের বহির্প্রকাশ। সেই যুক্তি বাস্তবভিত্তিক নয়। হিলারির ভোটারদের চেয়ে ট্রাম্পের ভোটারদের এক উচ্চতর অংশ বছরে ১ লাখ ডলার আয় করে। আরও দেখা গেছে যে, অর্থনৈতিক ইস্যু নয় বরং সামাজিক ইস্যুই ট্রাম্প ভোটারদের এ কাজে প্রণোদিত করেছে। শার্লোটসভিলের ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের ঘটনাটি শূন্য থেকে কোন কারণ ছাড়া ঘটেনি। আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী ভাবধারার দীর্ঘ ইতিহাস আছে। সাম্প্রতিককালে ট্রাম্পের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ও বিজয়ী হওয়ার ঘটনায় সেই ভাবধারা আরও জোরদার হয়েছে। ১২ আগস্ট তাদের বিক্ষোভটা স্বাভাবিক বিক্ষোভ ছিল। তারা লড়বার জন্য আগে থেকে তৈরি হয়েই এসেছিল। বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণে দেখা যায় যে ঘটনার কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই তারা নিজেদের দস্তুর মতো সংগঠিত করেছিল। এর জন্য রিপাবলিকান পার্টিও কম দায়ী ছিল না। রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের কৌশল হিসেবে রিপাবলিকান পার্টি অর্ধশতাব্দীকাল ধরে শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী ভাবধারাকে উস্কে দিয়েছিল ও কাজে লাগিয়ে ছিল। কাজেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে ধরি মাছ না ছুঁই পানি গোছের বক্তব্যের দ্বারা প্রকারান্তরে শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীদের সমর্থনও প্রশ্রয় দেবেন তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। সূত্র : টাইম
×