ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিশ্লেষণ

নিষিদ্ধরা সন্ত্রাসের উৎস নয়

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ৩১ জানুয়ারি ২০১৭

নিষিদ্ধরা সন্ত্রাসের উৎস নয়

যেসব দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার প্রধান উৎস নয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার নির্বাহী আদেশবলে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার সাতটি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। যুক্তরাষ্ট্রে আসতে দেয়া বিদেশী নাগরিকদের সন্ত্রাসী হামলার হাত থেকে আমেরিকানদের রক্ষা করতে আদেশটি জারি করা হয়েছে বলে এতে জানানো হয়। কিন্তু ২০০১ সালে ও এর পরে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা করেছিল বা হামলা চালিয়েছিল এমন কয়েক ডজন সন্দেহভাজন ব্যক্তির মধ্যে সামান্য কয়েকজনই নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন দেশগুলো থেকে এসেছিল। জিহাদপন্থী সন্ত্রাসী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তবা অভিযুক্ত হওয়ার আগেই নিহত ১৮০ জনের মধ্যে ১১ জন সিরিয়া ইরাক, ইরান, লিবিয়া, ইয়েমেন, সুদান বা সোমালিয়া থেকে এসেছিল। ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞায় এ সাতটি দেশ সুনির্দিষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত। ওয়াল স্টিট জার্নালের বিশ্লেষণে এটা দেখা যায়। ওই ১১ জনের মধ্যে কেউই সিরিয়া, লিবিয়া বা সুদান থেকে আসেনি। আর ১১ জনের মধ্যে কেউই হামলাসহ আমেরিকানদের মৃত্যু ঘটিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত এমন কোন বড় ধরনের হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল না। ২০০১ এর ১১ সেপ্টেম্বরে বা সেই সময় হতে যুক্তরাষ্ট্রে সংঘটিত কোন বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা বা হামলার ষড়যন্ত্র সাতটি দেশের লোকজনের দ্বারা চালানো হয়নি বলে মনে হয়। ১১ সেপ্টেম্বরের হামলায় জড়িত ১৯ ব্যক্তি মিসর, লেবানন, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছিল। ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর সংঘটিত বড় বড় ঘটনা সম্পর্কেও একই কথা সত্য। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চীফ অব স্টাফ রিস প্রধান রবিবার মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বলেন, কংগ্রেস ও ওবামা প্রশাসন ওই সাতটি দেশকে উদ্বেগের উৎস বলে গণ্য করেছিল। দেশগুলোরও নামের তালিকায় উৎস হলো সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১৫ সালে সই করেছিলেন এমন একটি বিল। বিলটি প্রথমে কিছু ডেমোক্র্যাটের সমর্থন নিয়ে রিপাবলিকান আইন প্রণেতারা উত্থাপন করেছিলেন। কয়েকটি দেশের নাগরিক ইরাক ও সিরিয়াতে ইসলামিক স্টেট ও অন্যান্য দলের পক্ষে লড়াই করছে এবং তারা যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশ করতে পরেÑ এমন উদ্বেগ থেকে বিলটির উৎপত্তি হয়। প্রতিনিধি পরিষদে উত্থাপিত বিলটি ৯৩ জনসহ উদ্যোগতা ছিলেন এবং তাদের এক-তৃতীয়াংশই ছিলেন ডেমোক্র্যাট। এক ফেডারেল প্রোগ্রামে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও অন্য প্রায় তিন ডজন দেশ থেকে লোকজনকে ব্যবসা ও অবকাশ যাপনের জন্য কোন ভিসা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের অনুমতি দেয়া হয়। ২০১৫ সালের আইনে ওই প্রোগ্রাম সংকুচিত করা হয়। আইনটি বিধান করা হয় যে, অনুমোদিত দেশগুলোর কেউ ইরান, ইরাক, সুদান ও সিরিয়া গিয়ে থাকলে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করার আগে কোন মার্কিন ভিসা নিতে হবে। ২০১৬ সালে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দফতর ওই চারটি দেশের সঙ্গে সিরিয়া, সোমালিয়া ও ইয়েমেনের নামও যোগ করে। ১১ সেপ্টেম্বরে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের ভেতর সন্ত্রাসী সহিংসতা ঘটানোর লক্ষ্যে কাজ করে ছিল বলে সব সন্দেহভাজন মধ্যে শতকরা প্রায় ৮৫ ভাগ ছিল মার্কিন নগরিক বা বৈধ রেসিডেন্ট এবং অর্ধকে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী নাগরিক। নিউ আমেরিকা ফাউন্ডেশন নামে এক নির্দল গবেষণা সংস্থা এ পরিসংখ্যান জানায়। এতে ১১ সেপ্টেম্বরের হামলকারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। জার্নালের উপাত্ত বিশ্লেষণের অংশ হিসেবে তাদের যোগ করা হয়। ২০০৯ সালে পোর্ট হুডের গোলাগুলিতে জড়িত নিদাল হাসান যুক্তরাষ্ট্রেই জন্ম নিয়েছিলেন। তৎকালীন এক ইউএস আর্মি মেজর হাসান ১৩ জনকে হত্যা ও ৩১ জনকে আহত করেন। ২০১৩ সালে বস্টন ম্যারাথনে দুই ভাই তামেরলান ও জোঘার জারনায়েভ বোমা হামলা চালালে তিনজন নিহত এবং আরও কয়েক শত আহত হয়। দু’ভাইয়ের জন্ম হয়েছিল যথাক্রমে রাশিয়া ও কিরগিস্তানে।
×