ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

‘অপমানে তুই জ্বলে উঠেছিলি সেদিন বর্ণমালা, সেই থেকে শুরু...’

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২০ মে ২০১৭

‘অপমানে তুই জ্বলে উঠেছিলি সেদিন বর্ণমালা, সেই  থেকে শুরু...’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দিনের খরতাপ শেষে বিকেলের মৃদু বাতাসে দুলছিল লালরঙা কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো। এমন সময় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বেদীর সামনে অপেক্ষমাণ শ্রোতাদের জন্য ভেসে আসে গানের সুর। অনেকগুলো কণ্ঠ মিলে যায় এক সুরে। সম্মিলত উচ্চারিত হয়Ñ অপমানে তুই জ্বলে উঠেছিলি সেদিন বর্ণমালা/সেই থেকে শুরু দিন বদলের পালা ...। বহ্নিশিখার শিল্পীরা এভাবেই সুরের আশ্রয়ে শ্রদ্ধা জানালো আসামের বাংলার ভাষাশহীদদের। গানের সুরে, কবিতার ছন্দে ও বক্তার আলোচনায় নিবেদন করা হলো ভালবাসা। তাদের উৎসর্গ করে সন্ধ্যার আলোয় প্রজ্ব¡লন করা হয় প্রদীপ। এভাবেই স্মরণ করা হলো ১৯৬১ সালের ১৯ মে ভারতের আসাম রাজ্যে বাংলাকে সরকারী ভাষার দাবিতে আন্দোলনে শহীদ হওয়া ১১ বীর বাঙালীকে। সেদিনের পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রাণ বিসর্জন দেয়া সেই ভাষাশহীদদের স্মরণানুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হলো শুক্রবার। দেশের সংস্কৃতি কর্মীবৃন্দের পক্ষ থেকে এ স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন দেশের সংস্কৃতি কর্মীবৃন্দ। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় বহ্নিশিখার শিল্পীদের পরিবেশিত ভাষার গানের সুরে। সঙ্গীত দলটির পরিবেশিত দ্বিতীয় গানের শিরোনাম ছিল ছিল ‘ও মুই না বলং অন্য ভাষা রে’। সম্মেলক পরিবেশনা শেষে একক কণ্ঠে গান শোনান আরিফ রহমান। তার কণ্ঠে গীত হয় ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনও করিলির বাঙালী/তোরা ঢাকা শহর রক্তে ভাসাইলি’। গান শেষে কবিতাকে আশ্রয় করে পরিবেশনা উপস্থাপন করেন আবৃত্তিশিল্পী মজুমদার বিপ্লব। পাঠ করেন আবদুল হাকিমের কবিতা ‘বঙ্গবাণী’। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন জোটের সহসভাপতি ঝুনা চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ ও সিলেট সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম সেলিম। সঞ্চালনায় ছিলেন হানিফ খান। গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘একসময় আসামে বাঙালীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। সে রাজ্যের বিধানসভাও পরিচালিত হতো বাংলা ভাষায়। ১৯৫০ সালের পর থেকে অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। রাজ্য বিভক্ত হয়ে গেলে অসমীয়ারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যায়। সে সময় তারা বাঙালীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করে। এমনকি বাংলা ভাষার বিদ্যালয় দখল করে অসমীয়া ভাষার বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘদিন ধরেই ১৯৬১ সালের ১৯ মে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের নিয়ে আলোচনা হয় না। আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশের সংস্কৃতিকর্মীরা তাদের পাশে রয়েছেন।’ হাসান আরিফ বলেন, ‘আমাদের ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে আসামের বাঙালীদের ভাষা আন্দোলনের যোগসূত্রতা রয়েছে। রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষাকে উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার। ১৯৬১ সালের ১১ জনই শুধু এ আন্দোলনের শহীদ নন, ১৯৬৪ ও ১৯৮৪ সালেও আন্দোলনে সেখানকার বাঙালীরা শহীদ হন। আজও সেই সঙ্কট বিদ্যমান রয়েছে।’ সিক্রেট অব হিস্ট্রি নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন ১৯৭৫ সালের ৪ নভেম্বর। জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নির্মমভাবে খুন হন জাতীয় চার নেতাÑ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামান। জেলের ভেতর জাতীয় চার নেতাকে নির্মম খুনসহ তৎপরবর্তী ক্যান্টনমেন্ট ও রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রকে উপজীব্য করে নতুন নাটক মঞ্চে এনেছে বুনন থিয়েটার। ‘সিক্রেট অব হিস্ট্রি’ শিরোনামে এ প্রযোজনাটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হলো শুক্রবার। নাটকটি রচনা করেছেন আনন জামান। নির্দেশনা দিয়েছেন শুদ্ধমান চৈতন। শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে প্রযোজনাটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা প্রদান করা হয় চার গুণী নাট্যজনকে। তারা হলেনÑ রামেন্দু মজুমদার, আতাউর রহমান, মামুনূর রশীদ ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ। উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে অতিথি ছিলেন তাজউদ্দীনকন্যা ও সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি। সম্মানিত অতিথি ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম, সংসদ সদস্য ডাঃ এনামুর রহমান, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মীর জাহিদ হাসান। নাটকের শুরুতে দেখা যায়, রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করে গদি দখল করা খুনী রাষ্ট্রপতি জেলের ভেতর হত্যাকৃত চার নেতার লাশ গোরস্তানে বয়ে এনেছে রাতের আন্ধারিতে কবরে ছেঁপে দেয়ার জন্য। গোরস্তানের আদি ভৌতিক আবহে খুনী রাষ্ট্রপতির মুখোমুখি হয় জেলখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত গার্ড, খুনী রিসালদার ও চার নেতার ছায়া শরীর। এভাবেই এগিয়ে যায় নাটকের কাহিনী। নাটকটিতে অভিনয় করেছেন আনন জামান, আশরাফুল বিলাস, তুষার কান্তি দে রাজন, আবু ফাহিম, উচ্ছ্বল হাসান, আবিদ হাসান নির্ঝর, শাত-ইল রাস, হাজেরা আক্তার কেয়া, অমিত চৌধুরী প্রমুখ। জাদঘুর দিবসের সেমিনার, প্রদর্শনী ও সঙ্গীতসন্ধ্যা আইকম বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিটি আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে শুক্রবার সকালে এক সেমিনার আয়োজন করে। সেমিনারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘মিউজিয়ামস এ্যান্ড কনটেস্টেড হিস্টোরিজ : সেইং দ্য আনস্পিকেবল ইন মিউজিয়ামস‘। এদিকে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সঙ্গীতসন্ধ্যা। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন নেপাল জাদুঘর পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক প্রেম সিংহ বাসনায়েত। সভাপতিত্ব করেন বিক্রমপুর জাদুঘরের সভাপতি ড. নূহ-উল-আলম লেনিন। প্রেম সিংহ বাসনায়েত বলেন, বিশ্বব্যাপী চলমান যুদ্ধ ও সংঘাতে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তথা জাদুঘর ও প্রতœতাত্ত্বিক সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে। তিনি তার নিজ দেশ নেপাল ও ইরাকসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দিয়ে বলেন, এই সংঘাত এখন আঘাত করেছে জাদুঘরে। সন্ধ্যায় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনী গ্যালারিতে উদ্বোধন হয় বগুড়ার মহাস্থানগড় অঞ্চলে প্রাপ্ত নিদর্শনসমূহ নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনী। উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থমন্ত্রী বলেন, আজকে যারা গান শুনতে এসেছেন, তারা প্রত্যেকেই সঙ্গীতবোদ্ধা। আমি আজকে এখানে এসেছি বন্যার গান শুনতে। আজকের সন্ধা শুধুই বন্যার। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র কমলাপুরাণের প্রদর্শনী সম্প্রতি দিল্লীতে অনুষ্ঠিত দাদা সাহেব ফালকে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে ‘কমলাপুরাণ’ ছবির জন্য সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন আমিনুর রহমান মুকুল। ওই উৎসবেই ছবিটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে দেশের মাটিতে শুক্রবার হয়ে গেল কমলাপুরাণের উদ্বোধনী প্রদর্শনী। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে পরপর তিনটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। সরকারী অনুদানে নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটির প্রযোজনা করে স্টোরিবক্স। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে যৌথ প্রদর্শনী বারো শিল্পী মিলে তৈরি করেছেন ঢাকা আর্টিস্ট গ্রুপ। শিল্পীরা হলেনÑ জামাল আহমেদ, লাইলা শারমিন, জাহির হোসেন, দেবাশীষ পাল, আনিসুজ্জামান আনিস, দুলাল চন্দ্র গাইন, রেজাউল ইসলাম লাভলু, শাহীন আক্তার লিপি, আবদুল আজিজ, সৈয়দ মোহাম্মদ শামীম, ফামিদা খাতুন এবং আবদুস সাত্তার তৌফিক। ঢাকা আর্টিস্ট গ্রুপের শিল্পীরা মিলে আয়োজন করেছেন যৌথ প্রদর্শনী ‘সেন্স, পারসেপশন এ্যান্ড ইন্টারপ্রেটেশন’ বা ‘অনুভব, চৈতন্য ও উপস্থাপনা’। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনীতে দেশের সমসমায়িক চিত্রকলার বহুমুখী উপস্থাপনা প্রদর্শিত হবে। মা দিবস উপলক্ষে ‘জননী মৃন্ময়ী’ গত ১৪ মে ছিল বিশ্ব মা দিবস। এ উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে আবৃত্তি প্রযোজনা ‘জননী মৃন্ময়ী’। এটি আবৃত্তি সংগঠন কল্পরূপের এটি দ্বিতীয় আবৃত্তি প্রযোজনা। প্রযোজনাটি গ্রন্থনা ও নির্দেশনা করেন নাজমুল আহসান তরুণ। গীতাঞ্জলি ললিতকলা একাডেমির রবীন্দ্র নজরুল উৎসব বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে দুইদিনের উৎসবের আয়োজন করেছে গীতাঞ্জলি ললিতকলা একাডেমি। শুক্রবার সন্ধ্যায় উত্তরার রবীন্দ্র সরনি এলাকার প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ের এ উৎসবের সূচনা হয়। প্রথম দিনের আয়োজনে ছিল গীত, বাদ্য, নৃত্য, আবৃত্তি ও আলোচনা।
×