ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় আরও দুই সীমান্ত হাট হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:১০, ১৬ জুলাই ২০১৭

জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় আরও দুই সীমান্ত হাট হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্ত এলাকায় শীঘ্রই আরও দুটি নতুন সীমান্তহাট চালু হতে যাচ্ছে। এই দুটি বর্ডার হাট চালুর সব আনুষ্ঠানিকতা এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে দিল্লীর বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে। নতুন এই বর্ডার হাট দুটি স্থাপিত হতে যাচ্ছে মৌলভীবাজার জেলায়। এর একটি হাট স্থাপিত হবে জেলার জুড়ী উপজেলার পশ্চিম বটুলী ও ভারতের উত্তর ত্রিপুরার পালবস্তি সীমান্তে এবং অপরটি স্থাপিত হবে কমলগঞ্জ উপজেলার কুমারঘাট ও ভারতের কামালপুর সীমান্তে। এছাড়াও ভারতের মেঘালয় সীমান্ত এলাকায় আরও ৪টি বর্ডার হাট স্থাপনের প্রাথমিক সম্মতি প্রদান করা হয়েছে। এই ৪টি বর্ডার হাট স্থাপিত হবে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর-সায়েদাবাদ, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার-বাগানবাড়ী এবং ময়মনসিংহের ধোবাউড়া-ভূইয়াপাড়া সীমান্তে। বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকায় ৪টি বর্ডার হাট চালু রয়েছে। এগুলো হচ্ছে কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলার বালিয়ামারী সীমান্তে, সুনামগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার ডলোরা সীমান্তে, ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার পূর্ব মধুগ্রাম ও ছয়ঘড়িয়ার মধ্যবর্তী স্থানের সীমান্তে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার তারাপুর সীমান্তে। উভয় দেশের জনগণের সুবিধার্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ ভারত সফরকালে (৭-১০ এপ্রিল ২০১৭) নবায়নকৃত এমওইউর আওতায় বর্ডারহাটে বিক্রয়যোগ্য পণ্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্ডারহাটে পণ্য বিক্রেতার সংখ্যা ২৫ থেকে বৃদ্ধি করে ৫০ করা হয়েছে এবং পণ্য ক্রয়ের সীমা ১০০ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি করে ২০০ মার্কিন ডলার করা হয়েছে। দিল্লীর বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলার ড. নাহিদ রশীদ বর্ডার হাট সম্পর্কে বাসসের দিল্লী প্রতিনিধির কাছে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আশা প্রকাশ করেন যে, বর্ডার হাটের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও নির্ধারিত দামে উভয় দেশের মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য সংগ্রহ করতে পারবেন বিধায় চোরাচালান হ্রাস পাবে। ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট দুই দেশের সীমান্তে অনেকগুলো সীমান্তহাট চালু হয়েছে, যেখানে দুদেশের সীমান্ত এলাকার মানুষজন প্রতি সপ্তাহে অন্য দেশের পণ্য কেনার সুযোগ পাচ্ছেন। বাংলাদেশের ফেনীর ছাগলনাইয়া আর ভারতের শ্রীনগর সীমান্তে প্রতি মঙ্গলবার বসছে এরকম একটি সীমান্তহাট। দুই দেশের সীমান্তের ঠিক মাঝে তৈরি করা হয়েছে সীমান্তহাটের কাঠামো। যদিও সপ্তাহে মাত্র একদিন এখানটা সরগরম হয়ে ওঠে। চারদিকে ধানক্ষেত, তার মাঝে কয়েকটি আধাপাকা ঘর। একপাশে বাংলাদেশী বিক্রেতারা বসেছেন, অন্যপাশে ভারতীয় বিক্রেতারা। বিজিবি বা বিএসএফকে পাস বা পরিচয়পত্র দেখিয়ে বাজারে প্রবেশ করছেন ক্রেতারা। ফেনীর ছাগলনাইয়া আর ত্রিপুরার শ্রীনগরে এই সীমান্ত হাটটি বসে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। হাটের পাঁচ কিলোমিটার এলাকার মানুষের ওই হাটে নিয়মিত কেনাকাটা করার অনুমতি রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এই হাট শুধু কেনাকাটা নয়, দুই দেশের মানুষের যোগাযোগের জন্যও হাটটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই হাট নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া রয়েছে। প্রথমদিকে স্থানীয় মানুষজনই বেশি গেলেও, এখন অনেকেই বাইরে থেকে আসছেন। যারা দরকার মনে করে, তারা নিয়মিতই যাচ্ছে। তবে যাদের আত্মীয় স্বজন দুই দেশে রয়েছে, তাদের অনেকেই দূর থেকে আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করার জন্যে এখানে আসছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১০ সালের একটি সমঝোতা অনুযায়ী দশটি সীমান্তহাট স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে চালু হয়েছে ফেনী আর ত্রিপুরার সীমান্তের এই হাট। দুই দেশের সমঝোতা অনুযায়ী, প্রথম দিকে উভয় দেশ থেকে পঁচিশজন করে বিক্রেতা হাটে অংশ নিত। তবে এখন বিক্রেতা ৫০ জনে বৃদ্ধি করা হয়েছে। যদিও ক্রেতাদের সংখ্যা নিয়ে নির্দিষ্ট কোন সীমা নেই। হাটের আশপাশে পাঁচ কিলোমিটার এলাকার বাসিন্দাদের স্থায়ী পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছে, যেটি দেখিয়ে তারা সহজেই হাটে যেতে পারেন। তবে অন্যদেরও সাময়িক পাস নিয়ে হাটে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। বিজিবি এবং বিএসএফের সদস্যরা জানালেন, সাধারণত প্রতিটি হাটে প্রত্যেক দেশ থেকে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ এখানে কেনাকাটা করতে আসেন। এই হাটে টাকা ও রুপী, দুই মুদ্রাতেই লেনদেন হয়। বাংলাদেশী দোকানগুলোয় বিস্কুট, মাছ, প্লাস্টিক ও লোহার তৈজসপত্র, চানাচুর, কাপড় বিক্রি করতে দেখা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় চোখে পড়ে মাঝের সারিতে থাকা মাছের দোকানগুলোয়। সেখানে জ্যান্ত কই, মাগুরের পাশাপাশি রয়েছে শুঁটকি আর ইলিশ মাছও। নিয়মানুযায়ী, একজন ক্রেতা স্ব স্ব দেশের মুদ্রায় সর্বোচ্চ দুইশ’ ডলার মূল্য সমপরিমাণের কেনাকাটা করতে পারবেন। তবে কোন বিক্রি বা মজুদের উদ্দেশ্যে একাধিক পণ্য কেনা যাবে না। হাটের ঠিক মাঝে একটি ভবনে দুদেশের একটি সমন্বয় অফিস রয়েছে। সেখানে টাকা ও রুপী বিনিময়ের সুযোগও রয়েছে। বাংলাদেশী কয়েকজন ক্রেতা জানালেন, এই হাটে আসা অনেক পণ্য বাংলাদেশে পাওয়া গেলেও, দামে অনেক সস্তা হওয়ায় তারা প্রায় নিয়মিতই এখানে আসেন। একজন ক্রেতা জানালেন, ভারতীয় যে পণ্যটা ট্যাক্স দিয়ে দেশে আসে, সেটা ট্যাক্স ছাড়াই পাওয়া যাচ্ছে। এতে দাম বেশ কম পড়ছে। তাই কেনাকাটা করতে প্রায়ই তিনি এই হাটে আসেন।
×