ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অমর একুশে গ্রন্থমেলা

আনুষ্ঠানিকতার প্রথম দিন, কৌতূহলী চোখে দেখা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আনুষ্ঠানিকতার প্রথম দিন, কৌতূহলী চোখে দেখা

মোরসালিন মিজান ॥ অমর একুশের মাস। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি। শফিক, রফিক, বরকতদের প্রতিবাদী চেতনা। সবই একাকার হয়ে মিশে গেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। বুধবার থেকে শুরু হলো মাসব্যাপী আয়োজন। প্রথম দিনটি যথারীতি আনুষ্ঠানিকতায় গেছে। শুরুটা করতে হবে। সেই শুরু হলো। উদ্বোধনী দিনে ছিল নানা আনুষ্ঠানিকতা। মূল আকর্ষণ হয়ে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেলা উদ্বোধন শেষে এবারও গ্রন্থমেলা ঘুরে দেখেন তিনি। ঘুরে দেখা বললে ভুল হবে। সাধারণ পাঠকের মতোই পছন্দের বই খুঁজেন। উপহার পাওয়া বইয়ের বাইরেও বিভিন্ন বই নিয়ে কৌতূহল দেখান বঙ্গবন্ধু কন্যা। তার চলে যাওয়ার পর সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় মেলা। এবারও দুটি অংশে মেলার আয়োজন। উভয় অংশেই ভাষা শহীদদের প্রতিকৃতি। বায়ান্নর স্মৃতি চিহ্ন। প্রতিবাদী চেতনার বহির্প্রকাশ ঘটেছে এখানে ওখানে। এবারও বাংলা একাডেমি অংশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত বইয়ের স্টল। কিছু স্টল প্রস্তুত। সাজানো। কিছু এখনও বাকি। এই অংশের উল্লেখযোগ্য আয়োজন লিটল ম্যাগ। বহেরা তলা প্রস্তুত। তবে প্রথম দিন তেমন কাউকে বসতে দেখা যায়নি। মেলার মূল অংশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সন্ধ্যায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কিছুটা নতুনভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে। উদ্যানের অধিকাংশ স্টল পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে আনা হয়েছে এবার। বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো স্টল সাজিয়ে নিয়েছেন প্রথম দিনই। বিশেষ করে চোখে পড়ে প্যাভিলিয়নগুলো। সবই ঘুরে দেখছিলেন পাঠক। তবে বই দেখার চেয়ে বেশি কৌতূহল ছিল মেলার চেহারা নিয়ে। কেমন হলো এবারের মেলার চেহারা? দলবেঁধে দেখতে আসেন অনেকে। বিদেশী অতিথিরাও ঘুরে দেখেন মেলা। শুরু করতে পারেনি অনেকে ॥ প্রথম দিন স্টল চালু করতে পারেনি ত্রিশটির মতো প্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে ছিলÑ বাংলা একাডেমির শিশু-কিশোর প্রকাশনা, প্রজ্বলন প্রকাশ, মেধা পাবলিকেশন্স, লাবনী, বর্ষাদুপুর, বনলতা প্রকাশনী, বাঙালায়ন, পিয়াল, অন্যরকম প্রকাশনী, গণপ্রকাশনী, মানুষজন, অভ্রপ্রকাশ, নভেল পাবলিশিং হাউস, পুঁথিনিলয়। প্রকাশদের কথা ॥ উদ্বোধনী দিন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম বলেন, এবারের মতো এত অপরিচ্ছন্নভাবে মেলা কখনও শুরু হতে দেখেনি। চরম অব্যবস্থপনার মধ্য দিয়ে মেলা শুরু হয়েছে। একই কথা বললেন অনুপম প্রকাশনীর মিলনকান্তি নাথ। তিনি বলেন, যেভাবে প্রস্তুত হয়ে মেলা শুরু হওয়ার কথা ছিল, তেমনটি এবার হয়নি। আমরা আশা করব, কালকের (বৃহস্পতিবার) থেকে মেলা গুছিয়ে উঠবে। এ প্রসঙ্গে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, ‘এ কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে মেলা অগোছালো রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার কারণে অনেকেই শেষ মুহূর্তে স্টল গোছাতে পারেননি। এসব বিষয় আমাদের নজরে পড়েছে, আশা করছি বৃহস্পতিবারের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তবে মেলা পুরোপুরি প্রস্তুত হতে আরও দুই-একদিন লাগতে পারে। নতুন বই মেলার প্রথম দিনেই প্রকাশিত হয়েছে শতাধিক নতুন বই। তবে প্রথম দিনে মেলার তথ্যকেন্দ্র চালু না থাকায় এর সঠিক পরিসংখ্যান জানা যায়নি। মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে ও প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম দিনেই বেশ কিছু ভাল বই চলে আসে পাঠকদের জন্য। মাত্র সোয়া তিন ঘণ্টার জন্য মেলা চলমান থাকলেও, অনেক পাঠকই নতুন বইটি প্রথম দিনেই সংগ্রহ করে নিয়েছেন। প্রথম দিনেই মেলায় এসেছে হাসান আজিজুল হকের নতুন দুইটি বই ‘দুয়ার হতে দূরে’ ও ‘স্মৃতিগদ্য : বন্ধনহীন গ্রন্থি’। দুইটিই প্রকাশ করেছে ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ। আগামী প্রকাশনী থেকে এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ’। ঐতিহ্য থেকে এসেছে বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণের সংকলন ‘ওঙ্কারসমগ্র’, যার শ্রুতিলিখন ও সম্পাদনা করেছেন নির্ঝর নৈঃশব্দ্য। এছাড়াও মেলার প্রথম দিনে এসেছে কবি-সব্যসাচী সৈয়দ শামসুল হকের ‘হ্যামলেট’, সমকালের নির্বাহী সম্পাদক মুস্তাফিজ শফির ‘মায়া মেঘ নির্জনতা’ ও মোস্তফা কামালের ‘রূপবতী’ এনেছে অন্যপ্রকাশ, মৌলি আজাদের ‘রক্তজবাদের কেউ ভালোবাসেনি’, আগামী প্রকাশনী, পিয়াস মজিদের ‘নিঝুম মল্লার’ এনেছে পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্স, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের ‘আন্দোলন-সংগ্রামে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’, ড. রশিকুন্্ নবী ও শাহীনূর রেজা সম্পাদিত ‘হাজার বছরের বাংলা গান সংগ্রহ’ এনেছে অনুপম, পাপড়ি রহমান ও নিয়াজ জামানের ‘অ্যালিস মানরো নির্বাচিত গল্প’, হরিশংকর জলদাসের ‘ইরাবতী’ এনেছে মাওলা ব্রাদার্স, ইমদাদুল হক মিলনের ‘নয়মাস’ এনেছে অনন্যা। আজকের মেলা মঞ্চ ॥ আজ বৃহস্পতিবার মেলা মঞ্চে অনুষ্ঠিতব্য সেমিনারে মূল পর্ব উপস্থাপন করবেন বিশ্বজিৎ ঘোষ, স্বপ্নময় চক্রবর্তী (ভারত)। আলোচনা করবেন জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, অমর মিত্র (ভারত), পারভেজ হোসেন, আনিসুল হক, জাকির তালুকদার। সভাপতিত্ব করবেন হাসান আজিজুল হক। বিকেলে থাকবে বাংলা ভাষার স্বরচিত কবিতা পাঠ। অংশ নেবেন ভারতের কবি আশিস স্যান্যাল, রাতুল দেববর্মণ, রফিক-উল-ইসলাম, বীথি চট্টোপাধ্যায়, কাজল চক্রবর্তী, আংশুমান কর প্রমুখ। সভাপতিত্ব করবেন হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
×