ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওপেনিং কিংবা তিন নম্বর

দুই পজিশনেই ব্যাট করতে প্রস্তুত ইমরুল

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৩ আগস্ট ২০১৭

দুই পজিশনেই ব্যাট করতে প্রস্তুত ইমরুল

মিথুন আশরাফ ॥ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে তিন নম্বর পজিশনে কে ব্যাটিং করবেন? ইমরুল কায়েস না মুমিনুল হক? এ নিয়ে সবার ভেতরই প্রশ্ন রয়েছে। তবে মঙ্গলবার ব্যাটিং অনুশীলন সেরে নিয়ে সাংবাদিকদের ইমরুল জানিয়ে দেন, দুই জায়গাতেই ব্যাটিং করতে প্রস্তুত। দুই জায়গা মানে হচ্ছে ওপেনিং পজিশন কিংবা তিন নম্বর পজিশন। সঙ্গে এও বলে দেন, প্রধান কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহে তাকে তিন নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। ইমরুল বলেন, ‘আমি মনে করি জাতীয় দলের হয়ে ম্যাচ খেলাই সবচেয়ে বড় অর্জন। নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। ব্যাটিংয়ের জায়গা নিয়ে নিজের পছন্দ থাকে। কিন্তু দল যেটা ভাল মনে করে সেটাই করতে হবে। আমার মনে হয় দুই জায়গায়ই আমি ব্যাটিং করতে রাজি ওপেনিং বা তিন নম্বর যাই হোক।’ তবে ইমরুলের কথাতেই বোঝা গেল, তিন নম্বর পজিশনটিই তারজন্য বরাদ্দ আছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ২৭ আগস্ট শুরু হতে যাওয়া প্রথম টেস্টে এই পজিশনেই ব্যাট হাতে নামবেন ইমরুল। তিনি ইঙ্গিতও দিয়েছেন। বলেছেন ‘শেষ টেস্ট ম্যাচ, যেটা শ্রীলঙ্কায় খেলেছি সেখানেও কিন্তু আমি তিনে ব্যাটিং করেছি। কোচের সঙ্গে কথা বলেছি, কোচ আমাকে বলেছেন তিনে ব্যাটিং করার জন্য। অপশন দিয়েছেন। নেটে সেভাবেই ব্যাটিং করছি। এছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেটেও তিন নম্বরে ব্যাটিং করেছি। ওপেনার থেকে তিন নম্বরে ব্যাটিং করা কঠিন। তবে মানিয়ে নিতে হচ্ছে।’ মুমিনুল হককে নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। মুমিনুল হক দল থেকে বাদ পড়ায় নির্বাচক কমিটি ও প্রধান কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহে অনেক সমালোচনার মধ্যেও পড়েছেন। শেষ পর্যন্ত প্রথম টেস্টের দলে মুমিনুল যুক্ত হয়েছেন। মুমিনুলকে যুক্ত করা মানে ওপেনিংয়ে সৌম্য সরকার ও তিন নম্বরে ইমরুল কায়েসের জায়গা চাপে থাকা। যদিও মুমিনুল তিন নম্বর পজিশনে খেলা ব্যাটসম্যান। কিন্তু ওপেনিংয়ে সৌম্য খারাপ করা মানে চাপে পড়া। আর তিন নম্বরে ইমরুলও খারাপ করা মানে চাপে পড়া। যদি সৌম্য নৈপুণ্য দেখাতে না পারেন ইমরুল দেখান; তাহলে ওপেনিংয়ে আবার ইমরুল চলে আসতে পারেন। তিন নম্বরে মুমিনুল খেলতে পারেন। আর সৌম্য ভাল করলে ইমরুল খারাপ করলে; ইমরুল বাদ পড়তে পারেন। তার পজিশনে মুমিনুল খেলতে পারেন। প্রথম টেস্টের যে চিত্র ফুটে উঠছে তাতে ইমরুলই খেলবেন। মুমিনুল একাদশে হয়তো সুযোগ পাবেন না। কিন্তু ইমরুল বা সৌম্য খারাপ করা মানেই হলো পরের টেস্টে মুমিনুলকে একাদশে রাখা। এজন্য চাপও আছে। ইমরুল যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তখন যেন তাকে ভীত সন্ত্রস্ত মনে হয়। পজিশন নিয়ে যেন আতঙ্কে পড়ে গেছেন। এমন মুহূর্তে একজন ব্যাটসম্যান ভাল খেলবেন কি করে? সেই প্রশ্নই উঠেছে। ইমরুলের নয় বছরের ক্যারিয়ার। এরমধ্যে ২৮টি টেস্ট খেলেছেন। ২৫টি টেস্টে ওপেনিংয়ে ব্যাটিং করেছেন। তিন নম্বরে ইমরুল স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। কিন্তু দলে এবং একাদশে টিকে থাকতে হলে ইমরুলের তিন নম্বর পজিশনে ব্যাটিং করা ছাড়া কোন গতিও নেই। আবার ভাল ব্যাটিং করার চাপও আছে। খারাপ করলেই যে ইমরুলের পরিবর্তে মুমিনুলকে খেলানো হবে। সৌম্য সরকারের কারণে ইমরুলকে পজিশন ছেড়ে দিতে হয়েছে। যে পজিশনে ইমরুল শুধু স্বাচ্ছন্দ্যই বোধ করেন না, দুর্দান্ত ব্যাটিংও করেছেন। তামিম ইকবালের সঙ্গে ওপেনিংয়ে রসায়নটাও ইমরুলের দুর্দান্ত। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটিটাও এ দুই ব্যাটসম্যানের। এমনকি ওপেনিংয়ে সেরা তিনটি স্কোরই তাদের। গত বছর নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়েলিংটন টেস্টে রান নেয়ার সময় ডাইভ দিয়ে ইনজুরিতে পড়েন ইমরুল। এরপর তিনটি টেস্ট মিস করেছেন। নিউজিল্যান্ড থেকে ইমরুলের জায়গায় ওপেন করতে নেমে ভাল খেলে চলেছেন সৌম্য। তাই এই বছরের মার্চে শ্রীলঙ্কায় দেশের শততম টেস্টে দলে ফিরে এসে নিজের পছন্দের জায়গাটা ফিরে পাননি ইমরুল। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ দলে যে ওপেনাররা খেলেছেন তাদের মধ্যে তামিম ও ইমরুলের জুটিটিই সফল। ৪৮টি ইনিংস খেলে সর্বোচ্চ ২২০৫ রান এই জুটির। গড়টাও ঈর্ষণীয় (৪৭.৯৩ গড়)। কিন্তু এ মুহূর্তে তিনে খেলা ছাড়া কোন উপায় নেই ইমরুলের। নিরুপায় ইমরুল তাই এসব নিয়ে ভাবছেন না। ধারাবাহিক নৈপুণ্যের দিকেই তার নজর। বলেছেন, ‘এমন কিছু বলা হয় নাই। নির্ভর করছে আমার পারফর্মেন্সের ওপর। পারফর্ম করলে হয়তো তিনে থাকব। সেটা না পারলে হয়তো দলেই থাকব না।’ ইমরুল তিন নম্বরে তিনটি টেস্টে ব্যাটিং করে ৬ ইনিংসে ৩৪.৬৬ গড়ে করেছেন ২০৮ রান। অপরদিকে ওপেনিংয়ে ২৫ ম্যাচে ৪৮ ইনিংস ব্যাটিং করে ২৭.৩৪ গড়ে ১২৫৮ রান করেছেন। অথচ এখন ইমরুলকে তিন নম্বরে ব্যাটিং করতে হয়। জানেন, এ নিয়ে অভিযোগ করে কোন লাভ নেই। তাই দুই জায়গাতেই ব্যাটিং করতে প্রস্তুত ইমরুল।
×