ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মোঃ মামুন রশীদ

প্রত্যাশার পেস আক্রমণে ইনজুরির ছোবল

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৩০ নভেম্বর ২০১৬

প্রত্যাশার পেস আক্রমণে ইনজুরির ছোবল

সর্বশেষ সিরিজে সফরকারী ইংল্যান্ডকে স্পিন আক্রমণে বিপর্যস্ত করেছে বাংলাদেশ দল। তবে ঘরের মাটিতে ধীরগতির স্পিনবান্ধব উইকেট ছিল বলেই সেটা আরও ভালভাবে সম্ভব হয়েছে। তবে আসন্ন নিউজিল্যান্ড সফরে তেমনটা আর ঘটবে না। সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী উইকেটে খেলতে হবে স্বাগতিক কিউইদের বিরুদ্ধে। মূলত কিউই পরিবেশ ও উইকেট পরিস্থিতি সবসময়ই পেসারদের পক্ষে। তাই সেখানে বাংলাদেশ দলকেও প্রস্তুত হতে হবে পেস আক্রমণ সংসংবদ্ধ করেই। সেদিক থেকে এবার চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল টি-২০) আশার আলো জাগিয়েছে। ধীরগতির উইকেটেও পেসাররা ঝড় তুলেছেন এবং উইকেট শিকার করেছেন অনেকগুলো। এমনকি শীর্ষ উইকেটশিকারির তালিকার সেরা পাঁচে আছেন বাংলাদেশের তিন পেসার শফিউল ইসলাম, মোহাম্মদ শহীদ ও তাসকিন আহমেদ। তবে বাংলাদেশ দলের পেসারদের সবচেয়ে বড় শত্রুটাই হচ্ছে ইনজুরি। এবারও সেই ধাক্কা লাগল অস্ট্রেলিয়ায় কন্ডিশনিং ক্যাম্পে যাওয়ার মাত্র ১২ দিন আগে শহীদের ইনজুরিতে। যদিও জাতীয় দলের নির্বাচকরা দাবি করছেন শহীদের উপযুক্ত অনেকগুলো বিকল্প হাতে আছে তাদের। কিন্তু ফর্মের তুঙ্গে থাকা শহীদের অভাবটা পূরণীয় নয় সেটাও মানছেন তারা। অন্যতম পেসস্তম্ভ হয়ে ওঠা বাঁ-হাতি কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান যদিও পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় দারুণ অগ্রগতি দেখিয়ে দ্রুতই ফিরে আসছেন। কিন্তু সিরিজের শুরুতেই তাঁর খেলা নিয়ে আছে সংশয়। কিউই সিরিজে ফিরছেন তিনি নিশ্চিত, তবে সেটা শুরুতেই সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে আছে সন্দেহ। এছাড়া তরুণ উদীয়মান এবাদত হোসেনও ইনজুরির কারণে বিপিএল খেলতে পারেননি। এখনও আন্তর্জাতিক অভিষেক না হওয়া এ পেসারকে কিউই ভূমিতে শুরুতেই খেলানো নিয়েও আছে যথেষ্ট শঙ্কা। ওয়ানডে ও টি-২০ সিরিজে খেলার জন্য যথেষ্ট ফিট মাশরাফি বিন মর্তুজা, শফিউল, তাসকিন আহমেদরা থাকলেও দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে আবারও সেই পুরনো পেস সঙ্কট! বরাবরই এমন ইনজুরির ধাক্কায় পেসার সঙ্কটে পড়েছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজে পেসারদের নিয়ে সমস্যা ছিল। রুবেল হোসেন ইনজুরিতে, নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা তাসকিন আহমেদের পূর্ণ ছন্দ নিয়ে সন্দেহ, মুস্তাফিজ ইনজুরিতে, শৃঙ্খলাহীনতা ও ফর্মহীনতার গ্যাঁড়াকলে আল আমিন হোসেন উপেক্ষিত। সবমিলিয়ে নতুন পেসার হিসেবে দলে নেয়া হয় কামরুল ইসলাম রাব্বিকে। তিনি টেস্ট সিরিজে আহামরি কিছুই করতে পারেননি। এছাড়া পাইপলাইনে থাকা শুভাশিষ রায় এখন পর্যন্ত খেলার অপেক্ষায়। এ দুই নবাগত পেসার চলতি বিপিএলে তেমন কিছুই করতে পারেননি। তাই তাদের নিয়ে আসন্ন নিউজিল্যান্ড সিরিজে তেমন বড় কোন আশার আলো দেখার উপায় নেই। তবে রুবেল ইনজুরি কাটিয়ে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ফিরলেও যে ছন্দহীনতায় ছিলেন সেটা কাটিয়ে উঠেছেন এবার বিপিএলের মাঝ সময় থেকে। সেটাই এখন আশার কথা। নিউজিল্যান্ড সফরের প্রাথমিক দলের ২২ জনের স্কোয়াডে না থাকলেও স্ট্যান্ডবাই ছিলেন তিনি। শহীদের হঠাৎ ইনজুরি এবার হয়ত ফিরিয়ে আনতে পারে তাকে। এবার বিপিএলে ৯ ম্যাচে ৮ উইকেট শিকার করেছেন রুবেল। প্রথমদিকে কয়েকটি ম্যাচে তেমন সুবিধা করতে না পারলেও তিনি পরের দিকে জ্বলে উঠে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে আল আমিন বিপিএলেও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। স্ট্যান্ডবাই হিসেবে থাকা নবাগত রাব্বিও তাই শহীদের বিকল্প হিসেবে থাকছেন। শহীদের ইনজুরি এ্যান্টেরিয়র ক্রুশিয়েট লিগামেন্ট (এসিএল)। তিনি বিপিএলে ম্যাচ চলার সময় ফিল্ডিং করতে গিয়ে পায়ে আঘাত পান। এরপর এমআরআই স্ক্যানে জানা যায় হাঁটুর মাংসপেশি সম্প্রসারিত হয়েছে শহীদের। বিসিবির চিকিৎসক ডাঃ দেবাশিষ চৌধুরী জানিয়েছেন দুই সপ্তাহ পুরোপুরি বিশ্রামে থাকতে হবে শহীদকে। এরপর পুনর্বাসন প্রক্রিয়া অন্তত ৪ সপ্তাহ। বিসিবিও জানিয়েছে শহীদকে ছাড়াই আগামী ৯/১০ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ায় কন্ডিশনিং ক্যাম্পে যাবে দল। এর অর্থ অবশ্যই বিকল্প কাউকে দলে নিতে হবে বিসিবির। এ বিষয়ে নির্বাচক হাবিবুল বাশার বলেন, ‘অনেকের নামই আছে। যেমন রাব্বি আছে, আল আমিন আছে, রুবেল আছে। সবাই কিন্তু ভাল বোলিং করছেন। একটা ভাল বিষয় যে আমাদের হাতে বিকল্প আছে অনেক। যাকেই বেছে নেই ভাল করবে।’ তবে অস্ট্রেলিয়ায় কন্ডিশনিং ক্যাম্পের জন্য যাওয়ার মাত্র ১২ দিন আগে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা শহীদের ইনজুরিটা বড় একটা আফসোস বাংলাদেশের জন্য। এ বিষয়ে হাবিবুল বলেন, ‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক শহীদের জন্য। আমারও খুব খারাপ লাগছে। খুব ভাল বোলিং করছিল, ফর্মে ছিল সে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে ইনজুরির কারণে খেলতে পারেনি। ওর পরিবর্তে আমরা কাকে নেব তা এখনও ঠিক করিনি। বিপিএল শেষ করার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারব আমরা কাকে বেছে নেব।’ নিউজিল্যান্ড সফরে নিশ্চিতভাবেই কার্যকরী বোলার হয়ে উঠতেন শহীদ। কারণ তিনি চলতি বিপিএলে এখন পর্যন্ত ৮ ম্যাচে ১৫ উইকেট শিকার করেছেন ১২.৪৬ গড়ে। ইনজুরিতে পড়ার দিন পর্যন্ত তিনিই ছিলেন চলমান বিপিএলের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলার। শহীদ নিউজিল্যান্ড যেতে না পারলেও দলে থাকা বাকি পেসারদের মধ্যে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন শফিউল ও তাসকিন। ধীরগতির উইকেটে স্পিনাররা দারুণ বোলিং করে ব্যাটসম্যানদের বেশ সংগ্রামের মধ্যে ফেলেছেন। তবে ক্রমেই জেগে উঠেছেন পেসাররা। আফগানিস্তানের অফস্পিনার মোহাম্মদ নবি ১৬ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে বোলিং গড়ে (১২.৩১) এগিয়ে থেকে। ৯ ম্যাচেই তার সমান ১৬ উইকেট শিকার করেছেন শফিউল ১৩.৮১ গড়ে। এমন উইকেটেও জাতীয় দলের পেসারদের এভাবে স্পিনারদের সঙ্গে সমানতালে লড়াই বেশ আশা জাগাচ্ছে। নিউজিল্যান্ড সফরে পেসবান্ধব উইকেটে তাই বোলিং নিয়ে শঙ্কার তেমন কিছু থাকছে না। কিন্তু ইনজুরি থেকে ফেরা মুস্তাফিজ ও এবাদত পরিপূর্ণ ফিট হয়ে কবে নাগাদ প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন সেটা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ বোলিং শুরু করলেও ছোট রানআপে ৪-৫ ওভার করে এখনও বোলিং করছেন কাঁধে অস্ত্রোপচার করানো মুস্তাফিজ। পূর্ণ উদ্যমে ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাকে ফেরানো হবে কিনা এবং ফিরলেও তিনি পুরনো রূপে বোলিং করতে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। ২৬ ডিসেম্বর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি দিয়ে নিউজিল্যান্ড সফর শুরু হবে বাংলাদেশের। সিরিজে আছে আরও তিন টি-২০ ও দুই টেস্ট। আর এবাদত এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেননি। এবার বিপিএলেও খেলতে পারেননি ইনজুরির কারণে। তাই কিছুটা ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। তবে তরুণ পেসার তাসকিন দারুণভাবে ফিরে এসেছেন বিপিএল দিয়ে। বোলিং ত্রুটি কাটিয়ে আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজে পারফর্মেন্সের উত্থান-পতন থাকলেও তিনি মেলে ধরেছেন নিজেকে বেশ ভালভাবেই। ৭ ম্যাচে ১৫.৬১ গড়ে ১৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি এখন পর্যন্ত। আছেন চলতি বিপিএলে সর্বাধিক উইকেটশিকারির তালিকায় ৫ নম্বরে। সার্বিকভাবে তাই জাতীয় দলের বোলারদের নৈপুণ্যে সন্তুষ্ট হাবিবুল। তিনি বলেন, ‘সবাই ভাল করছে। মনোযোগ দিচ্ছি নতুন খেলোয়াড় কেউ ভাল করে কিনা সেদিকে।’ নিউজিল্যান্ড সফরে মাশরাফি, তাসকিন, শফিউল এই তিন পেসারকে বেশ ভালভাবেই পাচ্ছে বাংলাদেশ দল। এছাড়াও শেষ পর্যন্ত দলে রুবেল অন্তর্ভুক্ত হলে শক্তিমত্তায় কোন অভাব থাকছে না। মুস্তাফিজ-এবাদত তো আছেনই।
×