ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল সংযোগ উদ্বোধন ১৫ মার্চের মধ্যে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২ মার্চ ২০১৭

দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল সংযোগ উদ্বোধন ১৫ মার্চের মধ্যে

ফিরোজ মান্না/মেজবাহউদ্দিন মাননু, কুয়াকাটা থেকে ॥ দেশে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে হতে চলছে। উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম কুয়াকাটায় স্থাপিত সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন পরিদর্শনকালে এ কথা বলেন। কয়েকটি সাগর পাড়ি দিয়ে বঙ্গোপসাগরের সাগরকন্যা কুয়াকাটায় এসেছে অত্যাধুনিক সাবমেরিন ক্যাবল। বঙ্গোপসাগরের ৪৯০ কিমি গভীর থেকে এই ক্যাবলটির সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। মূল ক্যাবলটি ফ্রান্স থেকে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত ১৭টি দেশকে মালিক মেনে স্থাপিত হয়। এই দীর্ঘ ক্যাবলে ১৭টি দেশের ১৯টি কোম্পানির ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়েছে। পুরো ক্যাবলটি সাগরের তলদেশ দিয়ে স্থাপিত হয়নি। সেগমেন্ট টু তে মিশরের জাফারানা থেকে ইয়ানবু পর্যন্ত মরুভূমি দিয়ে চলে গেছে ফ্রান্সে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘২০ হাজার কিলোমিটার ক্যাবলের সঙ্গে বাংলাদেশ যুক্ত হয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। এর আগে সি-মি-উই -৪ ক্যাবলই ছিল ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ সরবরাহের একমাত্র ভরসা। এখন বিকল্প ক্যাবল দিয়ে এক হাজার ৫০০ জিবিপিএস (গিগবিাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ সরবরাহ হবে। এতে দেশের চাহিদাপূরণ করেও পাশর্^বর্তী দেশ নেপাল, ভুটান, মিয়ানমারে ব্যান্ডউইথ বিক্রি করা যাবে। ইতোমধ্যে ভুটানের আইসিটি মন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয় আলোচনা হয়েছে। তবে ভুটানে ব্যান্ডউইথ বিক্রিতে ভারতের ভূমি ব্যবহার হবে বলে বিষয়টি একটু সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। এর আগে আমরা ভারতে দশ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ বিক্রি শুরু করেছি। ভারতের যে কোম্পানি আমাদের থেকে ব্যান্ডউইথ কিনছে তাদের মাধ্যমেই নেপাল ও ভুটানে ব্যান্ডউইথ বিক্রি করা হবে। কুয়াকাটা ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে ঢাকার মগবাজার টেলিভবন পর্যন্ত তিন স্তরে সংযোগ স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। এ মাসের মধ্যেই এই সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে আসা ব্যান্ডউইথ বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হবে। সাবমেরিন ক্যাবলের এমডি মনোয়ার হোসেন জানালেন, বিটিসিএল, সামিট, ফাইবার এট হোম, লেভেল থ্রি, আমরা টেলিকম, ম্যাক্সনেট এরকম বড় কয়েকটি আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) এখান থেকে ব্যান্ডউইথ নিতে পারবে। আমরা বিটিসিএলের কাছে যে দামে ব্যাডউইথ বিক্রি করব তার একটি সমন্বয় করে আইএসপিদের কাছে ব্যান্ডউইথ দেব। আপাতত একশ’ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ বিটিসিএল ঢাকায় সরবরাহ করবে। পরবর্তী সময়ে প্রয়োজন অনুয়ায়ী ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা হবে। ভবিষ্যতে আরও কোন ক্যাবল সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হবে কি না জানতে চাইলে মনোয়ার হোসেন বলেন, অবশ্যই তৃতীয় সবমেরিন ক্যাবলের কথা ভাবতে হবে। পাশের দেশ ভারতে ২৩টি সাবমেরিন ক্যাবল যুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে মুম্বাইতে ১৩টি, চেন্বাইয়ে আটটি, কোচিন এ দুইটি ক্যাবল সংযুক্ত হয়েছে। ভারতের এক ব্যাঙ্গলোরে প্রতিবছর আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ১০ বিলিয়ন ডলার আয় করে থাকে। আমাদের দেশেও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা তৈরি করা হয়েছে। আমরাও বিশাল অঙ্কের টাকা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করতে পারব। এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫ কনসোর্টিয়ামের মেম্বার কোম্পানিগুলো হচ্ছেÑ বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড, চায়না মোবাইল ইন্টারন্যাশনাল, চায়না টেলিকম গ্লোবাল, চায়না ইউনাইটেড নেটওয়ার্ক কমিউনিকেশনস গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড, ডিজিবুতি টেলিকম এমিরেটস ইনটেগরেটেড, টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি, মিয়ানমার পোস্ট এ্যান্ড টেলিকম, অরিদো, ওরেঞ্জ, টেলিকমিউনিকাসি ইন্দোনোসিয়া ইন্টারন্যাশনাল, সৌদি টেলিকম কোম্পানি, সিঙ্গাপুর টেলিকমিউনিকেশনস লিঃ, স্পার্কেল, শ্রীলঙ্কা টেলিকম পিএলসি, টেলিকম ইজিপ্ট, টেলিকম মালয়েশিয়া বেরহাদ, টেলি ইয়েমেন, তুর্ক টেলিকম ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড ট্রান্স ওয়ার্ল্ড এ্যািসোসিয়েটস প্রাঃ লিমিটেড পাকিস্তান। টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন ভবনের হলরুমে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংএ আরও বলেন, ইতোমধ্যে সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশনের মূলভবন, বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র, জেনারেটর, ট্রান্সফরমার, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ সাবমেরিন ক্যাবলের যন্ত্রপাতি স্থাপন ও ডেটা সেন্টারসহ অবকাঠামোগত সকল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। উচ্চগতিসম্পন্ন আন্তর্জাতিক এসএমডব্লিউ-৫ (সাউথইস্ট এশিয়া-মিডলইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ) কনসোর্টিয়ামের এই ক্যাবলের ধারণক্ষমতা ২৪ টেরাবাইট। এখান থেকে সদস্য দেশগুলো যার যা প্রয়োজন সেই পরিমাণ ব্যান্ডউইথ কনসোর্টিয়াম থেকে নিয়েছে। এই মহাকর্মযজ্ঞের বাংলাদেশ অংশের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেন, ক্রমবর্ধমান ব্যান্ডউইডথের চাহিদা পূরণ এবং টেকসই কোম্পানি হিসেবে বিকশিত হলে ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়ন আরও সহজতর হবে। জাপানের ঠিকাদারিপ্রতিষ্ঠান এনইসি বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায় এ কাজটি করেছে। সাবমেরিন কার্যক্রম চালু করতে ৬৬০ কোটি টাকা ব্যয় ১০ একর জমির ওপর ল্যান্ডিং স্টেশনের মূল ভবনসহ সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। নির্মিত প্রকল্পটিতে বাংলাদেশ সরকার ১৬৬ কোটি টাকা ও বিএসসিসিএল ১৪২ কোটি টাকা ব্যয় করছে। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) প্রকল্পের বাকি প্রায় ৩৫২ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা দিয়েছে। ন্যাশন ওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) অপারেটর হিসেবে বিটিসিএলের এমডি মাহফুজ উদ্দিন আহম্মেদ, টিএসএসের এমডি কবির হাসান, বিএসসিসিএল’র পরিচালক মশিউর রহমান, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক এ কে এম শামীমুল হক ছিদ্দিকী, পুলিশ সুপার সৈয়দ মোসফিকুর রহমান, কলাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব তালুকদার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম সাদিকুর রহমান সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন। কর্মকর্তারা বলেন, প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল থেকে ২০০ জিবিপিএস (গিগাবিটস পার সেকেন্ড) পাওয়া যাচ্ছে। যেখান থেকে আমরা ভারতে ব্যান্ডউইথ রফতানি করছি। ভারত আরও বাড়াতে চায়। নতুন রুট হিসেবে ঢাকা-সিলেট-তামাবিল-শিলং-গৌহাটি-ভুটান পর্যন্ত সংযোগ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। এটি চালু হওয়ায় দেড় হাজার ব্যান্ডউডথ সরবরাহের সক্ষমতা অর্জন করেছে। ক্রমবর্ধমান ব্যান্ডউইডথের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে রফতানির মাধ্যমে বাংলাদেশ বড় অঙ্কের অর্থ উপার্জনের সুযোগ হয়েছে।’
×