স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবৈধ পথে বিদেশী চ্যানেলে দেশী পণ্যের বিজ্ঞাপন ও অবৈধ ডাউনলিঙ্ক চ্যানেল বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে চলমান আন্দোলন স্থগিত করেছেন টেলিভিশন মালিক, কলাকুশলীসহ সংশ্লিষ্টদের সংগঠন মিডিয়া ইউনিটি। তাদের দাবির বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাসে শনিবার ঢাকা ক্লাবে সংহতি সমাবেশের মাধ্যমে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন সংগঠনের আহ্বায়ক ও একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মোজাম্মেল বাবু। এ সময় মিডিয়া ইউনিটির নেতৃবৃন্দ যৌক্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন বলে দাবি করেন। সে সঙ্গে অবিলবম্বে সরকারী আশ্বাস বাস্তবায়ন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিদেশী চ্যানেলে দেশী বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে দেশের টাকা ‘অবৈধভাবে’ বিদেশে ‘পাচার’ হয়ে যাচ্ছে; এমন অভিযোগে ৫ নবেম্বর আন্দোলন শুরু করে মিডিয়া ইউনিটি। সাংবাদিক, ক্যামেরা পার্সন, অভিনয়শিল্পী, নাট্যকর্মী, অনুষ্ঠান নির্মাতা, নাট্যনির্মাতা, বিজ্ঞাপন নির্মাতা, প্রযোজক ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিনিয়োগকারী, ব্রডকাস্টারদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল মিডিয়া ইউনিটি।
সংহতি সমাবেশের শুরুতেই মিডিয়া ইউনিটির আন্দোলনের সফলতা অর্জনের নানা বিষয় তুলে ধরেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, এ বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে চ্যানেলগুলোকে নিয়ে নতুন আইন প্রণয়ন করবে সরকার। ডিটিএইচ (ডাইরেক্ট টু হোম)-এর মাধ্যমে আমাদের সব চ্যানেল ডিজিটালাইজড হয়ে যাচ্ছে। কন্ডিশনাল একসেসের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে নগরী, জেলা, উপজেলাসহ সারা দেশে তা কার্যকর হবে। এটা যখন হয়ে যাবে তখন আর টিআরপি নিয়ে সমস্যা থাকবে না। এটা হলে কোন্ টেলিভিশন কত বেশি পপুলার, কোন্ টেলিভিশন কতবার দেখা হয়েছে, ডিজিটাল সার্ভিস থেকে আমরা ডাটা পেয়ে যাব। এ সময় তিনি বাংলাদেশের মেধাবী নির্মাতাদের নিয়ে টেলিভিশনে আন্তর্জাতিকমানের অনুষ্ঠান নির্মাণের আহ্বান জানান।
এর পরেই চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান ও একাত্তরের প্রধান নির্বাহী মোজাম্মেল বাবুর বিরুদ্ধে করা ১০০ কোটি টাকার মানহানি মামলা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আমরা সবাই বন্ধু-সুহৃদ। আলোচনার মাধ্যমে সবকিছুই আদায় করা সম্ভব।
সমকাল প্রকাশক ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, চ্যানেল মালিকরা মিডিয়াকে ব্যবহার করে একে অপরের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছেন। মিডিয়াকে ব্যবহার না করলে ঘটনা এতদূর গড়াত না। এমনটি চলতে থাকলে কিন্তু অ্যাটকো (টেলিভিশন চ্যানেলে মালিকদের সংগঠন) দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। এ সময় তিনি প্রতিবছর বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা বিদেশে অবৈধভাবে পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
এনটিভির চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী বলেন, শুধু বিদেশী চ্যানেলে দেশী পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করলেই চলবে না, আমাদের আরও কাজ করতে হবে। সরকারী ঘোষণার পাশাপাশি তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। শিল্পী সমাজকে মাঠে নামতে বাধ্য করা হয়েছে। তাদের দাবিগুলো যদি না মানা হয় তাহলে আমাদের সংস্কৃতি ধ্বংস হয়ে যাবে।
এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বলেন, মিডিয়া ইউনিটিকে নিয়ে কোন ধরনের অপপ্রচার না করার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানান। সে সঙ্গে টেলিভিশন শিল্পী-কলাকুশলীদের যৌথ সংগঠন এফটিপিওর পাঁচ দফা দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বলেন, শিল্পী ও কলাকুশলীদের দাবিগুলো যৌক্তিক।
ডিবিসির চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, টেলিভিশন শিল্পের বিকাশে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আমাদের উদ্যোগের মাধ্যমে শিল্পী-কলাকুশলী সবার উন্নয়ন সম্ভব হবে বলেই আমি মনে করি। এই শিল্পের সমাধানে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
মোজাম্মেল বাবুর সঞ্চালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন নিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান নির্বাহী ও বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক (বার্তা) শাইখ সিরাজ, এসএ টিভির প্রধান নির্বাহী সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী, দেশ টিভির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান, এশিয়ান টিভির চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ, এফটিপিওর সদস্য সচিব গাজী রাকায়েত, ডিরেক্টর্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক, বিজ্ঞাপন নির্মাতা ও অভিনেতা আফজাল হোসেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: