ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় ‘উল্লম্ফন’

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১ জানুয়ারি ২০১৭

ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় ‘উল্লম্ফন’

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ২০১৬ সাল শেষে দেশের অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। পরিচালন মুনাফা বাড়লেও ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা আরও অনেক কম। এ পরিচালন মুনাফা থেকে ব্যাংকের ঋণ ও খেলাপী ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে লোকসান দেয়ায় এর বিপরীতে প্রভিশনের পরিমাণ আরও বাড়বে। ফলে ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা আরও কমবে। এদিকে ব্যাংকগুলোকে গত বছরের পরিচালন মুনাফা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে হবে ও স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের জানাতে হবে। ব্যাংকগুলো বলছে, সার্বিকভাবে আগের বছরের তুলনায় বেসরকারী খাতে ঋণপ্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। বিশেষ করে জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ হয়েছে। আমদানি খাতও অনেক গতিশীল ছিল। এছাড়া সার্ভিস চার্জ থেকেও মুনাফার একটি বড় অংশ এসেছে। এগুলোর প্রভাব মুনাফার ওপর পড়েছে। ব্যাংকগুলো থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, বেসরকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা সবচেয়ে বেশি। ২০১৬ সাল শেষে ব্যাংকটির মোট পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২ হাজার ৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ১,৮০৮ কোটি টাকা। ২০১৬ সাল শেষে এক্সিম ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৬৯০ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৬০৮ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ১১০৪ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৮৪৮ কোটি টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারী একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, যে কোন ব্যবসার প্রবৃদ্ধি খুবই স্বাভাবিক। ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফাতেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে মুনাফা খুব সাংঘাতিক বেড়ে যাবে তা নয়। এছাড়া ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা প্রকৃত মুনাফা নয়। বছর শেষে পরিচালন মুনাফা থেকে কর, প্রভিশনসহ অনেক কিছু বাদ দিয়ে নিট বা প্রকৃত মুনাফা হিসাব করা হয়ে থাকে। ফলে মুনাফা খুব বেশি বাড়বে বলে মনে হয় না। এদিকে টানা দুই বছর পরিচালন লোকসান গোনার পর ২০১৬ সালে এসে আবারও পরিচালন মুনাফা করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শতভাগ রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক লিমিটেড। ২০১৬ সাল শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের এ ব্যাংকটি পরিচালন মুনাফা করেছে ১৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এর আগের দুই বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে ব্যাংকটির পরিচালন লোকসানের পরিমাণ ছিল ২৫৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং ২০১৪ সালে লোকসানের পরিমাণ ছিল ৯৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে বেসিক ব্যাংকের মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৭৫৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, ২০১৬ সালে আমানতের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৭১৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে বেসিক ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা এবং ২০১৬ সালে ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৪৮৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে বেসিক ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ছিল ৫০.৪৩ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে খেলাপী ঋণের পরিমাণ নেমেছে ৪৯ শতাংশে। ২০১৬ সাল শেষে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৫০৮ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৪১৪ কোটি টাকা। নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সাউথ বাংলা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ১৫৪ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে ব্যাংকটির মুনাফা ছিল ৮৩ কোটি টাকা। ২০১৬ সাল শেষে মেঘনা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১০২ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল ৬৮ কোটি টাকা।
×