ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে অবৈধ ইটভাঁটি থেকেও আদায় করা হচ্ছে ভ্যাট

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬

রাজশাহীতে অবৈধ ইটভাঁটি থেকেও  আদায় করা হচ্ছে ভ্যাট

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী অঞ্চলে নিয়ম ভেঙ্গে গড়ে ওঠা ইটভাঁটি থেকেও আদায় করা হচ্ছে ট্যাক্স-ভ্যাট। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র না থাকলেও অবৈধ এসব ইটভাঁটি থেকেও রীতিমতো বিপুল টাকা ট্যাক্সও আদায় করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পরিবেশ অধিদফতরের ভাষ্য, আইন না মেনে গড়ে ওঠা ভাঁটিগুলোর বিরুদ্ধে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে। আর ইটভাঁটি মালিকরা বলছেন, পরিবেশবান্ধব ইট তৈরিতে সহায়তায় সরকার এগিয়ে না এলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। ইট প্রস্তুত ও ভাঁটি স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ অনুযায়ী আবাসিক এলাকা ও কৃষি জমিতে ইটভাঁটি করা যাবে না। কিন্তু এ আইনের কোন তোয়াক্কা না করেই রাজশাহী অঞ্চলে গড়ে উঠেছে অন্তত ১৭৩টি ইটভাঁটি। ভাটা মালিকদের অভিযোগ, আইনী জটিলতার কারণে তারা ছাড়পত্র ও লাইসেন্স পাচ্ছেন না। তবে চাঁদা দিয়ে চালাতে হচ্ছে এসব ইটভাটি। বৈধতা না থাকলেও প্রতি ১০লাখ ইটের বিপরীতে প্রায় চার লাখ টাকা ভ্যাটও দিতে হচ্ছে তাদের। রাজশাহীর পবা উপজেলার কুখ-ি জয়পুর এলাকার ইটভাঁটি মালিক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আইন অনুযায়ী কৃষি জমি, আবাসিক ও বন বা বাগান এলাকায় ৩-৪ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাঁটি করা যাবে না। একই সঙ্গে ইট পরিবহনের জন্য সরকারী পাকা সড়কও ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে এই আইন মানা আমাদের জন্য কঠিন। তাই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র না পেলেও ভাঁটি স্থাপন করছেন তারা। অবৈধ ভাঁটির কারণে পুলিশের উৎপাতও বেশি। থানা পুলিশকে চাঁদা দিয়েই ইটভাঁটি টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে। একই উপজেলার কিসমত কুখ-ি এলাকার ইটভাঁটি মালিক ফজলুর রহমান বলেন, অবৈধ ইটভাঁটি হলেও তাদের ভ্যাটের ক্ষেত্রে কোন ছাড় নেই। লাখ লাখ টাকা সরকারকে ভ্যাট দিচ্ছি অথচ বৈধতা পাচ্ছি না বলে অভিযোগ করেন তিনি। এদিকে, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়কারী তন্ময় সান্যাল বলেন, সরকার অনুমোদিত যে চারটি পদ্ধতিতে ইট পোড়ানো বা প্রস্তুতের কথা বলা হয়েছে, তা খুবই ব্যয়বহুল। একারণে উদ্যোক্তারা আগ্রহী হচ্ছে না। এছাড়া মালিকদের কড়া নজরদারির মধ্যে আনতে হবে বলেও জানান তিনি। রাজশাহী ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ সদরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যমান আইনের জটিলতা কাটিয়ে ওঠা জরুরী। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে যে ইট তৈরির কথা বলছে সরকার, এজন্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। রাজশাহী পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ মামুনুর রশিদ জানান, নানা কারণে প্রভাবশালীরা অনুমোদন না নিয়েই ইটভাটি তৈরি করছেন। মাঝেমধ্যেই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। জরিমানাও করা হচ্ছে। জানা গেছে, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে জেলার ১১৮টি ইটভাঁটিতে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল প্রায় তিন কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় হয়েছে আড়াই কোটি টাকার ওপরে। আর ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ১২৪ ইটভাটায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকায় ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ভ্যাট কর্তৃপক্ষ। তবে আদায় হয়েছে তিন কোটি সাড়ে ৮৬ লাখ টাকা। আর সার্টিফিকেট মামলা চলছে ১০৪টি ইটভাঁটির বিরুদ্ধে। রাজশাহী কাস্টমস এক্সসাইজ ও ভ্যাট কার্যালয়ের ডেপুটি কমিশনার রুহুল আমিন বলেন, কোন ভাঁটি বৈধ আর কোনটি অবৈধ এটি দেখার বিষয় নয়। নিয়ম অনুয়ায়ীই ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে।
×