ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তরুণী গৃহকর্মীকে শরীরে গরম পানি ঢেলে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২২ মার্চ ২০১৭

তরুণী গৃহকর্মীকে শরীরে গরম পানি ঢেলে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা

নিজস্ব সংবাদদাতা, মংলা, ২১ মার্চ ॥ অভাবের তাড়নায় গৃহ পরিচারিকার কাজ করতে গিয়ে গৃহকর্তাসহ পরিবারের অমানুষিক নির্যাতনে মংলার গ্রামের বাড়িতে ফিরেছে স্বামী পরিত্যক্তা এক তরুণী। গৃহকর্তা ও তার পরিবারের লোকজন এই গৃহকর্মীকে মারধর করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি গরম পানি ছুড়ে জ্বলসে দেয়াসহ কেরোসিন ঢেলে পুড়ে দেয় তার পুরো শরীর। টানা ৪ দিন খুলনা মেডিক্যালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মঙ্গলবার ভোর রাতে মারা যায় সে। নিহতের পরিবার ও পুলিশ জানায়, মংলার সিগনাল টাওয়ার এলাকার বৃদ্ধ মোজাম সরদারের মেয়ে ফাতেমা বেগম প্রায় ৯ মাস আগে রাজধানীর দক্ষিণ কোরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় জনৈক দোলেয়ারের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ নেয়। কোন বেতন ছাড়াই পেটে ভাতে কাজ করছিল ফাতেমা। বৃহস্পতিবার সকালে ফাতেমা বাড়ির লোকজনের কাপড় ধুলে দুটিতে রং লেগে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গৃহকর্তা দেলোয়ার ও তার পুত্র আশিক তাকে (ফাতেমা) মারধর করে। পরে গৃহকর্ত্রী সালমা গৃহকর্মীর শরীরে ফুটন্ত গরম পানি ছুড়ে দেয়। এতে ফাতেমার শরীরে ফোসকা পড়ে। অবস্থা বেগতি দেখে বাথরুমে আটকে রেখে তার পুরো শরীরে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে তার পরিবারকে মোবাইল ফোনে জানানো হয় ফাতেমার শরীর অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। এ অবস্থায় ঢাকায় তার কোন চিকিৎসা না করেই এদিন সন্ধ্যায় প্রাইভেটকার যোগে ফাতেমাকে মুমূর্ষু অবস্থায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করে তার পরিবারকে আসতে বলেই পালিয়ে যায় গৃহকর্তা দোলোয়ারের পরিবার। এরপর ফাতেমার স্বজনরা হাসপাতালে পৌঁছানোর পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ফাতেমা। সেখান থেকে মঙ্গলবার নিহতের মরদেহ মংলায় আনার পর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বাগেরহাট মর্গো প্রেরণ করে পুলিশ। মৃত্যুর আগে হাসপাতালে স্বজনদের কাছে নির্যাতনের বর্ণনা দেয় ফাতেমা বেগম। আর তার এ বর্ণনা মোবাইলে ধারণ করা হয় ভিডিওসহ। এ বর্ণনা কান্না জড়িত ফাতেমা নিজেকে বাঁচানোর আকুতি জানায়। আর আগুন আগুন বলেই কাঁদতে দেখা যায়। সে জানায়, প্রথমে বাড়ির গৃহকর্তা দেলোয়ার ও তার ছেলে তাকে মারধর করে। পরে গৃহকর্ত্রী সালমা শরীরে ফুটন্ত গরম পানি ছুড়ে মারে। এ সময় ফাতেমা তখন ক্ষত যন্ত্রণায় ছটফট করছিল তখন তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিবর্তে উদ্বুদ্ধ করা হয় নিজের শরীরে আগুন দেয়ার জন্য। নানাভাবে চাপও প্রয়োগ করা হয়। প্রতিবেশীরা যাতে না জানতে পারে সেই কারণে বাথরুমে আটকে রাখা হয় গরম পানিতে শরীর জলসানো ফাতেমাকে। পরে বাড়ির পাশের একটি মুদি দোকান থেকে কেরোসিন কিনে এনে তারে পুরো শরীরে ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। মৃত্যুও আগে মোবইল ফোনে ধারণকৃত এমন বর্ণনা দেখে কাঁদলেন তার বাড়িতে লাশ দেখতে আসা প্রতিবেশীরা। নিহত ফাতেমার বড় বোন অরুণা বেগম জানান, যে বাড়িতে কাজ করছিল ফাতেমা সেই বাড়ির গৃহকর্ত্রী তার দূরসম্পর্কের আত্মীয়। ভাল কাজ ও বেতনের প্রলোভন দিয়ে তাকে কাজে নেন গৃহকর্তা ও তার স্ত্রী। তিনি ছোট বোনের ওপর চালানো নির্মম এ নির্যাতনের বিচার দাবি করেছেন। ফাতেমার ছোট ভাই ইনুছ সরদার জানান, তাকে গৃহকর্ত্রী সালমা ফোন করে তাকে বলেন, তোমার বোনের গায়ে আগুন লেগেছে। তুমি তাকে নিতে আস। পরের দিন জানায়, ফাতেমাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজে আনা হয়েছে। পরে হাসপাতালে গিয়ে দগ্ধ বোনকে ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি। মংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ লুৎফুর রহমান জানান, খবর পেয়ে নিহত ফাতেমার বাড়িতে পুলিশ প্রাথমিক ঘটনা অনুসন্ধান করে। পরে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বাগেরহাট মর্গে প্রেরণ করা হয়। তিনি আরও জানান, ফাতেমাকে নির্মম নির্যাতনসহ আগুনে পুড়িয়ে দগ্ধ করা হয় বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রমান মিলেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিকে অবহিতসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
×