ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা আরও একটি গাড়ি ফেরত দিল বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা আরও একটি গাড়ি ফেরত দিল বিশ্বব্যাংক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশীয় শুল্ক আইন ভঙ্গ করে নিজেদের দখলে রাখা আরও একটি গাড়ি ফেরত দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। রবিবার এই গাড়িটি আনুষ্ঠানিকভাবে জব্দ করা হয়। এ নিয়ে বিশ্বব্যাংক এ ধরনের মোট তিনটি গাড়ি শুল্ক গোয়েন্দা দফতরের কাছে ফেরত দিল। শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ১৬টি গাড়ি নিয়ম-বহির্ভূতভাবে হস্তান্তরের অভিযোগে তদন্ত শুরুর পর গাড়ি জমা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। তবে বাকি গাড়িগুলো কোথায় কি অবস্থায় আছেÑ কবে নাগাদ তা ফেরত দেয়া হবে সেটা নিশ্চিত করতে পারেনি শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক মইনুল খান। তিনি জানান, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে এসে ওই গাড়ি ও কাগজপপত্র শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন। কাগজপত্র যাচাই শেষে রবিবার গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। গাড়ির সঙ্গে ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফানের একটি চিঠিও ওই কর্মকর্তা দিয়ে গেছেন। সেখানে স্বেচছায় গাড়িটি সমর্পণের কথা জানিয়ে চলমান তদন্তে সার্বিক সহযোগিতার অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক সূত্রে জানা যায়, নেহাল ফারনান্দো নামে বিশ্বব্যাংকের এক কর্মকর্তা ওই টয়োটা গাড়িটি ব্যবহার করতেন। ২০০৮ সালের এপ্রিল থেকে ২০১০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে সিনিয়র রুরাল ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট হিসেবে কাজ করেন তিনি। বাংলাদেশে অবস্থানকালে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় তিনি গাড়িটি আমদানি করেন। কিন্তু বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে আইনানুযায়ী তিনি গাড়িটি এবং এর কাস্টমস পাসবুক হস্তান্তর করে যাননি। এতে শুল্ক আইন ভঙ্গ হয়েছে এবং তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর এ ধরনের ১৬টি গাড়ির বিষয়ে তদন্ত শুরু করলে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাংক দুটি গাড়ি হস্তান্তর করে। এ নিয়ে মোট তিনটি গাড়ি তারা শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের হাতে তুলে দেয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিদেশী সংস্থায় কর্মরত ‘প্রিভিলেজড পার্সনদের’ শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার নিয়ে চলমান এই তদন্তের অংশ হিসেবে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে তথ্য চাওয়া হয়। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ১৯ ফেব্রুয়ারি শুল্ক গোয়েন্দা দফতরে উপস্থিত হয়ে তাদের পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে। ২০০৩ সালের প্রিভিলেজড পারসনস (কাস্টমস প্রসিডিউর) রুলসের আওতায় বাংলাদেশে কর্মরত দাতা সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সংশিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মিশন হেডের সুপারিশ থাকতে হয় এবং এনবিআর ওই গাড়ির বিপরীতে একটি পাসবুক দেয়। ওই ব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে চলে গেলে তার আগে তাকে গাড়ি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া ও ওই পাস বইয়ের তথ্য কাস্টমসের নিবন্ধন খাতায় লিপিবদ্ধ করে যেতে হয়। মইনুল খান জানান, প্রিভিলেজড পারসনস রুলসের আওতায় আনা গাড়ি হস্তান্তর করার তিনটি বৈধ উপায় আছে। ওই গাড়ি নিলামে বিক্রি করা যেতে পারে, অন্য কোন প্রিভিলেজড পারসনকে হস্তান্তর করা যেতে পারে, অথবা সব ধরনের কর ও শুল্ক দিয়ে সাধারণ ব্যক্তির যানবাহন হিসেবে ব্যবহারের জন্য কাউকে হস্তান্তর করা যেতে পারে। কেউ যদি আইন অমান্য করে গাড়িগুলো তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করে থাকেন এবং সেই অর্থ যদি তিনি দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে শুল্ক আইন ও মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হতে পারে।
×