ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত এ সপ্তাহে

জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নে ছয় দেশের প্রতিশ্রুতি

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ২৯ মে ২০১৭

জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নে ছয় দেশের প্রতিশ্রুতি

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ২০১৫ সালে সই হওয়া জাতিসংঘের যুগান্তকারী জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তিতে সমর্থন জানাতে ইউরোপ, কানাডা ও জাপানের চাপ প্রত্যাখ্যান করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বিদেশ সফর এক ধরনের অসহযোগিতামূলক সিদ্ধান্ত নেয়ার মধ্য দিয়ে ইতি টাললেন তিনি। ইতালিতে অনুষ্ঠিত জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের শেষ দিকে এ অচলাবস্থায় বিশ্বের অন্য নেতারা হতাশা ব্যক্ত করেছেন। খবর গার্ডিয়ান অনলাইনের। জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল বলেন, ‘আলোচনা ছিল বেশ জটিল, কিন্তু খুব যে অসন্তোষজনক তা বলবো না।’ তিনি বলেন, ‘এখানে আমাদের পরিস্থিতি ছিল ছয়ের বিপরীতে এক। এর অর্থ, যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তিতে থাকবে কিনা; তা এখনও পরিষ্কার না।’ সম্মেলন শেষে সাতটির মধ্যে ছয়টি দেশ প্যারিস পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করতে একটি ইশতেহার ঘোষণা করেন। এদিকে ক্ষুদে ব্লগ টুইটারে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রতিশ্রুতিতে যুুক্ত হবে কিনা; সেই সিদ্ধান্ত আগামী সপ্তাহে জানাবেন। শনিবার ট্রাম্প তার বিদেশ সফরের শেষ দিনে সিসিলি থেকে টুইট করে বলেন, প্যারিস চুক্তি নিয়ে আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আগামী সপ্তাহে ঠিক করব। ইতালীয় শহর তুরমেনিয়ায় দুই দিনব্যাপী বৈঠকে ছয়টি দেশের নেতারা ট্রাম্পের কাছে বারবার আহ্বান জানান যাতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কার্বন নিঃসরণকারী দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তি বাস্তবায়ন নেতৃত্ব গ্রহণ করে। জি-৭ এ জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আলোচনায় অগ্রগতির কথা জানিয়ে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্যারিস চুক্তিতে না থাকেন, তবে তিনি একটি বড় ভুল করতে যাচ্ছেন এবং চীনের জন্যও সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছেন’। ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ভারসাম্য ও আমেরিকার সুনাম রক্ষার জন্য এ চুক্তি অপরিহার্য। জি-৭ জলবায়ু পরিবর্তনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপস্থাপন করেছে। এটা কোন তুচ্ছ বিষয় না, যা অন্যদের জন্য ফেলে রাখা যাবে।’ ফ্রান্সের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে অনুমাননির্ভর কিছু বলতে নারাজ। তবে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প একজন ভাল শ্রোতা, বাস্তবজ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি ও যুক্তি প্রদর্শনে খোলামেলা।’ কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, তিনি কোন দেশকে কিছু শেখাতে যাবেন না। তবে তাঁর মতে, নিজের নিরাপত্তাবিধান ও জলবায়ুর বিষয়ে সচেতন না হলে কোন দেশই একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভবিষ্যত গড়তে পারবে না। অন্য নেতারাও ট্রাম্পকে হুঁশিয়ারি করে বলেন, অন্যদেশগুলো যখন মেনে নিয়েছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে নিজের প্রতিশ্রুতি উঠিয়ে নিয়ে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছেন। চুক্তি থেকে সরে আসার কিংবা ওবামা প্রশাসনের দেয়া প্রতিশ্রুতি থেকেও বেরিয়ে আসার সুযোগও জিইয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাঁর দেশে ২০০৫ সালে যে মাত্রায় গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন হয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে সেখান থেকে ২৬ থেকে ২৮ শতাংশ নিঃসরণ কমিয়ে আনবেন। যুক্তরাষ্ট্র যদি জাতিসংঘের জলবায়ু চুক্তি থেকে পুরোপুরি সরে আসে, তবে বিশ্বের তাপমাত্রা ০.২ সেলসিয়াস বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। শনিবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত চলা উত্তপ্ত আলোচনার পরও জি-৭ নেতারা ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন। পুরো আলোচনায় জর্জ বুশের আমলের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে, সাত জাতির নেতার মধ্যে বুশ একাই জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।
×