ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দিল্লী সফরে পাটপণ্যে ডাম্পিং ইস্যু প্রাধান্য পাবে

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৮ মার্চ ২০১৭

দিল্লী সফরে পাটপণ্যে ডাম্পিং ইস্যু প্রাধান্য পাবে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফরে ভারতে রফতানি হওয়া পাটপণ্যে এ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের সমস্যাকে প্রাধান্য দিচ্ছে ঢাকা। এই সফরে বাংলাদেশের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) ঘোষণা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকে গচ্ছিত ভারতীয় রুপীর বিষয়টিও তুলে ধরবে ঢাকা। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৭-১০ এপ্রিল দিল্লী সফর করবেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে বাংলাদেশী পাটপণ্যে ভারতের পক্ষ থেকে যে উচ্চ হারে এ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তার ফলে বাংলাদেশের পাটপণ্য যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেটাকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। দিল্লীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরন্দ্রে মোদির কাছে বিষয়টি তুলে ধরতে পারেন বলেও জানা গেছে। চলতি বছর শুরুতেই বাংলাদেশী পাটপণ্যে উচ্চ হারে এ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগ এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করে। ফলে ভারতে এখন পাটসুতা, চট ও বস্তা রফতানিতে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানকে প্রতি মেট্রিক টনে ১৯ থেকে ৩৫২ মার্কিন ডলার পর্যন্ত শুল্ক দিতে হবে। ভারতের এই সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশের পাটপণ্যের রফতানি আয় কমে যাবে এমন আশঙ্কাই করছেন সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা। কারণ, বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ রফতানি আয় আসে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করে। ভারতের গেজেট অনুযায়ী, বাংলাদেশী পাটপণ্য রফতানিতে আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত শুল্ক দিতে হবে। এর আগে দুই দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে পাটপণ্যে শুল্ক আরোপের বিষয়ে ভারতের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ। এ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারেরও অনুরোধ জানানো হয়। বিশেষ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গত মাসে মুম্বাইতে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের সঙ্গে এক বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরেন। এছাড়া গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর ঢাকা সফরের সময়ও পাটপণ্যের শুল্ক আরোপের বিষয়ে আলোচনা হয়। এদিকে ভারতের কাছে ৩২ হাজার কোটি টাকার ঋণ পাওয়ার প্রত্যাশায় রয়েছে বাংলাদেশ। এই ঋণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঠিক করা হয়েছে ১৭ প্রকল্পও। শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় ওই সফরেই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) ঘোষণা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতের কাছ থেকে পাওয়া প্রথম এলওসিতে এক বিলিয়ন, দ্বিতীয় এলওসিতে দুই বিলিয়নের পর এবার তৃতীয় এলওসিতে নমনীয় সুদে ৪ বিলিয়ন (৪০০ কোটি) ডলারের ঋণ পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা। এর আগে দুটি এলওসির মাধ্যমে ৩০০ কোটি ডলার ঋণের জন্য বাংলাদেশকে এক শতাংশ হারে সুদ দিতে হচ্ছে। কমিটমেন্ট ফি দিতে হচ্ছে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ হারে। ৫ বছরের রেয়াতকালসহ ২০ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এবার বাংলাদেশ ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের যৌথ সিদ্ধান্তের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৭ প্রকল্পের তালিকা করা হয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে দেখা গেছে, গত ১১ ডিসেম্বর একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে প্রকল্পগুলো বাছাই করা হয়। ১৭ প্রকল্পের মধ্যে ১৬টিতে অর্থের অঙ্ক বসানো হয়েছে। ওই ১৬টির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৫৭ কোটি ২৫ লাখ ডলার। যে ১৭ প্রকল্প প্রস্তাবের জন্য বাছাই করা হয়েছে, তার মধ্যে একটি রূপপুর পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্রের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। এজন্য ৯৪ কোটি ডলার প্রস্তাব করা হয়েছে। বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেলপথ প্রকল্পের জন্য ধরা হয়েছে ৫০ কোটি ১২ লাখ ডলার। গাজীপুর ৪৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল (গ্যাস/এলএনজি) বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ৪০ কোটি ২৪ লাখ ডলার প্রস্তাব করা হয়েছে। বগুড়া-ঝাড়খ- ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন প্রকল্পের জন্য ধরা হয়েছে ১৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার এবং মোল্লাহাটে ১০০ মেগাওয়াট সোলার পিভি পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্পের জন্য ১৫ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। পায়রা বন্দরে বহুমুখী টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ৩৫ কোটি ডলার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ৩০ কোটি ডলার। প্রস্তাবিত তালিকায় ভারতের জন্য মিরসরাইয়ে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ প্রকল্প রয়েছে। এ প্রকল্পের জন্য ধরা হয়েছে ১০ কোটি ডলার। মিরসরাইয়ে আরও একটি এক হাজার একরের ইপিজেড প্রকল্পের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ৫ কোটি ডলার। মহেশখালী/পায়রায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির একটি প্রকল্পের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ১০ কোটি ডলার। বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধারে প্রস্তাবিত একটি প্রকল্পের জন্য ধরা হয়েছে ১৯ কোটি ৬১ লাখ ডলার। এছাড়াও বেনাপোল-যশোর-নড়াইল-ভাটিয়াপাড়া-ভাঙ্গা সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের জন্য ১০ কোটি ডলার, রামগড়-বারইয়ারহাট চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে ৫ কোটি ডলার, কুমিল্লা (ময়নামতি)- ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সরাইল সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের জন্য ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ঈশ্বরদী আইসিডিকে সড়ক ও রেললাইনের সংযোগের জন্য ৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং আশুগঞ্জ-জকিগঞ্জ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যয় নির্ধারণ না করা একমাত্র প্রকল্প হচ্ছে ‘আপগ্রেডেশন অব এলসিএস টু আইসিপি অন বোথ সাইড’। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফরে বাংলাদেশ ব্যাংকে গচ্ছিত ভারতীয় রুপীর বিষয়টিও তুলে ধরবে ঢাকা। ভারতের নোট বাতিলে এই অর্থের ওপর প্রভাব পড়ছে। ভারত চাইলে দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংকে গচ্ছিত ভারতীয় রুপীর বিষয়টি সমাধান হতে পারে। উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ সালের ৬-৭ জুন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। আসন্ন ভারত সফর হবে মোদি সরকার ক্ষমতায় বসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর।
×