ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্বরূপে ফিরলেন মুমিনুল...

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২৯ অক্টোবর ২০১৬

স্বরূপে ফিরলেন মুমিনুল...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছেন ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে। ২৬ ওয়ানডে খেললেও মূলত তাকে বলা হয় টেস্ট স্পেশালিস্ট। কারণ, দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে দুর্দান্ত সব ইনিংস উপহার দিয়েছেন মুমিনুল হক সৌরভ। ২৫ বছর বয়সী এ ক্রিকেটারকে তাই দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে থাকতে হয়েছে। কারণ টানা সাড়ে ১৪ মাস টেস্ট খেলেনি বাংলাদেশ দল। টেস্ট দলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই একাদশের অন্যতম নামটা মুমিনুলের। চট্টগ্রামে সফররত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম টেস্টে মুমিনুলও দলের মতোই ওই দীর্ঘ সাড়ে ১৪ মাস পর ব্যাট হাতে নেমেছিলেন। তবে অর্ধশতক হাঁকানোর দারুণ এক রেকর্ড যার সেই মুমিনুল লম্বা বিরতির পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে ধাতস্থ হতে পারেননি। চট্টগ্রাম টেস্টে করতে পেরেছেন ০ ও ২৭। তবে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার শুরু হওয়া সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে আবার অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৬৬ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন। টানা চারটি টেস্টের পর আবার অর্ধশতাধিক রানের কোন ইনিংস খেলতে পারলেন তিনি। এই ইনিংসের সুবাদে অষ্টম বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ১৫০০ রানের মাইলফলক পেরিয়েছেন মুমিনুল। তবে এক্ষেত্রে তিনিই দেশের দ্রুততম। বহুল প্রচলিত একটি কথাÑ ‘সাইজ ডাজ নট ম্যাটার’। সেই কথাটার যেন স্বার্থক প্রমাণ মুমিনুল। ২০১৪-১৫ মৌসুমে তিনি টানা ১১ টেস্টে অর্ধশতক হাঁকিয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বাধিক রানের মালিক শচীন টেন্ডুলকরকে ছাড়িয়ে যান। পরের টেস্ট ছিল ভারতের বিরুদ্ধে, সুযোগ ছিল টানা ১২ টেস্টে অর্ধশতাধিক রানের ইনিংস খেলে দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্সের গড়া বিশ্বরেকর্ডের সমকক্ষ হওয়ার। কিন্তু প্রথম ইনিংসে ৩০ রানে ফিরে যাওয়া মুমিনুল বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত ম্যাচটির দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতেই নামতে পারেননি। মোক্ষম সেই সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার পর জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দুটি এবং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চলমান সিরিজের প্রথম ম্যাচে অর্ধশতক হাঁকাতে পারেননি ব্যাটিং গড়ে ৫০ এর ওপরে রান করা মুমিনুল। অথচ ক্যারিয়ার শুরুর পর থেকেই দুর্ধর্ষ প্রকৃতির কিছু স্ট্রোকসমৃদ্ধ ইনিংস খেলে নাম কামিয়েছিলেন বাংলাদেশের ‘লিটল মাস্টার’ হিসেবে। টানা ১১ টেস্টে অর্ধশতাধিক রানের অন্তত একটি করে ইনিংস খেলেছেন তিনি। ছাড়িয়ে যান লিটল মাস্টার শচীন ও জন এডরিচের টানা ১০ টেস্টে অর্ধশতাধিক ইনিংস খেলার রেকর্ডকে। আর ছুঁয়ে ফেলেন স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস, গৌতম গাম্ভীর ও বীরেন্দর শেবাগকে। ১২ টেস্টে অর্ধশতক হাঁকানো ভিলিয়ার্সকে ছোঁয়া হয়নি গত বছর ভারতের বিরুদ্ধে ফতুল্লা টেস্ট বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ায়। পরের তিন টেস্টে তিনি করেছেন ৬, ৪০, ০ ও ২৭। টেস্ট ক্রিকেটেই যার পরিচিতি সেই মুমিনুল দীর্ঘ সময় পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার অস্বস্তিতেই যেন বিড়ম্বনায় পড়ে গিয়েছিলেন। আর চট্টগ্রাম টেস্টে ছিল ব্যাটসম্যানদের জন্য দুঃসহ কাজ ভাল ইনিংস খেলা। শূন্য রানে প্রথম ইনিংসে ফিরে গেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে বেশ আস্থার সঙ্গে খেলতে খেলতেই সাজঘরে ফেরেন ২৭ রানে। তবে দেশের ‘লিটল মাস্টারের’ ওপর আস্থাটা ছিলই। সেই আস্থার প্রমাণ দিলেন দ্বিতীয় টেস্টের প্রথমদিনে। ওপেনার ইমরুল দলীয় ১ রানেই সাজঘরে ফেরার পর তামিম ইকবালের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ১৭০ রানের জুটি গড়লেন যা এই উইকেট জুটিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সেরা নৈপুণ্য। ক্যারিয়ারের দশম ফিফটি হাঁকিয়ে তামিম বিদায় নেয়ার কিছু পরেই ফিরে যান মুমিনুল। ততোক্ষণে তিনি করেছিলেন ১১১ বলে ১০ চারে ৬৬ রান। ক্যারিয়ারের ১৯তম টেস্টের ৩৩ ইনিংস শেষে তার রান ৫৩.৪১ গড়ে ১৫৪৯! বাংলাদেশের পক্ষে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৫০০ রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি, দেশের পক্ষে দ্রুততম। তামিম ইকবাল (৩৩০৯), হাবিবুল বাশার (৩০২৬), সাকিব আল হাসান (২৮৮৮), মুশফিকুর রহীম (২৭৪১), মোহাম্মদ আশরাফুল (২৭৩৭), জাভেদ ওমর (১৭২০) ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (১৫৭৪) টেস্টে ১৫০০ রানের বেশি করেছেন বাংলাদেশের হয়ে।
×