ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রুহুল আমিন ভূঁইয়া

দর্শক চাহিদায় তৈরি হোক সিনেমা

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১০ আগস্ট ২০১৭

দর্শক চাহিদায় তৈরি হোক সিনেমা

চলচ্চিত্রের সঙ্গে তাঁর সখ্যতা কিংবা প্রেম অনেক আগে থেকেই। আশির দশকে চলচ্চিত্রের নানা আন্দোলনের সঙ্গে তার ছিল সম্পৃক্ততা। স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘বখাটে’ নির্মাণ করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য মনোনীতও হন। মঞ্চ নাটকে রয়েছে তার বিশাল ক্যারিয়ার। নাটক-বিজ্ঞাপন নির্মাণেও রয়েছে দক্ষতা। তিনি নির্মাণ করলেন ‘রাত্রির যাত্রী’ শিরোনামে পূর্ণদৈর্ঘ্য একটি চলচ্চিত্র। পাঠক, এই নির্মাতার নাম হাবিবুল ইসলাম হাবিব। বহুল আলোচিত চলচ্চিত্র ‘রাত্রির যাত্রী’ ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন আনন্দকণ্ঠের সঙ্গে। আনন্দকণ্ঠ : ‘রাত্রির যাত্রী’ সিনেমাটির বর্তমান অবস্থা জানতে চাই? হাবিবুল ইসলাম হাবিব : ‘রাত্রির যাত্রী’ ছবির শূটিং সম্পন্ন হয়েছে অনেক আগেই। এডিটিংও শেষ। ছবিটি সেন্সর থেকে সনদও পেয়েছে। এখন ডাবিং চলছে। ছবিটি নিয়ে দেশের ৬৪ জেলায় নানা ধরনের প্রচারণা চলছে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটির তুমুল প্রচার চলছে। রাত্রির যাত্রীর সহযাত্রী ফোরাম এসব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এটা আমার সহযাত্রী বন্ধুরা করছে। এ জন্য আমি কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি। ফেসবুকে গেলেই দেখা যায় রাত্রির যাত্রী ফ্যান ক্লাব। রাত্রির যাত্রী ইউএসএ, অস্ট্রেলিয়া, কলকাতাসহ সারা বিশ্বের বাঙালিদের বিভিন্ন সংগঠন ছবিটি নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে। বিষয়টা এমন নয় যে, আমি বলে দিয়েছি বলেই তারা করছে। এটা নেহায়েত বাংলা সিনেমার প্রতি ভালবাসা থেকেই এমন করছে। এ আমার সৌভাগ্য বলা যায়। সিনেমার প্রতি ভালবাসা দেখে আমি অভিভূত। আনন্দকণ্ঠ : ছবিটি দর্শক কেন খাবেন? নতুনত্ব কী আছে? হাবিবুল ইসলাম হাবিব : দেখুন সারা পৃথিবীতেই ফিকশন কিংবা চলচ্চিত্রে যদি নতুনত্ব না থাকে তা দর্শকদের হৃদয় জয় করে না। আর সিনেমার সবচেয়ে বড় মার্কেটিং হচ্ছে মানুষের মুখে মুখে তা জনপ্রিয় হওয়া। একজন একটি সিনেমা দেখে তা দশজনকে বললে যে ইমপ্যাক্ট তৈরি হবে তা কয়েক লাখ টাকার বিজ্ঞাপন দিলেও হবে না। তাই দর্শকদের মানসিক চাহিদার কথা চিন্তা করেই সিনেমা বানাতে হবে। সেই হিসেব করতে গেলে ‘রাত্রির যাত্রী’ সম্পূর্ণ নতুন একটি গল্পের ছবি। বাংলা চলচ্চিত্রের চিরায়ত যে ফরম্যাট রয়েছে তার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা ছবি এটি। একটা অন্য রকম গল্প দেখবে দর্শক। একটি রাতের গল্প ছবিটি। দর্শক ছবিটি দেখতে বসলে তা শেষ না করে সহজে উঠতে পারবেন না। আপাতত এইটুকু বলব বাকিটা দর্শক দেখার পরই বলবেন। তবে আমার এতটুকু বিশ্বাস আছে ছবিটি দেখার পর অন্য রকম একটা অনুভূতি নিয়ে দর্শক বাড়ি ফিরবেন। এই ছবিতে এক ঝাঁক গুণী অভিনেতা-অভিনেত্রী কাজ করেছে। এ ছবিতে সুন্দর কিছু গান রয়েছে। এ ছবিতে মৌসুমীকে নতুন পাবে দেখতে পাবে তার ভক্তরা। সব মিলিয়ে ভিন্ন ধারার একটি ছবি দর্শক দেখতে পাবে। আনন্দকণ্ঠ : প্রচার প্রারণার জন্য গত বছর বাংলার সঙ্গীত নামের এক সংগঠনের ১০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে আপনাকে সম্মাননা পদকে সম্মানিত করে। সম্মাননা পাওয়ায় আপনার অনুভূতি জানতে চাই? হাবিবুল ইসলাম হাবিব : আসলে এই সম্মাননা রাত্রির যাত্রীর সকল সহযাত্রী বন্ধুদের পাওনা। কেননা দেশে বিদেশের লাখো কোটি সহযাত্রী বন্ধুরা যেভাবে রাত্রির যাত্রীর জন্য নিরলসভাবে প্রচার- প্রচারণা করে আসছেন তা আমাদের দেশের চলচ্চিত্রে একটি নতুন ঘটনা। একটি ধারা। রাত্রির যাত্রীর সকল জেলা উপজেলার সহযাত্রী বন্ধুরা যে ভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে নিবেদিত প্রাণে ভালবাসার টানে রাত্রির যাত্রীর প্রচারণা করে চলেছেন তা একটি বিরল চিত্র আমাদের চলচ্চিত্র জগতে। আর তাই আমি এই সম্মাননার সকল সম্মান আমাদের রাত্রির যাত্রীর সকল সহযাত্রী বন্ধুদের দিতে চাই। প্রিয় সহযাত্রী বন্ধুরাই রাত্রির যাত্রীর সকল সম্মানের মালিক বলে আমি মনে করি। আমি সব সময় বলি রাত্রির যাত্রী দেশের সকল সহযাত্রী বন্ধুদের ছবি। রাত্রির যাত্রী ছবির প্রচার-প্রচারণা দেখে অন্য সব পরিচালকরাও অনুকরণ করছে। রাত্রির যাত্রী সিনেমা প্রচারণায় নতুন একটি অধ্যায় তৈরি করেছে। আনন্দকণ্ঠ : ছবিটি কবে নাগাদ মুক্তি পাবে? হাবিবুল ইসলাম হাবিব : এ বছরেই মুক্তি পাবে। আনন্দকণ্ঠ : নির্মাতা হিসেবে আপনার সফলতার মূল মন্ত্র কী? হাবিবুল ইসলাম হাবিব : সফলতার মূলমন্ত্র একটিই। যথাযথ নির্মাণ। নির্মাণের সংজ্ঞা মেনে দর্শকের সামনে ছবি উপস্থাপন করতে পারলে কেন তা গ্রহণযোগ্য হবে না। নির্মাতা হিসেবে সফলতার মূলমন্ত্র হচ্ছে যতœ ও কষ্ট। ছবি নির্মাণ নিয়ে তাড়াহুড়ো না করে যতœ নিয়ে করতে হবে। আমার মনে হয় তাহলেই নির্মাতা হিসেবে সফল হতে পারবে। আনন্দকণ্ঠ : ‘রাত্রির যাত্রী’ সিনেমা হলের দর্শক খড়া কাটাতে কতটা ভূমিকা রাখতে পারে বলে আপনি মনে করেন? হাবিবুল ইসলাম হাবিব : বর্তমানে বাংলা চলচ্চিত্রে সুনামী চলছে। বাণিজ্যিকভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে আমাদের চলচ্চিত্র। শিল্পকে কখনও বাণিজ্যিক করা ঠিক না, তা জানি। তবে সেখানে আবার যদি বাণিজ্য না থাকে তাহলে টিকে থাকা খুব কঠিন। শিল্প ও বাণিজ্য দুটোই এক সঙ্গে হতে হবে। আমরা রাত্রির যাত্রী সিনেমার মাধ্যমে দর্শকদের হলে ফিরিয়ে আনতে চাই। এক্ষেত্রে আমরা সফল হবই ইনশাআল্লাহ। সামাগ্রিক অর্থে বাংলা সিনেমার প্রচারণা করছি রাত্রির যাত্রী সিনেমার মাধ্যমে। আনন্দকণ্ঠ : আপনি তো এক সময় মঞ্চ নাটকের সঙ্গেও দীর্ঘদিন পথ চলেছেনৃ হাবিবুল ইসলাম হাবিব : হ্যাঁ। শুধু গুপ থিয়েটারই করিনি। গুপ থিয়েটারের মাধ্যমে সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনও করেছি। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় পথনাটক ছিল আমাদের আন্দোলন সংগ্রামে প্রেরণার উৎস। ‘ব্যারিকেড চারদিক’ শিরোনামের পথনাটক তখন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু“ করে অলিগলিতেও মঞ্চস্থ হয়। এ ছাড়াও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সঙ্গেও কাজ করি। এরপর অনেকদিন নানা কারণে কাজ থেকে দূরে ছিলাম। ২০০০ সালের পর প্যাকেজ নাটক নির্মাণ করি। বিজ্ঞাপনও নির্মাণ করি বেশকিছু। এরপর আবার একটা গ্যাপ। দীর্ঘদিন পর সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধবের পরামর্শ কিংবা ভালোবাসায় ‘রাত্রির যাত্রী’ নির্মাণ করি। চিত্রনায়িকা মৌসুমী, আনিসুর রহমান মিলন, অরুণা বিশ্বাস, এটিএম শামসুজ্জামান, সালাহউদ্দিন লাভলু, সোনিয়া, লায়লা নাঈম, মারজুক রাসেল ও সাদিয়া আফরিনসহ অনেকেই ছবিটিতে অভিনয় করেছেন। আনন্দকণ্ঠ : বর্তমানে দেশীয় চলচ্চিত্র এক ধরনের অস্থিরতা মধ্যে আছে। এ প্রসঙ্গে কী বলবেন? হাবিবুল ইসলাম হাবিব : চলচ্চিত্রে আমরা যারা যুক্ত আছি তাদের সবার মধ্যে একটা আন্তরিকতা দরকার। সবাইকে এক সুরে একাত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। মিল অমিলের গরমিল দূর করতে হবে। একজন আরেক জনের প্রতি সহমর্মিতা থাকতে হবে। শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। আনন্দকণ্ঠ : যৌথ প্রয়োজনার ছবিগুলো খুব একটা নিয়ম মানছে না বললেই চলে। এ প্রসঙ্গে আপনি কি বলবেন? হাবিবুল ইসলাম হাবিব : যৌথ প্রযোজনার ছবি নিয়মনীতি মেনে করতে হবে। দেশের ক্ষতি করে কোন কিছু করা যাবে না। বাংলাদেশ আর ভারতের মধ্যে সত্যিকার যৌথ প্রযোজনা দুই দেশের জন্যই লাভ জনক হবে যদি দুই দেশের অংশগ্রহণে ভারসাম্য থাকে। যৌথ প্রযোজনার সিনেমার ক্ষেত্রে দু’দেশের শিল্পী এবং কলাকুশলীদের সমান অংশগ্রহণ থাকতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প লাভবান হবে। আনন্দকণ্ঠ : যৌথ প্রয়োজনার নীতিমালা কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করছেন? হাবিবুল ইসলাম হাবিব : যৌথ প্রয়োজনার ছবিগুলো সঠিকভাবে হওয়া উচিত। আসলে বিষয়টি যৌথ হওয়া দরকার যুক্তিসঙ্গত হওয়া দরকার। সবার ওপরে আমার দেশ। আমার দেশের সিনেমা, শিল্পী। আমার দেশের স্বার্থ হতে হবে আগে। সব কিছু সমান সমান হতে হবে। আমাদের দেশের নামী-দামী শিল্পী থাকতে হবে। লোভ দেখানো যৌথ প্রযোজনা করলে হবে না নিয়মনীতি মেনে করতে হবে। দেশপ্রেমিক হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। দেশের উন্নয়নের জন্য যৌথ প্রযোজনা যেভাবে হওয়া দরকার বলে আমরা বিশ্বাস করি সেভাবে হওয়া উচিত। এভাবে যৌথ প্রযোজনা হলে সমস্যা নেই। আনন্দকণ্ঠ : ছবিটি নিয়ে প্রত্যাশা কেমন? হাবিবুল ইসলাম হাবিব : প্রত্যাশা তো অবশ্যই অনেক বড়। অন্য রকম একটি গল্পের ছবি এটি। প্রথাগত ভাবনা কিংবা প্রথাগত ফরম্যাটের বাইরে একটি সিনেমা বানানোর চেষ্টা করেছি। দর্শক দেখলেই তা বুঝতে পারবেন।
×